ঢাকা: গত কয়েক বছরের মধ্যে এতোটা বেকায়দায় পড়েনি কখনো বিএনপি।
দল না গুছিয়ে সরকার বিরোধী বড় সড় আন্দোলন করতে গিয়ে একাধিক বার দেশ পরিচালনায় অভিজ্ঞ এ দলটি এখন ভীষণ সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে।
যদিও বিএনপি বিপদে আছে-এটা স্বীকার করতে রাজি নয় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তবে বিএনপি চেয়ারপারসন গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে দলকে চাঙ্গা করার একটা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর পাশাপাশি দলকে ঠেলে সাজানোর কাজটি ভেতরে ভেতরে করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে এখনো দৃশ্যমান কোনো কিছু চোখে পড়ছে না।
দলকে জাগিয়ে তোলার জন্য বিএনপির মধ্যে মাহে রমজানকে কাজে লাগানোর একটা পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ উপলক্ষে প্রতিদিন ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়ার একটা চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে কোনো ধরনের বৈঠক না হওয়ায় ২০ দলীয় জোটের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে এবং এ নিয়ে ভেতরে একটা ক্ষোভও রয়েছে।
গত নভেম্বরের পর থেকে জোটের কোনা বৈঠক হচ্ছে না।তবে জোটের দিকে নজর না দিয়ে বিএনপি এখন নিজেকে শক্তিশালী ও সংগঠিত করার দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
তবে দীর্ঘদিন ধরে জোটের কোনো বৈঠক না হওয়ায় বিএনপির ভেতর থেকে জোটকে খাটো করে বক্তব্য দেয়ার পাশাপাশি আন্দোলনের পরে খোঁজখবর না নেয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শরিক দলগুলোর মধ্যে নানা গুঞ্জন রয়েছে।
শরিকদলগুলোর নেতারা বলছেন, গত আন্দোলনে তারা সামর্থ্য অনুযায়ি কাজ করেছেন। অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে কর্মী নিহতও হয়েছেন।কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এর কোনো তালিকা তাদের কাছে চাওয়া হয়নি। অথচ বিএনপি দেশব্যাপী তালিকা করছে।
আন্দোলন বন্ধ হওয়ার পর এতোদিনেও কোনো বৈঠক ডাকা হয়নি। এমনকি অনুষ্ঠানিকভাবেও বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের জোট প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ডাকা হয়নি। এসব কারণে কিছুটা হলেও জোটের মধ্যে দুরত্ব তৈরী হচ্ছে।
আবার জোটের কেউ কেউ এমন অবস্থাকে স্বাভাবিক বলে মনে করছেন। একটি শরিক দলের মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, “বিএনপি জোটের প্রধান দল।বারবার ক্ষমতায় থাকা দলটি তার তুলনায় অনেক ছোটদলগুলোকে আশানুরূপ মূল্যায়ণ করবে সেটা ভাবা ভুল।”
টানা হরতাল-অবরোধ বন্ধ হয়েছে অনেক দিন হলো। এরমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ছাড়া আর কোনো জোট নেতার সাক্ষাত হয়নি। অবরোধের সময় আটক এই জোট নেতা জেল থেকে বের হয়ে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় সাক্ষাত করেন। এছাড়া ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর তার ছেলে নতুন চেয়ারম্যান হওয়ার পর সৌজন্য সাক্ষাত করেছিলেন। আর কোনো নেতা জোট প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি।
এদিকে কোনো কর্মসূচি না থাকায় অন্য দলগুলোও নিজেদের মতো করে সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করেছে বলে জোট সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, “বিএনপি তাদের মতো দল গোছাচ্ছে। আমরাও কাজ শুরু করেছি। টার্গেট করেছি রংপুর বিভাগের আট জেলায় ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন করে বাংলাদেশ ন্যাপের কমিটি করা হবে।” উল্লেখ্য, বিএনপি জোটের এই দলটির রংপুর বিভাগে জনশক্তি বেশি।
এছাড়াও কর্ণেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপিও দল গোছানোর কাজ শুরু করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ উপলক্ষে তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন বলেও জানা গেছে।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঢাকাটাইসমকে বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া সবাইকে সংগঠন গোছানোর জন্য বলেছেন। আমরাও সেইভাবে আগানোর চেষ্টা করছি।”
তিনি জানান, ৩০ জুন লেবার পার্টির ইফতার উপলক্ষে সংগঠনের ৪৩টি জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। পরের দিন দলের সার্বিক বিষয় নিয়ে নেতাদের সঙ্গে তারা বৈঠক করবেন।”
কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম আমিনুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, “রজমানকে কেন্দ্র করে আমরা দলকে গতিশীল করার পরিকল্পনা নিয়েছি। সারাদেশের ৪৮টি সাংগঠনিক জেলায় ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে যোগাযোগ তৈরীর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোথাও এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতারাও থাকবেন।”
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ১৮ এপ্রিল বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে এতে কাজী জাফর আহমদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি এই জোটে যোগ দেয়া। পরবর্তীতে সাম্যবাদী দল যোগ দিলে ২০ দলীয় জোটে সম্প্রসারিত হয়।
(ঢাকাটাইমস/২০জুন/বিইউ/ এআর/ ঘ.)