logo ২৫ এপ্রিল ২০২৫
আ.লীগ নেতাদের দুয়ারে বিএনপি-জামায়াত নেতারা!

ইব্রাহিম খলিল, ঢাকাটাইমস
১৪ জুন, ২০১৫ ১২:৪৯:১৮
image


চট্টগ্রাম: আন্দোলন করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি জামায়াতের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এক একজন নেতার বিরুদ্ধে মামলার পাহাড় জমে গেছে। কেন্দ্র থেকেও কোনো সহযোগিতা বা দিক নির্দেশনা পাচ্ছেন না, ঘুরে দাঁড়ানোর মতো নেই কোন কর্মসূচিও।

ওদিকে গ্রেপ্তারের ভয়ে প্রকাশ্যেও আসতে পারছে না জামায়াত-বিএনপি নেতারা। গত ৫ বছরে বিএনপি-জামায়াতের প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছে।

দীর্ঘ দিন ধরে এ অবস্থা চলার ফলে রীতিমতো হাঁপিয়ে ওঠেছে তারা। সর্বশেষ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  চট্টগ্রামে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে চট্টগ্রাম মহানগরে ১১৩টিসহ জেলায় ৩৪৬ মামলায় ১২ হাজার নেতাকর্মী আসামি রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী।

গ্রেপ্তার এড়াতে বাকি নেতাকর্মীরা এখন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। সুযোগ বুঝে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে বিএনপি-জামায়াত না করার শর্তে পুলিশের কাছে তাদের গ্রেপ্তার না করার জন্য সুপারিশও করছে আওয়ামী লীগ নেতারা।

চট্টগ্রাম মহানগর পাঁচলাইশ থানার এসআই মো. সেলিম এ প্রসঙ্গে বলেন, নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় ৭টি মামলায় তিন শতাধিক বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী আসামি রয়েছে। এরমধ্যে দুই শতাধিক নেতাকর্মী পলাতক রয়েছে। কিন্তু তাদের অনেককে না ধরার জন্য আওয়ামী লীগ নেতারাই সুপারিশ করছেন।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার এসআই বিকাশ জানান, নাশকতার অভিযোগে থানায় ১১টি মামলায় ৬ শতাধিক বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী আসামি রয়েছে। এদের বেশিরভাগই পলাতক। কিন্তু তাদের না ধরার জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা এখন চাপ দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সমীর বড়–য়া জানান, ২০১৩ থেকে এ পর্যন্ত নগরীতে নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১১৩টি মামলা হয়েছে। নগর বিএনপির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান ও শীর্ষ নেতাদের অনেকেসহ বিএনপি-জামায়াতের প্রায় ৫ হাজারেও বেশি নেতাকর্মী এসব মামলার আসামি। যাদের গ্রেপ্তার না করার জন্য নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার চাপ রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার একে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মহানগরসহ জেলার ১৬ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩৪৬টি মামলায় প্রায় ১২ হাজার আসামি রয়েছে। এরমধ্যে ৫ হাজার গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা পলাতক রয়েছে।   

জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র জানায়, বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলা ছাড়াও আরও প্রায় ৭ হাজার মামলায় ৪০ হাজারেরও বেশি আসামি রয়েছে। হরতাল-অবরোধে নাশকতার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা এসব মামলার আসামিরা বিএনপি-জামায়াতের সক্রিয় নেতাকর্মী। যারা গ্রেফতার আতংকে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, মামলার কারণে জেলার নেতাকর্মীরা দল গোছানো বাদ দিয়ে চার্জশিট থেকে নাম বাদ দিতে পুলিশও আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ধরণা দিচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কতিপয় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। টাকা নিয়ে হলেও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ ব্যাপারে সহযোগীতা করছেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোয় অপরাধী নয় এমন অনেককেও আসামি করা হয়েছে। যাদের হয়রানি করা উচিত নয়। পুলিশের উচিত বিষয়টি দেখে শুনে পদক্ষেপ নেওয়া।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব কাজী আবদুল্লাহ আল হাসান বলেন, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করার জন্য নাশকতার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের অপকৌশল নিয়েছে সরকার। অথচ সঠিক তদন্ত হলে প্রমাণিত হবে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কোনো ধরনের নাশকতার কাজে লিপ্ত ছিল না।

তিনি বলেন, অন্য আইনে মামলা দায়ের অব্যাহত থাকলেও সেটিকে স্বাভাবিকভাবেই নেন তারা। কারণ এসব মামলার আসামি সাধারণত জামিন পান। আর ওই সব আইনের মামলায় মৃত্যুদন্ডেরও বিধান নেই। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলার অভিযোগ প্রমাণ হলে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করতে পারবেন আদালত। শুধু তাই নয়, এই আইনের মামলায় সহজেই মেলে না আসামিদের জামিন।

চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের পিপি আবুল হাশেম জানান, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-এর ১৫ ধারা-উপধারার ভাষ্য অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি যে কোনো ধরনের গাড়ি, স্থাপনা, রাস্তাঘাট ইত্যাদির ওপর হামলা অথবা নাশকতা কিংবা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা দায়ের করা যাবে। আর ১৫-এর ৩ ধারায় উল্লেখিত অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ যে কোনো দন্ডে দন্ডিত করতে পারবেন আদালত।

তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগেই বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই আইনে বেশ কিছু মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। আমরা আদালতে সাক্ষী-প্রমাণ দিয়েই আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারব।

(ঢাকাটাইমস/ ১৪ জুন /আইখ/ এআর/ ঘ.)