ঢাকা: চলতি বছরেই ভারতের সঙ্গে নৌ যোগাযোগের ছাড়পত্র দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উভয়পক্ষের মধ্যে ট্রানজিট ফি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ধারিত হলেই এ ছাড়পত্র দেয়া হবে।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানায়, আগামী দুমাসের মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি ট্রানজিট ফি সহ অন্যান্য বিষয় নির্ধারণ করবে। এগুলো নির্ধারিত হলেই ভারতের সঙ্গে সীমিত পরিসরে নৌ যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি ভারত প্রস্তাবনা অনুযায়ী পুরোপুরি নৌ-যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়, তাহলে আমাদের নদীপথগুলোতে বড় আকারের ড্রেজিং প্রয়োজন হবে।’
উল্লেখ্য, এপ্রিলে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুদেশের নৌ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকে প্রথমবারের মতো ট্রানজিট-ফি ও শুল্কায়ন নির্ধারন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতীয় পণ্য আনা নেয়ার সময় বাংলাদেশকে শুল্ক দিতে হবে। কিন্তু ভুটান এবং নেপালকে তাদের পণ্য আনা নেয়ার জন্য দুই দেশকেই অর্থাৎ বাংলাদেশ এবং ভারতকে শুল্ক দিতে হবে।’
বর্তমানে নদীপথ ব্যবহার বাবদ ভারত বাংলাদেশকে বছরে দশ কোটি টাকা দিচ্ছে। তবে নতুন করে শুল্কায়ন আরোপ করা হবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি অনুসারে।
মোদির ঢাকা সফরের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ট্রানজিট এবং বাণিজ্য চুক্তির প্রোটোকল অনুযায়ী একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) খসড়া তৈরি করা হচ্ছে।
এসওপি-তে ট্রানজিট রুট, ট্রানজিট ফি সহ অন্যান্য বিষয়গুলো বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।
যদিও ভারতের নৌ পথ ব্যবহার করে নেপাল এবং ভুটান থেকে পণ্য পরিবহনে দিল্লির সঙ্গে পৃথক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবে ঢাকা।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের ছয়টি করে বন্দর থাকবে। ওইসব বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজগুলো ভিড়বে এবং পণ্য বোঝাই ও খালাস করবে।
বাংলাদেশে ব্যবহৃত বন্দরগুলো হলো-মংলা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, পতেঙ্গা এবং আশুগঞ্জ। অপর দিকে ভারতে ব্যবহৃত বন্দরগুলো হলো কলকাতা, হলদিয়া, করিমগঞ্জ, পান্ডু, শিলাইদা এবং ফারাক্কা অথবা ব্যান্ডেল।
নৌ প্রোটোকল চুক্তি অনুযায়ী, কলকাতা-গৌহাটি অথবা পান্ডু, কলকাতা-করিমগঞ্জ এবং ফারাক্কা-কলকাতা রুট প্রস্তাবিত নৌ-ট্রানজিট।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ঝামেলামুক্তভাবে নৌ-যান চলাচলের জন্যে প্রায় ৫২ লাখ কিউবিক মিটার নৌপথ ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী একমাসের মধ্যে ড্রেজিং এবং নৌপথের মেরামত বাবদ কত অর্থ ব্যয় হবে এটি নির্ধারণ করা হবে। ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশকে পৃথকভাবে ড্রেজিং এবং নদীপথের মেরামত করতে হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ টেকনিক্যাল কমিটি এরইমধ্যে সমস্যা চিহ্নিতকরণে নৌপথ এবং করিডোর সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রাথমিক গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। ঢাকাকে বড় আকারের ড্রেজিং এবং এজন্যে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে হবে। ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশকে এই প্রকল্পের অর্থায়নের জন্যে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে যৌথ প্রস্তাবনা দাখিল করতে হবে।
ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধির বরাত দিয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, বিশ্বব্যাংক এই পুরো প্রকল্পের এক-তৃতীয়াংশ এবং দুই দেশ দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ সরবরাহ করবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকাকে ড্রেজিং খাতে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।’
গার্লফ অরিয়েন্ট সি ওয়েসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসকে মাহফুজ হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের নৌপথ বর্তমানে সীমিত আকারে ভারতীয় ট্রানজিট কার্গো পরিবহনে সক্ষম।’
পিআইডব্লিউটিটি মতে, বাংলাদেশের নৌযানগুলো ৫০ শতাংশ ভারতীয় পণ্য আনা-নেওয়া করবে। অপরদিকে অবশিষ্ট্য ৫০ শতাংশ ব্যবহার করবে ভারত।
মাহফুজ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোতে বর্তমানে তিন হাজার নৌযান চলাচল করছে। এছাড়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিশেষ ভাবে নৌ প্রোটোকল চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১০টি অতিরিক্ত নৌযান নির্মাণ করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/১১জুন/জেএস/ এআর/ ঘ.)