ঢাকা: মন্ত্রিসভার দুই প্রভাবশালী সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের এক এমপি পুত্রের একের পর এক কেলেঙ্কারিতে শাসক দল আওয়ামী লীগে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে তাদের পদত্যাগেরও দাবি উঠছে বেশ জোরে সোরেই।ঢাকা মহানগর নেতা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার দুর্নীতি মামলার ১৩ বছরের সাজা বহাল(উচ্চ আদালতের)নিয়ে শোরগোল এবং মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও এমপি পিনু খানকে নিয়ে সমালোচলা না থামতেই খাদ্যমন্ত্রী পচা গম কেলেঙ্কারি নিয়ে বেশ বিব্রত পরিস্থিতির মুখে পড়েছে শাসক দল।তবে বাংলাদেশ গম কেলেঙ্কারি নিয়ে বিএনপি সরকারকেও কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি।
সর্বশেষ গম কেলেঙ্কারিকাণ্ডে চাকরি যাওয়ার উপক্রম হয়েছে খাদ্যমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামের।
গত বেশ কয়েক দিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্রাজিলীয় গম থেকে “দুর্গন্ধ ছড়াতে” শুরু করেছে।বিএনপিতো ব্রাজিল থেকে খাবার অনুপযোগী গম আমদানির অভিযোগে খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন।বলা হচ্ছে, নৈতিক দিক থেকে খাদ্যমন্ত্রীর উচিৎ সরে দাঁড়ানো।তদন্তে যাতে প্রভাবিত না হয় সে জন্যই কামরুল ইসলামের পদত্যাগ করা উচিৎ।
তবে “পচা গমের” পক্ষে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের অনবরত সাফাইয়ে পরও ইস্যুটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ নিয়ে রুল জারি করেছে।
এতে ব্রাজিল থেকে আনা গম খাবার উপযোগী কি না তা পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে।গণমাধ্যমগুলোতেও খাদ্যমন্ত্রীকে “গম কামরুল” আখ্যা দিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রানমন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়াকে নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই কামরুলকে নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে শাসক দল।
তবে গম নিয়ে কেলেঙ্কারি যে এই সরকারের আমলে তাও নয়।বিএনপি সরকারের আমলেও গম নিয়ে কেলেঙ্কারির কথা আমরা শুনেছি।বিগত বিএনপি সরকারের সময়ও গম কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন বগুড়ার বিএনপি দলীয় হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু। তখন বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, গণমাধ্যমে যেভাবে বিষয়টি আসছে তাতে দেশের বিবেকবান মানুষ বিব্রত এবং আমরাও কিছুটা বিব্রত বোধ করছি।
তবে অভিযোগ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যদি গমে খারাপ কিছু পাওয়া যায় তাহলে গম বিতরণ বন্ধ করে দেয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এডভোকেট কামরুল ইসলামকে নিয়ে দল বিপাকে এতে কোনো সন্দেহ নেই।গত কয়েক দিন ধরে কামরুল আর মায়াকে নিয়ে যেভাবে লেখালেখি হচ্ছে তাতে দল বিব্রত না হয়ে পাড়ে না।
আমরা নেত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি।তিনি বলেন, শাসক দল হিসাবে এখন আওয়ামী লীগ কামরুল-মায়াকে নিয়ে যতটা চাপে আছে গত বিএনপির আন্দোলনের সময়ও এতোটা চাপ অনুভব করেনি।
অপর এক নেতা বলেন, ত্রুটিপূর্ণ গম নিয়ে কামরুল যেভাবে মিডিয়ায় কথা বলে যাচ্ছেন তাতে তো আর পচা গম ভালো হয়ে যাবে না।কামরুল সাহেব বরাবরই বেশি কথা বলেন। বেশি কথা বলে তিনিই যে এখন খেসারত দিচ্ছেন তা নয়, দলও তার খেসারত দিচ্ছে। বিএনপি এখন মায়া-কামরুলকে নিয়ে একটা সুযোগ পেয়েছে। বিরোধী দল হিসাবে তারা তো এর সৎ ব্যবহার করবেই।
অন্যদিকে, দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ঢাকা সিটি নির্বাচনে দলীয় সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগও আছে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। একারণে তাকে শিগরিই নগরের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়তে হতে পারে। সূত্র জানায়, এ নিয়ে হয়তো শীঘ্রই দলীয় সভাপতি সিদ্ধান্ত দিবেন।
যদিও এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহউল আলম লেনিন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে বের হবে কে দোষী। তারপর সরকার বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত দিবে। তারপর দল বিষয়টি নিয়ে ভাববে। সরকার এবং দল দুটি ভিন্ন জিনিস।
এদিকে দলের আরেক সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি গত ১৩ জুন রাতে রাজধানীর ইস্কাটনে নিজের লাইসেন্সকৃত পিস্তল থেকে এলোপাতাড়ি গুলি করে দুইজন রিকশা ও অটোরিকশা চালককে নির্মমভাবে খুন করেন। অভিযুক্ত রনি এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তার রেষ এখনো চলছে।
(ঢাকাটাইমস/ ১ জুলাই/টিএ/ এআর/ ঘ.)