logo ১৮ মে ২০২৫
মালয়েশিয়ার অর্থায়নে উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্প অনিশ্চিত!
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১২:২৮:৫৯
image

ঢাকা: রাজউকের উত্তরা প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে ফ্ল্যাট প্রকল্প নিয়ে প্রাথমিক চুক্তি সই হওয়ার পরও পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে।এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হলেও তা বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখা যায়নি।রাজউকের কর্মকর্তারাও ‘উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট’ প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা স্বীকার করেছেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের খসড়া চুক্তি সই হলেও ‘আইনি ও ব্যয়’ সংক্রান্ত বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছে না সরকার।চুক্তির পর এরই মধ্যে পাঁচ বছর পার হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের অগ্রগতি নেই।এ ব্যাপারে কোনো আশার বাণীও শোনাতে পারেনি কর্মকর্তারা।


রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্রে জানা গেছে, উত্তরার ১৮ নং সেক্টরে মালয়েশিয়ার আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ‘বি’ ও ‘সি’ ব্লকে ১৬ তলা বিশিষ্ট ১০০টি অ্যাপার্টমেন্ট(ভবন)প্রায় ৮ হাজার ৪০০টি ফ্ল্যাট বানানোর উদ্যোগ নেয় সরকার।


এ জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ২৮৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। মালয়েশিয়া সরকারের বিনিয়োগ করা এ অর্থ  ৪২ মাসে ৪ কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা।


মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা স্বাক্ষরের জি টু জি ভিত্তিতে ৮ হাজার ৪০০ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের কথা রয়েছে। ‘এ’ টাইপের ৫২টি ও ‘বি’ টাইপের ৪৮টি মোট ১০০টি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার।


গত মাসে রাজউক এ সংক্রান্ত নথিপত্র চূড়ান্ত করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয় নথিপত্র ঘেটে বেশ কিছু ‘পর্যবেক্ষণ’ দিয়ে রাজউকে আবার সেই নথি ফেরত পাঠিয়েছে।


মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে কী আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের এক পদস্থ কর্মকর্তা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘অনেক বিষয় পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে অনেক বিষয় জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়। সে বিষয়ে জানতে আমরা মালয়েশিয়ার সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছি। আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই চিঠির উত্তর চেয়েছি আমরা। উত্তর আসলে মন্ত্রণালয়কে এ মাসের মধ্যেই ফিডব্যাক দিতে পারবো।’


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেক দূর। মন্ত্রণালয়কে আমরা ফিডব্যাক দিলে এটি যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং এর জন্য। এরপর এটি যাবে কেবিনেট কমিটি ফর গভমেন্ট পারচেইস (সিসিজিপি) এ। তারা এটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে বিষয়টি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।’


অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম টেন্ডার ছাড়া অন্য দেশের সরকারের সঙ্গে ফ্লাট নির্মাণে ড্রাপ্ট চুক্তি হয়েছে। এই জন্যই এটি নিয়ে এতো বেশি পরীক্ষা নীরিক্ষা।


তিনি জানান, কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমে ওপেন টেন্ডার দিতে হয়। এরপর যারা এই টেন্ডারে প্রতিযোগিতা করে তাদের মধ্যে থেকে একজনকে শর্তাবলী পুরণ সাপেক্ষে বাছাই করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে এটি করা হয়নি। ফলে সব কিছু চিন্তা-ভাবনা করেই এগুতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।


সূত্র জানায়, পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর আবাসন সমস্যা লাঘবে রাজধানি উন্নয়ন কর্তপক্ষ (রাজউক) নিজস্ব অর্থায়নে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ৯ হাজার ৩১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জুন মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্য ‘ঢাকার উত্তরায় ১৮ নং সেক্টরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠির জন্য অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি ২০১১ সালের নভেম্বরে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়।


সূত্র জানায়, এর আগে উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ‘এ’ ব্লকের ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল হয়েছে। কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি। সরকারি দলের দুই সাংসদ এনামুল হক ও নসরুল হামিদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজউক ওই চুক্তি করেছিল। সাংসদের সঙ্গে সরকারের ব্যবসা করা আইনে নিষিদ্ধ হলেও এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।


সূত্র জানায়, ২০১১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আবাসন ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে কয়েকটি প্রকল্প জি টু জি চুক্তির ভিত্তিতে বাস্তবায়নের আগ্রহের কথা জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিলে তাতে নীতিগত সম্মতি জানানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরায় ‘বি’ ও ‘সি’ ব্লকে ভবন নির্মাণে মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়। ওই চুক্তির আলোকেই ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করার কথা রয়েছে।


নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হলেও ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের যে দাম পড়বে তাতে ওই দুই শ্রেণির মানুষদের পক্ষে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হবে না। সব মিলিয়ে প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৩৫ টাকা।


এ হিসাবে ১২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৪২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, ১০৫০ বর্গফুটের দুই ক্যাটাগরির ফ্ল্যাট নির্মান করা হবে। এর মধ্যে এক ক্যাটাগরির ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা এবং আরেক ক্যাটাগরির ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ২৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই দামে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের পক্ষে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ। ফলে এসব ফ্ল্যাট উচ্চ বিত্তের মানুষদের হাতেই চলে যাবে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান জি এম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া জানান, দুই দেশের টেকনিক্যাল কমিটি এবং কমার্শিয়াল সমঝোতা কমিটি কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায় অর্থাৎ মূল্য, পেমেন্ট, বাস্তবায়ন সময় ইত্যাদি বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। এর খসড়া চুক্তির কপি বর্তমানে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আছে। তা আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে।


তিনি বলেন, আমরা যে আন্তর্জাতিক চুক্তিটি করেছি। তাতে দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী কোনো বিষয় বা দেশীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে এমন কোনো ইস্যু আছে কি না, আইন মন্ত্রণালয় তা যাচাই-বাছাই ও ভেটিং শেষে পূর্ত মন্ত্রণালয় ফেরত পাঠাবে।


এ ছাড়া মালয়েশিয়া সরকারও তাদের অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বারে ওই চুক্তিটি ভেরিফাই করাচ্ছে। ভেরিফিকেশন শেষে যদি যৌথ সমঝোতা হয়, তাহলে এটা যাবে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। এরপরই অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করব।


(ঢাকাটাইমস/১১সেপ্টেম্বর/এমএম/ এআর/ ঘ.)