logo ২৮ এপ্রিল ২০২৫
সাংবাদিক প্রবীর সিকদার কারাগারে
ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
১৭ আগস্ট, ২০১৫ ১৯:০২:৪৬
image

ফরিদপুর: ফরিদপুরে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করে। আদালত আগামীকাল মঙ্গলবার মামলা শুনানির দিন ধার্য করেছে। 


সোমবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর ১নং আমলি আদালতের বিচারক মো. হামিদুল ইসলাম এ মামলার শুনানি আগামীকাল ধার্য করে অভিযুক্তকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।


ফেসবুকে লেখার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুনাম ক্ষুণ্নের অভিযোগ তুলে রবিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর কোতোয়ালী থানায় মামলাটি করা হয় (মামলা নং ২৮, তারিখ ১৬ আগস্ট ১৫, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা)।


মামলার বাদী ফরিদপুর পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা ও জজ কোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার পাল। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর ইন্দিরা রোডের নিজস্ব কার্যালয় থেকে প্রবীরকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পরে ফরিদপুরের পুলিশ তাকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোতোয়ালী থানায় নিয়ে যায়। 


মামলার বাদী ফরিদপুর পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার পাল তার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, প্রবীর সিকদার তার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১০ আগস্ট “আমার জীবন শংকা তথা  মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন” শিরোনামের একটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন- “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন: ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিনজনের অনুসারী-সহযোগীরা।”


এই পোস্টটি দেখে পড়ার পর আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে প্রবীর সিকদার ইচ্ছাকৃতভাবে গণমানুষের প্রিয় নেতা মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি সম্পর্কে মিথ্যা, অসত্য লেখা লিখে সেটি তার ফেসবুক থেকে পোস্ট করে মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন এবং লেখাটি জনসম্মুখে প্রকাশের মাধ্যমে উস্কানি দিয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে মন্ত্রী মহোদয়কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। এর ফলে মন্ত্রীর মানহানি ঘটেছে, যা একটি ফৌজদারি অপরাধ।


এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রবীর সিকদার উক্ত লেখাটি পোস্ট করার মাধ্যমে জনপ্রিয় রাজনীতিক ব্যক্তি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য, সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র মন্ত্রী সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার সুগভীর চক্রান্ত করেছে।  আমার প্রিয় নেতা মাননীয় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি সম্পর্কে এই লেখাটি পড়ে আমি সংক্ষুব্ধ হই এবং তাৎক্ষণিকভাবে লেখাটি আমার সহকর্মী সাক্ষী অ্যাড. সুবল চন্দ্র সাহা, অ্যাড. নারায়ণ চন্দ্র দাস, অ্যাড অসিত কুমার মজুমদার, অ্যাড. অনিমেষ রায়, অ্যাড জাহিদ ব্যাপারী, অ্যাড. জাহিদ হোসেন জয়, অ্যাড. প্রদীপ দাস লক্ষণসহ অন্যদেরকে দেখাই। তারাও এই বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি করেন। এরপর সাক্ষীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিই। আবেদনটি গ্রহণ করে আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে মর্জি হয়।”


সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের ভাই সুবীর সিকদার জানান, তার পরিবার প্রবীর সিকদারের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন, তার একটি পা না থাকায় চলাচল, প্রকৃতির ক্রিয়াকর্ম বিষয়ে নানা অসুবিধা রয়েছে। আমরা চাই তাকে অবিলম্বে মুক্ত করে পরিবারের হস্তান্তর করা হোক।


মামলার সাক্ষী অ্যাডভোকেট অনিমেষ রায় বলেন, যেহেতু মালার বাদী এই বারেরই আইনজীবী, সেক্ষেত্রে তার বিপক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে হলে বারের অনুমতি প্রয়োজন হবে।


এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূরুল আলম বলেন, কোনো আইনজীবী প্রবীর সিকদারের পক্ষে অনুমতির জন্য আমাদের কাছে আবেদন করেননি।


ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের দায়ের করা একটি মামলায় প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


তিনি বলেন, সোমবার সকালে ঢাকা থেকে তাকে ফরিদপুরে আনা হয়। সোমবার সন্ধ্যার প্রবীর সিকদারকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার এসআই মনির হোসেন বলেন, এ মামলায় অভিযুক্তকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এসময় আদালত মামলার শুনানি না করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।


মামলার বাদী অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার পাল জানিয়েছেন, আগামীকাল মামলার রিমান্ডের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।


প্রসঙ্গত, প্রবীর সিকদার বর্তমানে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি এর আগে সমকাল ও কালের কণ্ঠে কাজ করেন।


(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)