ঢাকা: স্বর্ণ আসে কচ্ছপ যায়- হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এমন ঘটনা এখন নিত্যদিনের। প্রায়ই ধরা পড়ছে অন্যদেশ থেকে আসা স্বর্ণের চালান। একই জায়গা দিয়ে পাচার হওয়ার সময় উদ্ধার করা হয় বিরল প্রজাতির কচ্ছপ।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-এত কচ্ছপ কোথা থেকে আসছে? এবং এর গন্তব্যই বা কোথায়?। স্বর্ণ নিয়েও মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।
জানা গেছে, গত এক বছরে চোরাচালানের ৫৫০ কেজি স্বর্ণ আটক করে কাস্টমস। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায়ও আটক হচ্ছে স্বর্ণের অবৈধ চালান।
এদিকে গত কয়েকদিনে বিমানবন্দর থেকেই প্রায় দুই হাজারের মতো কচ্ছপ আটক করা হয়েছে। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশও সম্প্রতি কচ্ছপসহ ভারতীয় নাগরিককে আটক করেছে।
স্বর্ণ উদ্ধারের বিষয়ে জানা যায়, এর বেশিরভাগই চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চোরাচালানের সিংহভাগ স্বর্ণ পাচার হচ্ছে ভারতে। আকাশপথে যে স্বর্ণ দেশে আসছে, তা আবার স্থলপথে বেরিয়ে যাচ্ছে সীমান্ত পথে।
বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের চালান পাচার হয়ে যাচ্ছে। চক্রের মূল হোতারা সিঙ্গাপুর, দুবাই, পাকিস্তান ও ভারতে বসে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
চোরাকারবারি চক্রের বাহক কেউ ধরা পড়লেও এদের হাত এতা লম্বা যে কারোরই শাস্তি হয় না। মূল হোতারা সব সময় রয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব কারণে স্বর্ণের চোরাকারবারিরা বাংলাদেশকে নিরাপদ ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন।
এদিকে রবিবার সকালেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় এক হাজার কচ্ছপ উদ্ধার করেছে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের ৩ নম্বর বহির্গমন গেট থেকে কচ্ছপগুলো উদ্ধার করা হয়।
কাস্টমসের সহকারী কমিশনার প্রিয়াঙ্কা দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাগেজ স্ক্যান হওয়ার সময় পাঁচটি ট্রলি ব্যাগে এই কচ্ছপগুলো দৃষ্টিগোচর হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যৌথ অভিযানে ৫৪০টি কচ্ছপ উদ্ধার হয়।
এরআগে ৬ জুলাই বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকা থেকে সবজি ঘোষণা দিয়ে পাচারের সময় বিরল প্রজাতির ৫৩ কার্টন ভর্তি কচ্ছপ উদ্ধার করে আর্মড পুলিশের সদস্যরা। ব্যাংকক এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে সবজি ঘোষণা দিয়ে কচ্ছপগুলো পাচার করা হচ্ছিল বলে জানা যায়।ওই ঘটনার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, বাংলাদেশ থেকে প্রেরকের ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে এ কচ্ছপগুলো পাচার হচ্ছিল।
এরকিছু দিন আগে ২৯ মে একই স্থান থেকে ১৩০টি দুর্লভ প্রজাতির কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়। আর ২৩মার্চ উদ্ধার করা হয় ১৩০টি চিত্রা কচ্ছপ।
এত কচ্ছপ কোথা থেকে আসছে এবং এদের গন্তব্য কোথায় এ বিষয় জানতে চাইলে প্রাণী সম্পদ সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ওয়াসিম মল্লিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে এই কচ্ছপগুলো ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ডে পাচারের উদ্দেশে নেয়া হয়। কারণ এসব দেশে কচ্ছপের মাংশের খুব চাহিদা। এটা দিয়ে স্যুপ তৈরি করা হয়।আর উপরের শক্ত অংশ দিয়ে অলংকারের বক্স তৈরি হয়।”
তিনি আরো জানান, “শুধু বাংলাদেশ থেকেই নয়, পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এসব কচ্ছপ আনা হচ্ছে। কারণ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি চালান আটকের সময় ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে।”
(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/বিইউ / এআর/ ঘ.)