ঢাকা: দেশ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানীতে কয়েক কোটি টাকা দামের একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
চার দলীয় জোট সরকারের আমলে এই মানবতাবিরোধী অপরাধীকে প্লটটি বরাদ্দ দেয়ার পর থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করার পর সে দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠে।তখন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল চূড়ান্ত রায় হওয়ার পর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। গৃহায়নমন্ত্রীর বক্তব্যও সেরকমই ছিল এর আগে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে মুজাহিদের ফাঁসি বহাল থাকার পর বিষয়টি আবার সামনে আসে। তবে এ নিয়ে গৃহায়নমন্ত্রীর বক্তব্যে ভিন্ন সুর লক্ষ্য করা গেছে।তিনি বলেছেন, আদালতের রায়ের সাথে মুজাহিদের প্লট বারদ্দের কোনো সম্পর্ক নেই।
একজন বিশ্লেষক বলছেন, মন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখার পরও মানবতাবিরোধী এই অপরাধীকে “দেশ সেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে” দেয়া সরকারি প্লটের বরাদ্দ বাতিলের বিষয়টি ঝুলে গেল।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আপিল বিভাগ মুজাহিদের রায় বহাল রাখলেও প্লটের বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আইনী বিষয় আর প্লট বরাদ্দের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। নিয়ম মেনে যদি মুজাহিদ প্লট পেয়ে থাকে তাহলে সেখানে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন।
জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘মুজাহিদের মামলা রায় এবং প্লট বরাদ্দ আলাদা বিষয়। আদালতের রায়ের সাথে আর প্লট বারদ্দের কোনো সম্পর্ক নেই। প্লট বরাদ্দে যদি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি নিয়ে যদি কেউ মুজাহিদের প্লট বরাদ্দ বাতিলের আবেদন করে তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’
তবে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর থেকেই নিজামী-মুজাহিদের নামে সরকারি প্লট বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
এ বিষয়ে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিজামী-মুজাহিদকে সরকারি জমি দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে দেশ ও জাতির জন্য বিশেষ অবদানের কারণে তাদের জমি দেয়া হয়েছে। আসলে তো বিষয়টি হয়েছে উল্টো। তারা তো দেশ ও জাতির সর্বনাশ করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের সরকারি সম্পত্তি দেয়া এটাতো আমি মনে করি একটি জঘণ্য অপরাধ।
তিনি বলেন, ‘যারা প্লটের বরাদ্ধ বাতিল করছে না তারা তো মনে হচ্ছে জামায়াতের লোক। তানাহলে তারা কেন বাতিল করছে না। তাদেরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান শাহরিয়ার কবির।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘মুজাহিদের প্লট বরাদ্দের বিষয়ে আইনী কোনো বিধান আছে কি না তা আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবিও নাই। আইনী দিক খতিয়ে দেখে বলা যাবে।’
দেশ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৫ সালে চার দলীয় জোট সরকার জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে এই প্লট বরাদ্দ দেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর থেকেই অবিলম্বে এই বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি।
অভিজাত এলাকা বনানীর একটি প্লটের মালিক যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। দেশ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য চারদলীয় সরকার ২০০৫ সালে বদর নেতা নিজামীকে পাঁচ কাঠার এই দামি প্লটটি বরাদ্দ দেয়। একই সময় উত্তরার এক নম্বর সেক্টরে আরেকটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয় আরেক আলবদর কমান্ডার আলী আহসান মুজাহিদের নামে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) তাকেও প্লট বরাদ্দ দেয় দেশ সেবায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে!
চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীদের মূল্যবান সরকারি সম্পত্তি বরাদ্দ দেয়া নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন ওঠে এবং এ নিয়ে প্রতিবাদ হয়। সর্বশেষ নিজামী ও মুজাহিদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির পর অবিলম্বে এই বরাদ্দ বাতিলের দাবি ওঠে জোরালো ভাবে।
(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এইচআর/এমএম/ এআর/ ঘ.)