logo ২৩ আগস্ট ২০২৫
আষ্টেপৃষ্ঠে মামলায় জড়িয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া


০৫ আগস্ট, ২০১৫ ১৭:৫৪:২৫
image

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস


ঢাকা: আরও এক দুর্নীতি মামলা শুরু হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। ছয় বছর স্থগিতাদেশ শেষে হাইকোর্ট জানিয়েছে গ্যাটকো মামলা চলবে। এ নিয়ে পাঁচটি দুর্নীতি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। সবগুলো মামলাই করা হয় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর ঋণখেলাপের আরও একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে পক্ষভুক্ত করেছে আদালত।


এই মামলাগুলোর মধ্যে জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বাদীর জেরা শেষ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এখন অন্য সাক্ষীর জেরা পর্যায়ে আছে মামলাদুটো। গ্যাটকো এবং নাইকো দুর্নীতি মামলাও চালুর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আর বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা চালু করতে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছে দুদক। মামলাটি যেন আমলে নেয়া না হয় সে জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন আছে খালেদা জিয়ারও।


আইন অনুযায়ী কোনো দুর্নীতি মামলায় সাজা হলে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার আইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়া যেন নির্বাচন করতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যেই সরকার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।


ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে খোকন বলেন, “সরকার মূলত মামলাগুলো সচল করে ম্যাডামের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু তাতে কাজ হবে না। আমরা আপিল বিভাগে যাবো। আশা করি ন্যায়বিচার পাবো। কারণ যেখানে শেখ হাসিনার মামলা বাতিল হয়ে যায় সেখানে কিভাবে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলা চলে।”


তবে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলছেন, তারা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে মামলা করেননি। মামলা অস্বাভাবিক দ্রুত নিষ্পত্তিরও কোনো উদ্যোগ নেই। বরং খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মামলা বাধাগ্রস্ত করতে কথায় কথায় উচ্চ আদালতে গেছেন।


কোন মামলায় কী অভিযোগ


জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ‍দুর্নীতি মামলা


জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।


আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আ্ত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলার অন্য আসামিরা হলেন: সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।


বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এরইমধ্যে গত ৩ আগস্ট মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদকে জেরা শেষ করেছেন আসামীপক্ষের আইনজীবীরা। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের তারিখ ১০ আগস্ট ধার্য করেন আদালত।


গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা


কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য গ্যাটকো লিমিটেডকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার কার্যক্রম এতোদিন হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত ছিল।


নাইকো দুর্নীতি মামলা


কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।

২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান। অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।


এই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার হাইকোর্টে দায়ের করা রিটও গত ১৮ জুন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। তাই এই মামলাও চলতে বাধা নেই।


বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা


খালেদা জিয়াসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে করা বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। গত ৩০ জুলাই এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা থাকলেও ওইদিন শুনানি হয়নি।


চারদলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ১০ মন্ত্রীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবাধয়ক সরকারের সময় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলা হওয়ার পর ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।


এতে বলা হয়, চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি করেছেন।


কোকোর মামলা খালেদার ঘাড়ে


ড্যান্ডি ডাইংয়ের প্রায় দেড়শ কোটি টাকার ঋণখেলাপের মামলার আসামি আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার কারণে অংশীদারিত্ব মামলায় তার মা খালেদা জিয়াকে বিবাদী করার জন্য আদালতে আবেদন করে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এতে কোকোর স্ত্রী শার্মিলা রহমান এবং দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকেও বিবাদী করার আবেদন করা হয়। ওই মামলায়ও আদালত গত ৪ এপ্রিল খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে পত্রিকায় সমন জারির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন।


(ঢাকাটাইমস/৫আগস্ট/বিইউ/ডব্লিউবি/জেবি)