logo ২৫ এপ্রিল ২০২৫
গমের আসল পরীক্ষাই করা হয়নি
মহিতুন রিয়া, ঢাকাটাইমস
০৮ জুলাই, ২০১৫ ১২:৫৭:১৯
image

ঢাকা: ব্রাজিল থেকে আনা গম খেতে কোন ঝুঁকি আছে কি না তার মূল পরীক্ষা না করেই খাদ্য অধিদপ্তর আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, খাদ্য অধিদপ্তর কেবল গমে প্রোটিনের মান, আদ্রতা, ওজন, দানা কতোটা ভাঙা, এতে পোকা আছে কি না সে বিষয়ে পরীক্ষা করিয়েছে। কিন্তু এর বাইরে ক্ষতিকারক ছত্রাক আছে কি না এবং তা খেলে মানুষের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে সে পরীক্ষা করায়নি।


ব্রাজিল থেকে আনা দুই লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন গম নিম্নমানের বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা খাওয়ার উপযোগী কি না, তার প্রতিবেদন চায় হাইকোর্ট। গত ৫ জুন খাদ্য অধিদপ্তর গমের পাঁচটি পরীক্ষা করে হাইকোর্টে জমা দেয়।


বাংলাদেশ শিল্প বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ-বিসিএসআইআর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে দেশের বিভিন্ন খাদ্য গুদাম থেকে আনা ৫৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম চুক্তিপত্রের নির্দেশ অনুসারে গ্রহণীয় সীমার মধ্যে থাকায় মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত বলে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে প্রত্যয়ণ করা হল।’


আদালতে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গমের নমুনা পরীক্ষা করে প্রোটিনের যে মাত্রা পাওয়া গেছে তা চুক্তিপত্রের চাহিদার চেয়ে বেশি।


তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কেবল প্রোটিনের মাত্রা পরীক্ষা করেই এই গমকে খাওয়ার উপযোগী বলার সুযোগ নেই। এতে ক্ষতিকারক ছত্রাক আছে কি না, তার অনুসন্ধানে আফলাটক্সিন পরীক্ষা অবশ্যই করতে হবে।


তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে আমরা গমের যে ছবি দেখেছি তাতে শস্যদানার ওপর সাদা এবং সবুজ রঙয়ের প্রলেপ দেখেছি। তার মানে এতে ছত্রাক বা অন্য কোন পরজীবী থাকতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে তারাও এই গম থেকেই খাদ্য সংগ্রহ করবে এবং সেখানেই বর্জ্য ত্যাগ করবে। আর গমেই বংশ বিস্তার করবে যে প্রক্রিয়ায় তাতে গমে আলফাটক্সিন জাতীয় ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেবে। এই জীবাণু থাকলে এই গমের আটা খেলে প্রাণঘাতি ডায়রিয়া হতে পারে ভোক্তাদের।


এক প্রশ্নের জবাবে আ ব ম ফারুক জানান, আফলাটক্সিন পরীক্ষা সময়সাপেক্ষ বা খুব বেশি খরচের বিষয় নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আইসিডিডিবিআরবি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত বেশ কিছু পরীক্ষাগারে করা সম্ভব। আর সরকার চাইলে দেশের বাইরেও করাতে পারে। একাধিক পরীক্ষাগারেও পরীক্ষা করে তা মিলিয়ে দেখতে পারে। কেবল গম নয় যেকোনো খাদ্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এ পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি বলে জানান এ অধ্যাপক।


তবে এই বিশেষজ্ঞের এই উদ্বেগ জানেই না খাদ্য অধিদপ্তর। শস্যদানায় এই ক্ষতিকারক ছত্রাকের বংশবিস্তার বা এর প্রভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মুশফেকা ইফফাৎ। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘আফলাটক্সিন পরীক্ষার বিষয়ে আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। এর আগে কেউ আমাদের এ বিষয়ে কিছু বলেনি’।


খাদ্য মন্ত্রণালয় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি না জেনেই দিনের পর দিন খাদ্য আমদানির অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে-এমন তথ্যে আবার হতবাক হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শেখ নজরুল ইসলাম। তিনিও বলেছেন, ‘ব্রাজিল থেকে আনা গমগুলোর সঠিক পরীক্ষা হচ্ছে না। গমগুলো কটটুকু ভাঙা, ময়লা আছে কি না-কেবল এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অথচ এটাই মুখ্য বিষয় নয়। গমে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক কোনো পদার্থ আছে কিনা তা কেউ পরীক্ষা করছে না’।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও একটি বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ব্রাজিল থেকে আনা বেশিরভাগ গম খাওয়া হয়ে গেছে। এখন যেগুলো আছে সেগুলো আর কতদিন খাওয়া যাবে সেগুলোরও কোনো পরীক্ষা করা হচ্ছে না। 


(ঢাকাটাইমস/৮জুলাই/এমএন/ডব্লিউবি)