ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধে প্রায় চার হাজার ভারতীয় সেনা বাহিনীর আত্মত্যাগের মূল্যায়নের কথা বলতে গিয়ে হুমকি শিকার হয়েছিলেন সাংবাদিক অঞ্জন রায়। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাকে এ হুমকি দেন। ‘অদ্ভূত এক দালাল’ শিরোনামের ওই স্ট্যাটাসের কথা তুলে ধরে তিনি শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন গত এপ্রিলে।
দিন পনের পর আবারও হত্যার হুমকি আসে চিঠিতে। রেজিস্ট্রি করা ডাকে পাঠানো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ১৩ এক চিঠিতে জানায়, তারা প্রথম আঘাতে যে ২৫ জনকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করে দেবেন তাদের মধ্যে অঞ্জন রায়ও আছেন। তাকে মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়। ওই চিঠিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ অন্যান্য বিশিষ্টজনদের নাম ছিল। ওই ঘটনায় শাহবাগ থানায় আবারও জিডি করা হয়। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কথা বলায় বারবার নানা মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অঞ্জন রায়।
তিনি বলেন, ‘একের পর এক হত্যার হুমকিতে আমি এবং আমার পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এসব ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পরও আমার নিরাপত্তায় কোনো ধরনের দৃশ্যমান ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এখন আমি পুরোপুরি নিরাপত্তাহীনতা ভুগছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিজের নিরাপত্তার কথা তুলে ধরে একটি আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর আবেদন করেন টকশো উপস্থাপক অঞ্জন রায়। বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন এই বিষয়ের দায়িত্বশীলের সাথেও, কিন্তু সেখানে আশা করার মতো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। যাচাই বাছাইয়ের দীর্ঘসূত্রিতায় বিষয়টি আটকে আছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অঞ্জন রায় বলেন, এই প্রক্রিয়া শেষ করে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে বেশ লম্বা সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে তার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, যা দেখে তিনি আশ্বস্ত হবেন।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এই সাংবাদিক আক্ষেপ করে বলেন, ‘জঙ্গিবাদীদের হামলায় একের পর এক মুক্তচিন্তার মানুষের প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। এতে মন্ত্রীরা খুব বেশি বিব্রত না হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই স্বস্তিতে থাকেন না। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন দেশের অভিভাবক। সরাসরি তার হস্তক্ষেপ ছাড়া এদেশে মুক্তচিন্তার মানুষ নিরাপদে বাঁচতে পারবে না। এ ব্যাপারে তার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন যখন উত্তাল, সেই সময় ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন আহমেদ রাজীব হায়দার। সেই থেকে শুরু। এরপর চলতি বছরেই পরপর চারজন খুন হলেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় খুন হন অভিজিৎ রায়, ৩০ মার্চ রাজধানীর বেগুনবাড়ীতে ওয়াশিকুর রহমান, ১২ মে সিলেটে অনন্ত বিজয় দাশ। সর্বশেষ গত ৭ আগস্ট হত্যাকা-ের শিকার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, যিনি নিলয় নীল নামে ব্লগ ও ফেসবুকে লেখালেখি করতেন।
(ঢাকাটাইমস/ ৯ আগস্ট/ এইচএফ/এমএম)