ঢাকা: দল থেকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের চিঠি স্পিকারের কাছে পৌঁছানোর পর এমপি পদে তাঁর থাকা না থাকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এ নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত থাকলেও অনেকেই বলছেন আইন ফলো করা হলে লতিফ সিদ্দিকীর
এমপি পদ থাকার কথা নয়।
এর আগে আমাদের দেশে উভয় দিকেই দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে বিষয়টি এখন নির্ভর করছে স্পিকার শিরীন শারমিনের ওপর।
সম্প্রতি লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা লিখিত আকারে স্পিকারের কাছে পাঠিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ। গত ৫ জুলাই চিঠিটি সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছায়। চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন স্পিকার।
দল থেকে বহিষ্কারের চিঠি সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছানোর পর লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী দলের সদস্য পদ হারানোর কারণে তার এমপি পদ বাতিল হওয়ার কথা।
এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলছেন, বিষয়টি নির্ভর করছে স্পিকারের সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বল এখন স্পিকারের কোর্টে। আমরা স্পিকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘সংবিধান এবং কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের সময় অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত এমপি আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
তাঁর এমপি পদ থাকবে কি না- বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবু হেনার সদস্য পদ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দেন তৎকালীন স্পিকার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার।
একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে।
সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলেও তার এমপি পদ বহাল থাকে।
]সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদকে ফ্লোর ক্রসিং হিসাবে অবহিত করা হয়। এতে বলা হয়েছে ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সংসদ্য হইবার অযোগ্য হইবেন।’
তবে দল থেকে বহিষ্কার হলে এমপি পদ বাতিল হবে বলে দাবি করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন বলেই আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কার করেছে। দল চাইলে তার এমপি পদ বাতিল হবে। অতীতের রেকর্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে মেজর আখতারুজ্জামানকে বাদ দিয়েছিল বিএনপি। তখন নির্বাচন কমিশন তার সদস্য পদ বাতিল করে। সেভাবেই লতিফ সিদ্দিকী যদি দলের লোক নাই হন তাহলে কিভাবে থাকবেন সংসদে।
তিনি বলেন, তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলে এমপি নির্বাচিত হতে পারতেন না। সংসদ সচিবালয়ে পাঠানো আওয়ামী লীগের চিঠি স্পিকার নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশন তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
নৌকা প্রতীক নিয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বর্তমান সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তিনি মহানবী (সা.), হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিলে তা নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ব্যাপক সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে তাকে গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভা ও পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য পদ থেকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর তার দলের সাধারণ সদস্য পদও খারিজ করা হয়।
উল্লেখ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে প্রায় দুই ডজন মামলা হয়। গত ২৩ নভেম্বর রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। পরদিন তিনি ধানমন্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। গত ২৯ জুন উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি মুক্তি পান।
(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/এমএম/এআর/ ঘ.)