logo ২৫ এপ্রিল ২০২৫
সময় যায় চাঁনখারপুলের যানজট যায় না!
বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
২৫ জুন, ২০১৫ ১১:৫৪:৩৩
image

ঢাকা: যানজট কমাতে ফ্লাইওভার তৈরীর সুফল পাচ্ছে না পুরান ঢাকার বাসিন্দারা।ফ্লাইওভারের সঙ্গে মিল রেখে রাস্তার ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় না হওয়ায় যানজট আগের যে  কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে।পুরান ঢাকার মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন এই ফ্লাইওভারটি। সরু অলিগলির কারণে যানজটের জন্য এলাকাটি অনেক আগ থেকেই বিখ্যাত। গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের একাংশ নিমতলীতে শেষ হওয়ায় এলাকাটিতে যানজট রীতিমতো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।


এছাড়াও বঙ্গবাজার, নিমতলী চাঁনখারপুল থেকে শুরু করে ঢাকা মেডিকেল মোড় পর‌্যন্ত অসংখ্য ট্রান্সপোর্ট এজেন্সীর কারণে সবসময়ই এই এলাকায় যানজট লেগে থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।


যানজটের জন্য অভিযোগ আছে ঢাকা মেডিকেলের দ্বিতীয় ইউনিটের উল্টো দিকে অবস্থিত নাভানা সিএনজির বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি, বেশিরভাগ সময় পাম্পের দুই দিক থেকে রাস্তা দখল করে গ্যাসের জন্য গাড়ি অপেক্ষায় থাকায় ডান দিকের লেনে কোনো গাড়ি ঢুকতে পারেনা। যদিও অভিযোগের বিষয়ে নাভানা সিএনজি পাম্পের কেউ এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।


আর ট্রান্সপোর্টগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, তারা রাত আটটার পর থেকে কাজ শুরু করেন। গভীররাত পর‌্যন্ত মালামাল লোড করে গাড়ি ছেড়ে দেন।তাই যানজটের জন্য তারা দায়ি নয়।


তাদের দাবি, পূর্বনির্ধারিত জায়গার স্থলে কিছুটা  আগে ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করা এবং রাস্তার মধ্যে দুটো ডিভাইডার দেয়ায় এ এলাকায় যানজটের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।


এদিকে যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন ঢাকার আশপাশ থেকে চকবাজার, মৌলভীবাজারে পাইকারি কেনাকাটা করতে আসা ব্যবসায়ীরা। কেনাকাটা সেরে গন্তব্যে যেতে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে।তবে রোগী নিয়ে যারা ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকা মেডিকেলে আসেন তাদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়। ফ্লাইওভারের অন্যপ্রান্ত থেকে দ্রুতগতিতে চাঁনখারপুল এসে পৌঁছালেও অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দীর্ঘসময় রোড ডিভাইডারের মাঝখানে পড়ে থাকতে হয়।


এদিকে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে আশপাশের বাসাবাড়ির শিশুরা সবসময় আতঙ্কে থাকে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।


বুধবার সকালে বঙ্গবাজার, নিমতলী, চাঁনখারপুল থেকে ঢাকা মেডিকেল মোড় পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারের পরে রোড ডিভাইডারের শেষ মাথা অর্থাৎ ঢাকা মেডিকেল মোড়ে একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রিকশা ও ভ্যান চালকদের ডিভাইডারের বাম পাশের লেন ব্যবহারের জন্য বলছেন। পাশে অন্যান্য যানবাহন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছেন চকবাজার থানার পরিদর্শক সুজন কুমার রায়।চেষ্টায় খানিক সময় সুফল মেললেও পরক্ষণে চারদিক থেকে আসা গাড়ির চাপে অসহায় হয়ে পড়েন এই পুলিশ কর্মকর্তা।


একটু সামনে চাঁনখারপুল মোড়ে এসে দেখা গেল লালবাগ জোনের এডিসি সঞ্জিত কুমার রায় নিজেই যানজট নিরসণে কাজ করছেন। তাকে সহায়তা করছেন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা।


কাছে গিয়ে জানা গেল, যানজট পরিস্থিতি দেখতে ডিএমপি কমিশনার ওই এলাকায় আসবেন তাই পুলিশের এই তৎপরতা।


সেখানেই পুলিশের এই উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে এই এলাকার যানজট নিয়ন্ত্রনে পুলিশের কার‌্যক্রমের বিষয়ে কথা হয়।


সঞ্জিত কুমার রায় ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরান ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রনে আমরা রমজানে অতিরিক্ত কেয়ার নিচ্ছি। পুলিশের অন্যান্য বিভাগ থেকেও জনবল এনে এখানে কাজে লাগাচ্ছি। ফুটপাথ দখল মুক্ত করেছি। কিন্তু আরো জনবল দরকার। সবার সহযোগিতা দরকার। এছাড়া ব্যবসায়ীদের সহায়তা নিয়ে কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ দিয়েছি। আমাদের চেষ্টায় কমতি নেই।”


চাঁনখারপুল থেকে মেডিকেল মোড় পর‌্যন্ত ডিভাইডারের দক্ষিণ পাশের লেনটি ব্যবহার উপযোগী নয় দাবি করে তিনি বলেন, “এটা তো সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব।পুলিশের পক্ষে তো একাজ করা সম্ভব নয়।”


ঢাকা মেডিকেল মোড় থেকে নিমতলী পর‌্যন্ত এক কিলোমিটারেরও কম জায়গার মধ্যে ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী রয়েছে ৪০টির মতো। এছাড়াও রাস্তার দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি সিএনজি পাম্প, তিনটি প্রাইভেট ক্লিনিক, একটি কমিউনিটি সেন্টার, একটি সরকারি ব্যাংক।


রয়েছে বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবনও। বাকিসবগুলো ভবনই ট্রান্সপোর্ট এজেন্সীর দখলে। এদের মধ্যে সোনারবাংলা, সোনারগাঁও, আফজাল ও মক্কা ট্রান্সপোর্টের বেশি কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে বলে জানা যায়।


এদের বেশির ভাগ মালিক স্থানীয় হওয়ায় নিজেদের সুবিধামত রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে মালামাল ওঠানামা করায় যানজট আরো বেড়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।


এইটুকু জায়গার মধ্যে চাঁনখারপুল মোড় ও মেডিকেল মোড়ে চারদিক থেকে গাড়ি আসায় মূলত যানজটের সৃষ্টি হয়।পরে যা আশাপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পরে।


এদিকে অভিযোগ নাকচ করে সোনারবাংলা ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার মো. শাহিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, “রোড ডিভাইডার ‍দুইটির জন্য এই এলাকায় যানজট হচ্ছে। আগে এতো যানজট ছিল না। আর রাত আটটার আগে আমাদের কোনো গাড়ি এখানে আসেনা।দিনে আমাদের কোনো গাড়ি রাস্তায় থাকে না।”


আর অগ্রদূত কুরিয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার আবদুল বাতেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, “ডান পাশের লেনটা ভালো থাকলে সমস্যা একটু কমে আসতো। কিন্তু এই রাস্তাটা খানাখন্দে ভরা।সিটি করপোরেশন একটু নজর দিলে এখান দিয়ে কিছু গাড়িঘোরা চলতে পারতো।আর দুটো ডিভাইডার দেয়ায় দুই পাশের রাস্তা ছোট হয়ে গেছে।একটা হলে সমস্যা কম হত।”


ডিভাইডারের দক্ষিণ পাশ ট্রান্সপোর্ট ও সিএনজি পাম্প দখল করলেও উত্তর দিক দখলে নিয়েছে গ্যারেজ ও ফার্মেসী। কারণ মূল দোকানের বাইরে সবাই ফুটপাত দখলে নিয়ে ব্যবসা করছেন। এছাড়া ফুটপাতের বাইরেও রাস্তার উপরে অনেকে দোকান করছেন।


বারবার সিটি করপোরেশন অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখল মুক্ত করলেও অভিযান শেষ হলে আবার তা দখলে চলে যায়।অভিযোগ আছে, সরকার দলীয় স্থানীয় নেতারা এসব নিয়ন্ত্রণ করেন।


নিমতলী এলাকায় মো. ইলিয়াস নামে এক গ্যারেজ মালিকের সঙ্গে কথা হয়।


তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, “একটা ডিভাইডার হলে যানজট অনেক কম হতো। যানজটের কারণে অনেকে ব্যবসা সরিয়ে নিচ্ছেন। ব্যবসা না বন্ধের পথে তাই অন্য জায়গায় লন্ড্রির দোকান দিতে বাধ্য হয়েছি। সংসার চালাতে হবে তো।”


(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/বিইউ/এআর/ ঘ.)