logo ০৯ মে ২০২৫
রাজনের বাবাকে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল
সাইফুর তালুকদার, ঢাকাটাইমস
১৫ জুলাই, ২০১৫ ০০:১৮:৩২
image

সিলেট: শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যাকাণ্ডটিও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছিল প্রথম থেকেই।ঘাতকরা খোদ থানায় বসেই পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলামের সঙ্গে রফাদফা করে।


এ ব্যাপারে বড় অংকের অর্থ লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে। বলা হচ্ছে সমঝোতার পর পুলিশই মূল ঘাতক কামরুলকে বিদেশ যেতে সহায়তা করেন।


স্থানীয়দের প্রশ্ন, প্রকাশ্য দিবালোকে একটি শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করার পর লাশসহ কামরুলের ভাই মুহিতকে আটক করার পরও পুলিশ কী করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করলো?


আসামিদের বাঁচানোর জন্য এসআই আমিনুল ইসলামের ভূমিকা ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু, বলা যায় বেপরোয়া। ঘটনার কয়েকদিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে ভিডিও ছড়িয়ে পরার পর আমিনুল উল্টো সুরে কথা বলতে শুরু করে।


রাজনের বাবা শেখ আজিজুল ইসলামের অভিযোগ, থানার মামলা করতে যাওয়ার পর এসআই আমিনুল ইসলামই মামলা না নিয়ে আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেয়।


ঢাকাটাইমসকে আজিজুল ইসলাম বলেন, ওই সময়ই আমার উপস্থিতিতে রাজন হত্যার মূল হোতা কামরুলের ভাইয়ের মুক্তি ও নিজেকে বাঁচানোর জন্য এসআই আমিনুলের সঙ্গে ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলে যাচ্ছিল।


থানার ভেতর বসেই কামরুলকে উদ্দেশ্য করে এসআই আমিনুলকে বলতে শোনা যায়, “তিন তো দিলা বাকি তিন দিবা কবে।”


জানা যায়, লাশ গুম করার চেষ্টার সময় কামরুলের ভাই মুহিতকে স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। আর ভাইকে ছাড়াতেই তখন থানায় যায় সৌদি আরবের জেদ্দায় আটক হওয়া কামরুল।


স্থানীয় জনতা ঘটনাস্থল থেকে মুহিতকে হাতে নাতে আটক করে পুলিশে দিলেও পুলিশ মামলা করে অজ্ঞাতদেরে নামে। এ নিয়ে গোটা সিলেটে ক্ষোভ বিরাজ করছে।


নিহত রাজনের বাবা শেখ আজিজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসের কাছে অভিযোগ করেন, প্রথমে মামলা না নিয়ে তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়। এসময় কামরুলসহ অন্য আসামিরা থানাতেই ছিল।


এসআই কামরুল ইসলামের এই আচরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মঙ্গলবার রাতে এসআই আমিনুলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।


উল্লেখ্য, গত বুধবার সকাল ৮টার দিকে রাজনকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায় কামরুলদের গ্যারেজের ড্রাইভার ময়না। এরপর তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর দুপুরে কামরুল ও মুহিতসহ চারজন লাশ গুম করতে গ্রামের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানেই স্থানীয়রা ধাওয়া করে মুহিতকে আটক করেন। অন্যরা পলিয়ে যায়।


ঘাতক মুহিত আলম আগে থেকেই রাজন ও তার পরিবারকে চিনতো। কিন্তু এসআই আমিনুল আসামিদের রাজনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে মর্গে পাঠিয়ে দেয়। আর মুহিতকে হাতে নাতে আটকের পরও এসআই আমিনুল নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করে। অভিযোগ রয়েছে-আর এসব কাজই হয় মোট অংকের অর্থের বিনিময়ে।


রাজনের বাবা ছেলেকে সারাদিন খুঁজতে খুঁজতে রাত ১০টায় থানায় জিডি করতে গেলে খবর পান ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের কাছে মুহিত আটক থাকার পরও মামলা করা অজ্ঞাতদের নামে এবং বেওয়ারিশ হিসেবে রাজনকে মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এনিয়ে প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এসআই আমিনুল।


নিহত রাজনের বাবা আজিজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, কামরুলদের গ্যারেজের দারোয়ান ময়না শিশু ধর্ষণকারী। কামরুলদের প্রভাবে কেউ এর প্রতিবাদ করতো না। কিন্তু ঘটনার দিন হয়তো তার ছেলেকেও (রাজন) একই উদ্দেশ্যে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায় ময়না। কিন্তু উদ্দেশ্য সফল না হওয়ায় চুরির অপবাদ তুলে রাজনকে পিঠিয়ে হত্যা করা হয়।


তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন রাতে আমি থানায় গিয়ে দেখি মুহিত হাজতে কামরুলসহ সকল আসামি থানায় রাজার হালে বসা। আমি মামলা করতে চাইলে এসআই আমিনুল বলে আমি মামলা করে ফেলেছি, তোমার মামলা করা লাগবেনা।


এসময় কামরুলকে উদ্দেশ্য করে আমিনুল বলে তিন দিলা, বাকি তিন কই। এসময় মামলা না নিয়ে উল্টো আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেয়। এর পর দিনই কামরুল বিদেশে পালিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে কামরুলকে বিদেশে যেতে সহযোগিতা করেন এসআই আমিনুল ও স্থানীয় ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন।


এলাকাবাসীর প্রশ্ন-মুহিতকে আটকের পর পুলিশ যদি যথাযথ পদক্ষেপ নিত তবে কামরুল পালাতে পারতো না। পুলিশের আচরণ প্রথম থেকেই রহস্যজনক। ঘটনার চার দিন পর যদি বিষয়টি পত্রিকায় না আসত তবে রাজন হত্যাটি ধামাচাপা পড়ে যেত।


এসআই অমিনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে জালালাবাদ থানার ওসি আকতার হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


এদিকে রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান ও স্বজনদের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এসএম রুকন উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশ।


কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মুশফেকুর রহমান ও ডিসি (দক্ষিণ) জেদান আল মুসা। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।


(ঢাকাটাইমস/১৫‍জুলাই/প্রতিনিধি/এআর)