logo ২৫ এপ্রিল ২০২৫
নতুন চাপ, চিন্তায় খালেদা
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
১৩ জুন, ২০১৫ ১৪:০৬:১৮
image

ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলন মাঠে মারা যাওয়ার পর ভালো নেই বিএনপি।


তিন মাসের টানা আন্দোলনে ব্যর্থতার পর তিন সিটি নির্বাচনে সরকারের কৌশলের কাছে পরাস্থ হওয়ার পরবর্তীতে মোদির সফর নিয়ে কিছুটা চাঙ্গা হলেও শেষতক নতুন যন্ত্রণার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।


বিশেষ করে খালেদার সঙ্গে মোদির একান্তে ১৫মিনিট আলোচনার বিষয়বস্তু ভারতীয় পত্রিকায় ফাঁস হওয়ার পর খালেদার ওপর চাপ যেন আরো বেড়েছে।


দীর্ঘ দিন ধরে দলীয় ফোরামে কোনো বৈঠক না হওয়ায় সকল চাপই যেন গিয়ে পড়েছে খালেদার ওপর।এদিকে দলের নীতি নীর্ধারকদের কাছ থেকে দিনের পর দিন বিরুপ মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে।


দল পুনর্গঠন, ২০ দলীয় জোটের ঐক্য ধরে রাখা, জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারে নতুন করে দেশি-বিদেশি চাপ, দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি আস্থা রাখতে না পারা, সরকারবিরোধী আন্দোলনের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণ, মামলার বিশাল জাল থেকে নেতাদের মুক্ত করাসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই ভালো নেই তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।


মোদির সঙ্গে খালেদার জিয়ার বৈঠককে বিএনপির জন্য প্রথম দিকে একটি প্লাস পয়েন্ট হিসাবে ভাবা হলেও বৈঠকের পর খালেদা জিয়ার নীরবতা এবং দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার রিপোর্ট বিএনপি চেয়ারপারসনকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।


পরিস্থিতি এমন দাঁড়য়েছে যে দিন যত যাচ্ছে, খালেদা জিয়ার ওপরও চাপ তত বাড়ছে। লাগাতার হরতাল-অবরোধের বিরতির তিন মাস অতিবাহিত হলেও বিএনপির স্বাভাবিক রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিই ঠিকমতো এগোচ্ছে না।


আন্দোলনের পর তিন মাস পার হলেও দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির আজ পর্যন্ত কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।


সহসা বৈঠক হবে কিনা সেব্যাপারে রীতিমতো অন্ধকারে শীর্ষ নেতারা। তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের নেতাদের কোনো যোগাযোগ নেই।পাচ্ছে না কোনো দিকনির্দেশনাও। আন্দোলন পরবর্তী সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও কোনো আলোচনা হয়নি।


জেলে আটক ও আত্মগোপনে থাকা নেতারা আদালতের মাধ্যমে আশানুরূপ জামিন পাচ্ছেন না। নানা শঙ্কার পাশাপাশি ইতিবাচক কোনো কিছুর দেখা নো মেলায় দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা একরকম প্রবাস জীবনকেই বেছে নিয়েছেন। অন্তত ডজনখানেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাসে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।


এসবের পাশাপাশি সম্প্রতি দলের বেশ কয়েকজন নেতার সমালোচনামূলক বক্তব্য নিয়ে বেশ বিব্রত অবস্থায় আছেন খালেদা জিয়া।


এছাড়া নানা ঘটনাপ্রবাহের পর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের পর


অনেকটা ‘নরম’ বনে যায় বিএনপি ও দলের প্রধান। দৃশ্যত আগের মতো আক্রমনাত্মক বক্তব্য বা বিবৃতি থেকে অনেকটা সরে এসেছে দলটি।


কেন এই পরিবর্তন? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে খোদ বিএনপি শিবিরেই। তবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি প্রধান নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছে।দল ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।


বিশেষ করে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমালোচনামূলক বক্তব্য খালেদা জিয়ার দুশ্চিন্তায় দৃশত ঘি ঢেলে দেয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালেদা জিয়ার সাক্ষাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি দলের প্রধানকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। এসব বিষয়গুলো নিয়েই বেশি চিন্তায় আছেন খালেদা জিয়া।


ভারতের একটি প্রভাবশালী দৈনিকে এই বৈঠক সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- মোদি তিনটি ইস্যুতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন।


এর মধ্যে রয়েছে-দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দুই মন্ত্রীর ফেঁসে যাওয়া, প্রনব মুখার্জীর সফরে হরতাল দেয়া, কলকাতার বর্ধমান কাণ্ড। এসব বিষয়ে খালেদা জিয়া মোদির প্রশ্নের নাকি জবাবও দিতে পারেননি। এসব কিছু খালেদা জিয়াকে বিব্রত করেছে।


অন্যদিকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমালোচনামূলক বক্তব্য খালেদা জিয়াকে আরও বেশি বিব্রত করেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রকাশ্যে দলের কঠোর সমালোচনা করেছেন। দলকে দুর্নীতিগ্রস্ত, রুগ্ন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এছাড়া টেলিফোন সংলাপে তিনি বলেছেন- খালেদা জিয়াকে দিয়ে দল চলবে না। এসব কিছু নিয়ে নতুন করে ভাবনায় পড়েছেন খালেদা জিয়া।


এছাড়া দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের বক্তব্যও বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি জিয়ার আদর্শ নিয়ে দলকে পুনর্গঠনের কথা বলেছেন।


শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপি এখন ‘জামায়াতনির্ভর’ দল হয়ে উঠেছে, আর এ কারণে ‘চারদিক থেকে’ চাপে রয়েছেন খালেদা জিয়া।


বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বকে ‘বাঁচতে’ হলে আবার ‘জিয়ার রাজনীতিতে’ ফিরতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।


এসব কিছু নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।


বিএনপির এক শীর্ষ নেতা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দুর্বলতার কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি একটি একতরফা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করেও ক্ষমতায় টিকে আছে। বিএনপি শুরু থেকে পশ্চিমানির্ভর কূটনীতির ওপর ভরসা করেছে। যাতে বিশেষ কোনো কাজে আসেনি। প্রতিবেশী ভারতকে আস্থায় নিতে পারেনি। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত বন্ধু নির্বাচন, কৌশল নির্ধারণসহ পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়েও নতুন করে ভাবা।


জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও সেই তাগিদ থেকেই কূটনৈতিক তোড়জোর চালিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।


সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। তাই অনেক বিষয় নিয়েই দলীয় চেয়ারপারসনকে ভাবতে হয়, সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এটাকে চাপ বলা যায় না। এটা রুটিন কাজ।


অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়া্ একান্ত বৈঠক সম্পর্কে আমরা কেউ জানি না। এটা তারা দুজনই জানেন। এ সম্পর্কে যদি কেউ প্রতিবেদন করে থাকে সেটা তারাই বলতে পারবেন।


আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের যারা সমালোচনা করেন তাদেরকে দল ছেড়ে সমালোচনা করা উচিত। কারণ দলীয় সমালোচনা হবে দলীয় ফোরামে। কিন্তু বাইরে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা ঠিক না বলে আমি মনে করি।


(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/এমএম/এআর/ ঘ.)