logo ০৫ মে ২০২৫
মামলা নিষ্পত্তিতে অবহেলা, ম্যাজিস্ট্রেটদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
০৯ জুন, ২০১৫ ১৯:৪৭:৩৮
image

ঢাকা: সারাদেশে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির আওতায় দাযেরকৃত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পাশাপাশি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি না করায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।


সারাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ৩১ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা আয়োজিত বিভাগীয় কমিশনার সমন্বয় সভা হয়। ঐ সভায় এসব বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা।


তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিরণীতে বলা হয়েছে, কোন কোন জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির আওতায় ২০১০, ২০১১, ২০১২ এবং ২০১৩ সালে দায়েরকৃত মামলা অনিষ্পত্তিকৃত অবস্থায় রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগও রয়েছে।


সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় দীর্ঘদিন পূর্বে দায়েরকৃত ও অনিষ্পন্ন মামলাগুলো দ্রুত আইনানুগভাবে নিষ্পত্তির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে অবহেলাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


দেশজুড়ে অপরাধ বাড়ছে:


দেশজুড়ে ফৌজদারী অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে খুন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ডাকাতি ও নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ রয়েছে। অপরাধ বাড়ার প্রবণতায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিভাগীয় কমিশনাররা।


তারা বলেছেন, সারা দেশে যে হারে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা রয়েছে। এজন্য সকল জেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও টাস্কফোর্সের অভিযান বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন তারা।


আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।


এ ছাড়া সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধে গঠিত জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন কমিটিগুলোকে সক্রিয় রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সন্ত্রাস ও নাশকতা রোধে গঠিত কোর কমিটির সভা করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও দেয়া হয়।


মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি  মাসের রাজশাহী বিভাগে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ১৯৫টি, মার্চ মাসে বেড়ে দাড়িয়েছে ২৬৬টি এবং মার্চ মাসে অপরাধ বেড়েছে ২৭০টি।


২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ঢাকা বিভাগে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ৪৯৪টি, মার্চ মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০৬টি এবং মার্চ মাসে অপরাধ বেড়েছে ৬৫৫টি।


২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের চট্টগ্রাম বিভাগে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ৩৯৬টি, মার্চ মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৮টি এবং মার্চ মাসে অপরাধ বেড়েছে ৪৭৫টি।


২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের খুলনা বিভাগে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ২০৪টি, মার্চ মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৫টি এবং মার্চ মাসে অপরাধ বেড়েছে ২৯২টি।


এছাড়া ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বরিশাল বিভাগে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ১৫৮টি, মার্চ মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৫টি এবং মার্চ মাসে অপরাধ বেড়েছে ১৪৮টি।


২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি  মাসের সিলেট বিভাগে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ৯৭টি, মার্চ মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৬টি এবং মার্চ মাসে অপরাধ বেড়েছে ১০৫টি।


২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের রংপুর বিভাগে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ২১৪টি, মার্চ মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৯টি এবং মার্চ মাসে অপরাধ বেড়েছে ২৬০টি এবং সকল মেট্রোপলিটন এলাকায় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের  অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ২৯৪টি, মার্চ মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩১টি এবং মার্চ মাসে অপরাধ বেড়েছে ৩১৫টি। এসব অপরাধ গুলো হচ্ছে, খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি/ দস্যুতা, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু নির্যাতন। সে হিসেবে তিন মাসে মোট অপরাধের সংখ্যা ছিল সাত হাজার ৮০টি।


সভায় বিভাগীয় কমিশনাররা বলেছেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় অব্যাহত রয়েছে। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদেরকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।


অপরাধ আগের তুলনায় বাড়ছে স্বীকার করে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান বলেন, ‘আমরা অপরাধ প্রতিরোধে সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে গতকাল রবিবার মন্ত্রণালয়ে বিভাগীয় সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’


এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সারা দেশের অপরাধসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত বৈঠক করি। এ  বৈঠকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অপরাধ বাড়ার ঘটনায় শঙ্কার কোনো কারণ নেই। সব কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। অপরাধের যে সংখ্যাটি বেড়েছে তা উদ্বেগজনক নয়।’


(ঢাকাটাইমস/৯জুন/এইচআর/এমএম)