ঢাকা: কোথাও নেই বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাস। আবার আছেনও। তবে ব্যবসায়িক কাজে।থাকছেন নিজের বাসভবনেই। প্রয়োজনে নিজের ব্যাংকসহ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সভায় হাজিরও হচ্ছেন। এড়িয়ে চলছেন সংবাদকর্মীদের।আগের মতো কেন্দ্রীয় তথা ঢাকার নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন না নগর বিএনপির আহ্বায়ক।
বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা মামলা হলেই যখন আটক হচ্ছেন, সেখানে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরও তিনি গ্রেপ্তার না হওয়ায় দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
মির্জা আব্বাসের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকায় নেতাকর্মীদের মনে এই প্রশ্ন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে-নিরাপদে থাকতে কি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছেন মির্জা আব্বাস।
যদিও আব্বাসের ঘনিষ্ঠদের দাবি, মামলার কারণে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি কিছুটা আড়ালে আছেন। তবে সবসময় তিনি দলের খোঁজখবর রাখছেন। আর ঘনিষ্ঠদের জোরালো দাবি, মির্জা আব্বাস সমঝোতার রাজনীতি করেন না।
৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ঢাকা মহানগর বিএনপির ব্যর্থতা সব মহলের সমালোচনা কুড়িয়েছিল। তখনকার কমিটির সমালোচনা করে মির্জা আব্বাসের কড়া বক্তব্যও ছিল। কিন্তু ব্যর্থ কমিটি ভেঙে দিয়ে তার কাঁধে মহানগরের দায়িত্ব দিলেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রায় একবছরেও কমিটি গঠনের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
আর সরকারবিরোধী দ্বিতীয় দফার আন্দোলনে তার ভূমিকা সবার জানা। গোটা সময়জুড়ে তিনি ছিলেন আত্মগোপনে। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও এ সময় তার তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না।
তবে আন্দোলন বন্ধ হলেও মির্জা আব্বাস আত্মগোপন ছাড়েননি। পরে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনকে করলেও দুর্নীতি ও নাশকতার মামলায় জামিন না হওয়ায় তিনি প্রকাশ্যে আসেননি।
এরই মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় করা দুদকের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পরে তিনি শাহবাগ ছাড়াও পল্টন ও মতিঝিল থানার নাশকতা মামলায় আগাম জামিনের আবেদন করলেও দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন আদালত। সে কারণে নিয়ম অনুযায়ী আবেদন শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। পরে বিচারপতি রুহুল কুদ্দুসের একক বেঞ্চ জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে আব্বাসের আইনজীবীরা আপিল করেন বলে জানা গেছে।
পরবর্তী সময়ে ২৭ এপ্রিল তিন মামলায় আব্বাসের আইনজীবীদের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামিন শুনানির দিন পিছিয়ে ৪ মে পুনঃনির্ধারণ করেন হাইকোর্ট। পরে আবার বার কাউন্সিল নির্বাচনের জন্য আব্বাসের আইনজীবীরা দ্বিতীয়বারের মতো সময় আবেদন করেন। আদালত পরে ২৪ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
মির্জা আব্বাসের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ প্রসঙ্গে ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমরা আপিলের শুনানির জন্য অপেক্ষা করছি। শুনানি হলে মির্জা আব্বাস জামিন পাবেন কি পাবেন না সেটা দেখা যাবে।”
এদিকে আন্দোলন থামার পর আত্মগোপন থেকে বের হয়ে বিএনপির অনেক নেতা দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন।
অনেকে প্রকাশ্যে যাচ্ছেন, কেউ আবার গোপনে। কিন্তু মির্জা আব্বাসের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।তিনি এ পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেননি। চেয়াপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেননি।
গুঞ্জন আছে, সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও মির্জা আব্বাস নিরাপদে আছেন। ব্যবসা বাণিজ্য দেখভাল করছেন।
তবে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোর্শেদ আলম এমন অভিযোগ নাকচ করে দেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, “মামলা নিজস্ব গতিতে চলছে। এখানে সমঝোতার সুযোগ নেই।”
এদিকে আব্বাসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মহানগর বিএনপির একজন নেতার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি মুখ খুলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, “পরিস্থিতি দেখলে এমন গুঞ্জন অস্বীকার করা যায় না। তবে বাস্তব অবস্থা এমন কিনা বলতে পারবো না। কারণ যতটুকু জানি মির্জা আব্বাস সমঝোতার রাজনীতি করেন না।”
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঘোর আপত্তি থাকার পরও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে হাবিব উন নবী খান সোহেলকে দায়িত্ব দেয়ায় তিনি নাখোশ। সে কারণে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই তিনি নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে রাখছেন। কমিটি ঘোষণার পর তিনি দল থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন বলেও গুঞ্জন আছে।
মির্জা আব্বাস বেশিরভাগ সময় বাসায় কাটাচ্ছেন এমনটা জানিয়ে ঢাকা মহানগর মহিলা দলের একজন শীর্ষ নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, “তিনি তো এখন আওয়ামী লীগ হয়ে গেছেন। বিএনপির অন্য নেতারা যেখানে বাসায় থাকতে পারেন সেখানে তিনি বাসায় থাকলেও পুলিশ ধরে না।”
সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে মির্জা আব্বাসের ব্যক্তিগত মোবাইলে বারবার চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার ব্যক্তিগত সহকারীর ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে আব্বাসের ঘনিষ্ঠ বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বললে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, “প্রকাশ্যে এলেই তো গ্রেপ্তার হবেন। তাই কিছুটা কৌশলী ভূমিকায় আছেন আব্বাস ভাই। সমঝোতার গুঞ্জন বানোয়াট।”
এদিকে শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, “মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হবে।”
থানা পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি বাসায় অবস্থান করছেন এমন গুঞ্জনের সত্যতা জানা নেই বলেও দাবি করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
(ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/বিইউ/জেবি/এআর/ ঘ.)