logo ২৫ এপ্রিল ২০২৫
অসন্তোষ: টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেয়ার সিদ্ধান্ত
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
১০ জুন, ২০১৫ ০০:০৭:৩৭
image

ঢাকা: প্রশাসনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ ঠেকাতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে এ সুবিধা পাচ্ছেন ২৩০ কর্মকর্তা।


মঙ্গলবার সচিবালয়ে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিষয়ে পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এতে সভাপতিত্ব করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বিষয়টি ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন।


জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের উপসচিব পর্যায়ের ৫০ থেকে ৬০ জন কর্মকর্তাকে টাইম স্কেল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এসব কর্মকর্তার বিষয়ে আারো যাচাই বাছাই করে করা হবে। এছাড়া প্রশাসনের ২৮তম ব্যাচের ১৭৯ জন কর্মকর্তকে সিলেকশন গ্রেড দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।


প্রস্তাবিত জাতীয় বেতন কাঠামো থেকে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়ায় সচিবালয়সহ সারা দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠনগুলোর (নন-ক্যাডার) পক্ষ থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে বেশ কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ও বেতন পর্যালোচনা কমিটির সভাপতির সঙ্গে দেখা করে তারা তাদের ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এই টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রত্যাহার করা হলে সরকারি কর্মচারী অঙ্গনে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টিসহ যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। এরই জেরে পর্যায়ক্রমে টাইমস স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।


প্রসঙ্গত, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়েই সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করে বেতন কমিশন পর্যালোচনা কমিটি।সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।

সরকারি বিধিমালায় টাইম স্কেলের ব্যাপারে বলা হয়েছে, কোনো চাকরিজীবী ১৫ বছরেও কোনো কারণে পদোন্নতি না পেলে সেক্ষেত্রে আট বছর পর একটি, ১২ বছর পর একটি এবং ১৫ বছর পর আরও একটি করে মোট তিনটি টাইম স্কেল পাবেন। প্রতিটি টাইম স্কেল পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর বেতন স্কেল এক ধাপ ওপরে উন্নীত হয়। এতে করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতি না পেলেও আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে সরকারি চাকরির ৬৫ শতাংশই ব্লকপোস্ট রয়েছে। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ নেই। তারাই মূলত এর সুবিধাভোগী। ১৯৮১ সালে ক্যাডার সার্ভিসে টাইম স্কেল চালু হলেও ১৯৮৩ সালে তা নন-ক্যাডার পদেও চালু হয়।


সিলেকশন গ্রেডের ব্যাপারে বিধিমালায় বলা হয়েছে, পদ না থাকা বা ভিন্ন কোনো কারণে একই স্কেলে সন্তোষজনকভাবে দীর্ঘদিন চাকরির পর অনেকে পদোন্নতি পান না। এ ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নির্বাচিত কিছু ব্যক্তিকে কিছু শর্তসাপেক্ষে উচ্চতর স্কেল প্রদান করা হয়। এ পদ্ধতিকে সিলেকশন গ্রেড বলা হয়। সত্তর দশকে এ পদ্ধতি চালু হয়।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মো. রুহুল আমীন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আজকের সিদ্ধান্ত নেয়া ভালো হযেছে। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিলে সচিবালয়সহ সারা দেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হবে। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।


এদিকে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভুইঞা মিলন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন কর্মচারীদের বাদ দিয়ে কর্মকর্তাদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দিলে তা সরকারে জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। এ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে। যেকোনো সময় সরকারের বিপক্ষে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।


(ঢাকাটামস/৯জুন/এইচআর/জেবি)