logo ২৫ এপ্রিল ২০২৫
কার দিকে আঙ্গুল তুলছেন তারা?
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
০৭ জুন, ২০১৫ ০০:০৬:৩০
image

ঢাকা: বিএনপিতে গৃহদাহ শুরু হয়ে গেছে। আত্মসমালোচনা নামে দলের সমালোচনার মুখর হয়েছেন বেশ কিছু শীর্ষ নেতা।তিন তিন বার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই দলটিকে পরিচ্ছন্ন ও শুদ্ধ করার কথা জোরেসোরে উচ্চারিত হওয়ায় নতুন করে শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।


প্রকাশ্যেই এখন বলা হচ্ছে-জিয়ার বিএনপি দুর্নীতিপরায়ন হয়ে গেছে এবং একে লাইনে তুলতে হবে। তবে লাইনে তুলতে হলে কী করতে হবে সে কথা পরিষ্কার করা হচ্ছে না।


টানা তিন মাসের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর পরই এসব কথা আড়ালে আবডালে শোনা গেলেও বেশ কিছু দিন ধরে তা প্রকাশ্যেই বলাবলি হচ্ছে।


আর কথাগুলো আসছে দলের একাধিক নীতি নির্ধারকের মুখ থেকেই। ফলে এ নিয়ে বিএনপির ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। চলছে নানা কানাঘুষাও। অনেকে বলেছেন, এসব আসলে দল ভাঙ্গার ইঙ্গিত ছাড়া আর কিছুই না।বেশ কিছু ‍দিন ধরেই বিএনপির একজন শীর্ষ নেতাকে ঘিরে দলে ভাঙ্গণের কথা কথা শোনা যাচ্ছিল।


এছাড়া সরকারের ইন্দনে বিএনপি ভাঙ্গার তৎপরতার কথা বেশ কিছু দিন আগে শোনা গেলেও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে এসব তীর্যক সমালোচনা আসার পর নতুন করে বিষয়টি আলোচনায় জায়গা দখল করেছে।বলা হচ্ছে-তাহলে কী বিএনপি সেই নেতার হাত ধরে আসলেই ভাঙ্গনের দিকে এগুচ্ছে?


গত ৪ মার্চের এক ফোনালাপে মওদুদ আহমদকে বলতে শোনা গেছে, “শোনো এই বিএনপি দিয়ে হবে না, এটুকু শোনে রাখো। পারলে জিয়ার বিএনপি করো।”


এছাড়া ৩০মে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বলেন, জিয়ার দর্শনের ভিত্তিতে বিএনপিকে পুনর্গঠিত করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা দলের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ।


জিয়াউর রহমান উদার রাজনীতি করতে চেয়েছেন এমনটা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “জিয়া বলেছেন বিএনপি চরম ডানপন্থি দল হবে না, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।”


বিএনপি নেতাদের কারো কারো দাবি, জামায়াত ও হেফাজতসহ সংশ্লিষ্ট কিছু দলের সঙ্গে জোট করা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে নীরবতা পালন করায় এ দলটি চরম ডানপন্থী হয়ে যাচ্ছে।


মওদুদ আহমদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কথা বলেছেন  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে: জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানও। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি নিজ দলের সমালোচনা করে বলেন, “বিএনপি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কুলষিত ও সব দিক দিয়ে রুগ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু এই দলের স্থপতি জিয়াউর রহমানের কাছে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দুর্বৃত্তায়নের জায়গা ছিল না।”


তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এসব এড়িয়ে চললে নানা চাপে থাকা বিএনপি একদিন ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে।”


বলাবলি হচ্ছে-বিএনপি এই দুই নীতি নির্ধারক আসলে কার দিকে আঙ্গল তুলেছেন?


একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, বিষয়টি একটু বিশ্লেষণ করলে সহজেই বুঝা যায় যে তারা আসলে দলের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকেই আঙ্গুল তুলেছেন।সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় এই দুই সিনিয়র নেতাসহ বিএনপি সিনিয়র নেতারা এক রকম অন্ধকারে ছিলেন।


বাজারে একটা কথা চালু ছিল যে লন্ডন থেকেই আন্দোলনের দিকনির্দেশনা আসছে এবং সেভাবেই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে।


আর এ কারনে আন্দোলন চলাকালে বিএনপির কোনো পর্যায়েই  কোনো ধরণের বৈঠক হয়নি।এমন কি আন্দোলন থামার পর অনেক দিন পার হলেও আজ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি দলে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে।


বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এমন মন্তব্যকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুল আমিন ব্যাপারী।


ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, “বিএনপির বিরুদ্ধে অনেক দিন থেকে দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে।খালেদা জিয়া হয়তো তা উপলব্ধি করতে পারেননি। এমনকি তারেক রহমান সাংগঠনিকভাবে যোগ্য হলেও এই বিষয়গুলো হয়তো ভাবেননি। এই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।যারা এখন দুর্নীতির কথা বলছেন তারা এতোদিন কোথায় ছিলেন।” খালেদা জিয়াকে সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ দিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ব্যর্থ এমন দাবি করে তিনি বলেন, “দলীয় ফোরামের বাইরে এই ধরণের কথা বলা শৃঙ্খলা বিরোধী। এটা বিএনপি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হতে পারে। তবে এভাবে করে কেউ সফল হতে পারেনি।”


নিজের বক্তব্যের বিষয়ে কথা বলতে মওদুদ আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি টেলিফোনে কোনো কথা বলতে রাজি নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন।


এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, “রাজনৈতিক দলের ভুলত্রুটি সংশোধনে সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন আনতে হয়। আর কোন দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচনা হতেই পারে। দলের সিনিয়র নেতারা যদি ভুল শোধরানোর উদ্দেশ্যে কোন কিছু বলে থাকেন, তা দোষের কিছু নয়। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এটাই স্বাভাবিক ।” সবকিছু বিবেচনা করে ভবিষ্যতে দলের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করারও পরামর্শ দেন সাবেক এই সেনা প্রধান।


(ঢাকাটাইমস/৭ জুন/বিইউ/এআর/ ঘ.)