logo ১৮ মে ২০২৫
বিএনপি এখন
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১১:৩১:৩৮
image


বিএনপির কোনো সাংগঠনিক পদে নেই তিনি, তবু বিএনপির রাজনীতিতে হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ। শত নাগরিক কমিটি নামে একটি সংগঠনের প্রধান তিনি। তবে ইদানীং বিএনপির নীতিনির্ধারণী নানা বিষয়ে কথা বলছেন। এমন সব বিষয়ে তার বক্তব্য আসছে যা নিয়ে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও অন্ধকারে।

হরতাল-অবরোধের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন এমাজউদ্দীন আহমদই। পরে বিএনপির পুনর্গঠনসহ নানা বিষয়ে নেতাদের মুখ থেকে কিছু না এলেও এ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। শেখ হাসিনার অধীনে হলেও বিএনপির নির্বাচনে যেতে আপত্তি নেই এমন বক্তব্যও কোনো নেতার মুখ থেকে নয়, এসেছে এই বুদ্ধিজীবীর কাছ থেকেই। এমাজউদ্দীন আহমদ সম্প্রতি এক আলোচনায় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটি থেকে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সসম্মানে বিদায় জানানো হবে।’

বিএনপিতে কথা উঠেছে, এমাজউদ্দীন আহমদের এমন বক্তব্য কি হঠাৎ বা তার নিজের কোনো কথা? গত ছয় মাসে তার বক্তব্য, বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব দিতে তাকে খালেদা জিয়ার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে নানা খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এ কারণে বিএনপি নেতারা এই বুদ্ধিজীবীর কথাটিকে ফেলে দিতে পারছেন না।

নিষ্ক্রিয় নেতাদের দীর্ঘ তালিকা

কদিন আগে ঘরোয়া আলোচনায় বিএনপি নেতা আমানুল্লাহ আমানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আন্দোলনের মাঠে এখন আর সামনে দেখা যায় না আপনাকে, কেন?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের মতো আর শরীরে শক্তি পাই না। দু-হাঁটু ধরে আসে। দাঁড়াতে পারি না। বয়স হয়েছে, চাইলেও আর রাজপথে নামার সুযোগ নেই।’ একই প্রশ্ন ছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের কাছে। তিনিও টেনে আনলেন একই অজুহাত। বললেন, ‘বয়স হয়েছে। এখন কি আর মাঠে নেমে মিটিং-মিছিল করা যায়?’

বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আশপাশে যারা সারাক্ষণ ভিড় করতেন সেই নেতাদের অনেকে এখন পাশে থাকা তো দূরে থাক দেশেই থাকছেন না। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে আছেন। কয়েকটি দেশ ঘুরে এখন তিনি আমেরিকায়। দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাও আছেন নিউইয়র্কে। সেখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দেশে নেই। গত জুলাইয়ের শেষ দিকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি। এখন সেখান থেকে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা অনেকটা হতাশার সুরেই বললেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেরই বয়স হয়েছে। নানা রোগশোকে তারা আর পেরে উঠছেন না। যখন তাদের সক্ষমতা ছিল তখন মাঠে সক্রিয় ছিল। এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া একের পর এক মামলা মোকদ্দমায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় নেতারা। এই বয়সে কারাগারে যেতে চান না কেউ। এ কারণে গা বাঁচিয়ে চলছেন।

তবে টানা প্রায় ৯ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে নেতা-কর্মীদের মধ্যেও যে হতাশা বাসা বেঁধেছে তা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে। নির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, খালেদা জিয়া আর তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ছাড়া দলের জন্য আন্তরিক লোকের ভয়াবহ সংকট এখন বিএনপিতে। নীতিনির্ধারক কিংবা জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের আর যে কজন ছিলেন তাদের কেউ অসুস্থ, কেউ জেলে আর কেউ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে মামলা-হয়রানির কারণে আত্মগোপনে আছেন। আর একটা ক্ষুদ্র অংশ রয়েছেন বিদেশে।

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি ভেতরে ভেতরে এতটা ছন্নছাড়া হয়ে পড়বে এমন ধারণা ছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বেরও। পরিস্থিতি এখন এতটাই বেগতিক যে, কখনো কখনো দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশনাই মানছেন না কেউ। জাতীয় কাউন্সিল করার ব্যাপারে একাধিকবার ঘোষণা দেওয়া হলেও তা হচ্ছে না। তৃণমূলে দলকে চাঙ্গা করতে কমিটিগুলোকে পুনর্গঠনের কথা বলা হলেও তা কানে তুলছেন না কেউ। যে যেভাবে পারছেন দলকে বিকিয়ে দিয়ে ফায়দা লুটছেন। দলের অঙ্গ সংগঠন কিংবা তৃণমূলের পদ-পদবি নিয়েও ভেতরে ভেতরে যাচ্ছেতাই চলছে।

দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম একজন সদস্য বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে এখন দেখা করতে হলে তাকে ঘিরে থাকা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করতে হয়। যারা তাদের ম্যানেজ করতে পারেন তারাই দেখা পান। তাছাড়া বিএনপি এখন কে চালাচ্ছেন তা নিয়েও সন্দেহ আছে। দলের একদল নেতা-কর্মী তাকিয়ে থাকেন যুক্তরাজ্যের দিকে। সেখানে আছেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার অনুসারী-অনুগামীরা মনে করেন খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে। আগামীতে বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পেলে তারেক রহমানই হবেন মূল কা-ারি। তাই আগে থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ-সম্পর্ক ঠিক রাখার চিন্তা করছেন তারা। তবে এ নিয়ে স্বস্তিতে নেই দলের প্রবীণ নেতারা। তাদের মধ্যে অনেকে এখনো খালেদা জিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছেন।

দলের নানা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ভেতরে ভেতরে বেশ অগোছালো হয়ে পড়েছে দলটি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। দলের মুখপাত্র হয়ে যারা কাজ করছেন তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে অসঙ্গতিও প্রমাণ করে দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বেকায়দায় অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধরা

জ্যেষ্ঠ নেতাদের সসম্মানে বিদায় জানানো হবে―এমাজউদ্দীন আহমদের এই বক্তব্য নিছক নিজের কথা নয়। বিএনপি প্রধানও চান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ নেতারা স্বেচ্ছায় দল ছেড়ে দিন। তাছাড়া দুর্নীতিসহ নানা কারণে বিতর্কিত নেতাদের প্রতি অনীহাও রয়েছে বেগম জিয়ার। সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনে যারা রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেননি-তাদেরও তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দল পুনর্গঠনে হাত দিলে ওই নেতাদের ভাগ্য বিপর্যস্ত হতে পারে। তাই অনেকে আগেভাগেই দল ছাড়তে পারেন। তারা নতুন কোনো দল করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলবেন কি না তারও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে ফাঁস হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যের আলাপচারিতায় দল নিয়ে তাদের হতাশা ফুটে উঠেছে। নতুন কোনো ঝামেলায় না গিয়ে কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই দল ছেড়ে নিরিবিলি জীবনযাপন করতে আগ্রহী। স¤পদ রক্ষা আর সরকারের বিরাগভাজন না হওয়ার জন্যই এ ধরনের চিন্তাভাবনা। আবার কেউ কেউ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শে নতুন দলও করতে চান। অবশ্য এতে সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থার মদদ রয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে।

সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান আড়াইহাজারের এক নেতার কথোপকথন ইউটিউবে ফাঁস হয়। এ সময় তিনি আলাপকালে দল ছেড়ে নিরিবিলিভাবে বসবাস করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে নিরিবিলি জীবনযাপন করার চিন্ত করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি এখন যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে উঠে দাঁড়াতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। উনি (খালেদা জিয়া) যে অবস্থায় পতিত হয়েছেন, সেখান থেকে উঠতে পারবেন কি না মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছে।’ জানা যায়, সিনিয়র নেতাদের ফাঁস হওয়া কথাবার্তায় বিব্রত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠে বিএনপিকে একটি সক্রিয় জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চিন্তা চলছে।

আটকে আছে দলের সম্মেলন

প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পর ‘ভারমুক্ত’ হয়নি বিএনপির মহাসচিব পদটি। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তিন বছর পর কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ বছরেও বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। নানা সমস্যার কথা জানিয়ে বারবার সময় চেয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে। কাউন্সিল না হওয়ায় দলের গুরুত্বপূর্ণ ‘মহাসচিব’ পদেও স্থায়ী কাউকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

২০১১ সালের ১৬ মার্চ বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ‘ভারপ্রাপ্ত’ মহাসচিবের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। সেই থেকে সবক্ষেত্রে মহাসচিবের মতো দায়িত্ব পালন করলেও আজ পর্যন্ত ভারমুক্ত করা হয়নি তাকে। তিনি এখন চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘বিএনপির মতো একটি দল দিনের পর দিন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দিয়ে চলবে, এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। দলের হাইকমান্ডের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি অনেক কিছু নির্ধারণে জরুরি। তাই এই পদে যতদ্রুত একজন যোগ্য ও পূর্ণ মহাসচিব দেওয়া হবে দল পুনর্গঠন ততটাই সহজ হবে।

দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ ছড়াচ্ছে নতুন হতাশা

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর এক দফা দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ভেঙে দেওয়া হয় ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন জেলা কমিটি। আহ্বায়ক কমিটি করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল, দলের নেতৃত্বে সক্রিয় নেতাদের এনে প্রস্তুত হয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাবে বিএনপি।

কিন্তু এই প্রক্রিয়া আগায়নি দ্বন্দ্ব-সন্দেহ-অবিশ্বাসের কারণে। আর দল ঢেলে সাজানোর ঘোষণা বাস্তবায়ন না করেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে দেশজুড়ে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন খালেদা জিয়া। অপ্রস্তুত বিএনপি চালিয়ে যেতে পারেনি কর্মসূচি। প্রথম দুই-একদিন পালিত হলেও ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসে কর্মসূচি। এই অবস্থায় রাজনৈতিক সম্মান বাঁচাতে অবরোধের পাশাপাশি হরতালও দেয় বিএনপি। কিন্তু দুটো কর্মসূচি একাধারে অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পরও তা প্রত্যাহার পর্যন্ত করেনি দলটি।

এই অবস্থায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে শত নাগরিক কমিটির প্রধান এমাজউদ্দীন আহমদ আবারও বললেন বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর কথা। পরে একই কথা বলেছেন অন্যরা। সব শেষ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়াও। তবে ‘পুনর্গঠনের নামে পকেট কমিটি’ মেনে নেওয়া হবে না-দলের চেয়ারপারসনের এমন বক্তব্যের পর দলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন এবং কাদেরকে উদ্দেশ্য করে এই বক্তব্য দিলেন খালেদা জিয়া।

তাহলে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা কি নির্দেশনা মতো কাজ করছেন না? দলে তৈরি হলো নতুন সন্দেহ-সংশয়-অবিশ্বাস। কারাবন্দি, গ্রেপ্তার-মামলা ও হয়রানির ভয়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের ‘পকেট কমিটি ও ‘কমিটিবাণিজ্য’ করার চেষ্টা, পাল্টাপাল্টি কমিটি ও কেন্দ্রে অভিযোগের পাহাড়, নির্দেশনা সত্ত্বেও ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নেতৃত্বে না আনা, পবিত্র হজ, ঈদুল আজহা, বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে সফলভাবে দল পুনর্গঠন কাজ স¤পন্ন করা বিএনপির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমাজউদ্দীন আহমদ জানান, খালেদা জিয়ার চলতি মাসেই লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফেরার পরপরই দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। বিশেষ করে বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও অলি আহমদসহ অন্যান্য দল থেকে যেসব পুরনো নেতার দলে ফেরার কথা রয়েছে তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন এ প্রক্রিয়াটি ইতিমধ্যেই অনেক দূর এগিয়েও নিয়েছেন।

ফখরুলের ফেরা অনিশ্চিত, বিদেশে বসেই খোকার হুঙ্কার

দীর্ঘদিন কারাভোগের পর গত জুলাইয়ে জামিনে বের হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাড়িতে বসেই সময় কাটিয়েছেন। এমনকি ঈদুল ফিতরে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতেও যাননি তিনি। পরে ২৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য পাড়ি দেন সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এখন সেখানেই আছেন। কবে চিকিৎসা শেষ হবে আর কবে তিনি ফিরে আসবেন এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া অতীতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই চিকিৎসার নাম করে বিদেশ গেছেন। কিন্তু কবে ফিরবেন সে ব্যাপারে আগ্রহ কম দেখা গেছে।

বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়ে এখনো সেখানে আছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডনে বসেই দলের নানা কর্মসূচি পরিচালনা করছেন বলে দলীয় সূত্র জানায়। বিশেষ করে বিদেশে বিএনপির শাখাগুলোকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে জিয়া পরিবারের এই উত্তরাধিকারীকে।

ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখনো দেশে ফেরেননি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। আছেন নিউইয়র্কে। মাঝেমধ্যে যাচ্ছেন লন্ডনে। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে দলের বিভিন্ন ঘরোয়া সভায় যোগ দিচ্ছেন। বিদেশে বসেই ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন সরকার পতনের।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘বিদেশে বসে এসব হুঙ্কার করে কী লাভ যদি দেশে কোনো কর্মসূচি না থাকে? বিদেশে বসে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা তো আকাশ কুসুম। যারা এটা করছেন তারা নিজেরাও জানেন এটা দেশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো সাংগঠনিক প্রভাব ফেলবে না। গণমাধ্যমের কল্যাণে এসব বক্তব্য সবার সামনে, এটুকুই যা।’

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা-কর্মীদের অনেকেই সুবিধাবাদী বিদেশগামী নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ। দলের বিপদের সময় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের পাশে না থেকে যারা গা বাঁচানোর জন্য বিদেশে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন তাদের বিএনপির রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন তারা। কারণ যদি অসুস্থই হন তাহলে পদ-পদবি আঁকড়ে না থেকে সেটা ছেড়ে দিলেই পারেন। তাদের জায়গায় তখন তরুণ নেতৃত্ব জায়গা করে নেবে। অথচ তারা সক্রিয়ও হচ্ছেন না, পদও ছাড়ছেন না। এতে নতুন নেতৃত্ব বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

কর্মসূচি পালনের ক্ষমতা হারিয়েছে দল?

গত ২৭ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসনের অজান্তে তার নামে জয়পুরহাট বিএনপি সভাপতির মুক্তি দাবি করে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। অথচ সেদিনই সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও সে স¤পর্কে কিছু বলা হয়নি। অতঃপর একই দিন মাঝরাতে সেই বিবৃতি প্রত্যাহার করে নিয়ে পর দিন ২৮ আগস্ট আবারও তা পাঠানো হয় প্রকাশের জন্য। এরপর ২ সেপ্টেম্বর দিনের বেলায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করার পর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাতের বেলায় তা পরিবর্তন করে ৬ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয়। এসব ঘটনার সিংহভাগই নজরেও আসে না খালেদা জিয়ার। এমন মন্তব্য দলের শীর্ষ নেতাদের। তবে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাননি বেশির ভাগ নেতা।

চলতি বছরের শুরুতে টানা অবরোধ এবং পরে এর পাশাপাশি হরতাল দিয়ে তা চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি রাজপথে অনেকটাই চুপচাপ। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গত ৬ সেপ্টেম্বর সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দেওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার খোরাক হয়। বিএনপি কি আদৌ রাজপথে নামতে পারবে? এ নিয়ে সংশয়-সন্দেহের কথা বলেন খোদ দলেরই বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

কর্মসূচির দিন এই সংশয় সত্য হয়েই দেখা দিল। দুই একটি জেলায় বিএনপি এবং তার শরিক দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল, সমাবেশের চেষ্টা করলেও অন্য কোথাও তাদের দেখাই যায়নি। খোদ রাজধানীতেও কোথাও জড়ো হননি নেতা-কর্মীরা। এমনকি দলীয় কার্যালয়ও দিনভর বলতে গেলে ছিল ফাঁকা।

জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, শনিবার রাতে রবিবারের বিক্ষোভের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়। কিন্তু বিএনপির তরফ থেকে কোথায়, কখন মিছিল হবে তা না জানানোর কারণে তারা বিক্ষোভ করতে পারেননি।

অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাবি করেন, তার জানা মতে ঢাকার পাঁচটি এলাকায় মিছিল হয়েছে। তাতে উপস্থিতিও ভালো ছিল। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ৫২টি থানা। প্রায় তিনশ পুলিশ ফাঁড়ি। এখানে পুলিশ তো গায়ে গায়ে লাগানো। তার মধ্যেও উত্তরখান, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচরে মিছিল হয়েছে আমাকে তা জানানো হয়েছে।’

২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এই সময়কে বলেন, ‘মিছিল ও সমাবেশের জন্য আমরা প্রস্তুত থাকলেও বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। দলের চেয়ারম্যানসহ কারো সঙ্গে যোগাযোগও হয়নি।’

কর্মসূচির আগের রাতে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে বিক্ষোভে থাকার অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির গুলশান অফিস থেকে টেলিফোন করা হয়। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকেও টেলিফোনে বিক্ষোভে শরিক হওয়ার জন্য বলেন কর্মসূচির সমন্বয়কারী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান। তবে কল্যাণ পার্টির কোন নেতা-কর্মী সাড়া দেয়নি এই আহ্বানে। দলের মহাসচিব আমিনুর রহমান রবিবার দুপুরের দিকে বলেন, ‘বিক্ষোভের স্থান ও সময় কিছুই জানানো হয়নি। আমরা অপেক্ষায় আছি।’

এসব নানা ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি কি সাংগঠনিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত যে, কোনো একদিন সারা দেশে একটি কর্মসূচিও পালন করতে পারবে না? জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি কোনো বিপর্যয়ে পড়েনি। এখন যেটা আপনারা সমস্যা হিসেবে দেখছেন, এটা হয়েছে সরকারি দলের দমনপীড়নের কারণে। নেতা-কর্মীদের মনোবল ঠিকঠাক আছে। দেশে যদি সরকার সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করে বিরোধী দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয় তাহলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা নিজেদের অবস্থান জানান দেবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো শেষ হয়ে যাওয়ার দল নয়। অনেকে বলেন, বিএনপি শেষ হয়ে গেছে। এটা কখনই সম্ভব নয়।’

ভাঙনের সুর পদে পদে

বিএনপিতে এখন একটি কথাই ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে, ভাঙন। দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির জন্য নাকি কেউ কেউ নানা মহলের সঙ্গে আঁতাত করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেও এ বিষয়ে নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘কেউ দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইবেন না।’ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দলের মধ্যে পকেট কমিটি করার সুযোগ নেই। দলের ভাঙন ঠেকাতে দুশ্চিন্তায় আছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা আছে, বিএনপিতে সুবিধাবাদী নেতার সংখ্যা কম নয়। অতীতে তারা সুবিধা বুঝে দল থেকে অন্য দলে ভিড়েছে। আবার বিএনপিতে ফিরেছে। তারা যে আবারও নতুন কোনো বিস্ময় সৃষ্টি করবে না এটা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিতি রয়েছে বিএনপির এমন অর্ধশতাধিক সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন দলটির বাইরে।

২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ কোনো কমিটিতেই তাদের রাখা হয়নি। একই অভিযোগে যাদের বহিষ্কার করা হয় তাদেরও ফিরিয়ে আনা হয়নি। যারা কমিটিতে আছেন তাদেরও কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। এদেরও রয়েছে ভিন্ন প্লাটফর্ম করার চিন্তাভাবনা। ইতিমধ্যে তারা কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের একটি অংশের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে তাদের। সময় সুযোগ এলে জিয়ার আদর্শে তারাও নতুন দল গঠন করবেন।

এদিকে দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন বিএনপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম সারির নেতা। জিয়ার আদর্শের কথা বলে তার নেতৃত্বে বিএনপির একটি অংশ আলাদা হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিলুপ্ত করা হতে পারে বিকল্প ধারা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন নেতা বলেন, ‘দলে যারা ডিগবাজি নেতা বলে পরিচিত তাদের নিয়ে দল কখনই চিন্তিত নয়। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ দলছুট হবে না। হলে আগেই হতো।’ তিনি বলেন, ‘যারা প্রকৃতভাবে বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, শহীদ জিয়ার আদর্শকে লালন করে তারা কখনই দল ছেড়ে যাবে না, যত বিপদই আসুক।’

কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই বিচ্ছিন্ন করে রাখছেন খালেদাকে?

বিএনপি ও শরিক জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার আলাপ-আলোচনা খুব একটা হয় না। এমনকি প্রয়োজনের সময়ও নাকি অনেক সময় জোটনেত্রীর দেখা পান না শরিকরা। এমন অভিযোগ শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের। বিএনপির নির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বেগম জিয়ার দূরত্ব সৃষ্টি করতে কাজ করছে তার আশপাশে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে। তাদের জন্য কেউ স্বস্তিতে দলীয় প্রধানের সঙ্গে কথা তো দূরে থাক দেখাও করতে পারেন না। এরা খালেদা জিয়ার আশপাশে থেকে তাকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করছেন।

এদের কারণেই মূলত সৌদি আরব ও লন্ডন সফরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে বিএনপি হাইকমান্ডকে। মিডিয়ায় এত লেখালেখির পরও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সম্প্রতি সব প্রক্রিয়া স¤পন্ন হওয়ার পর দল ও জোট পুনর্গঠন-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে বিএনপি হাইকমান্ডকে।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতা দীর্ঘ প্রচেষ্টা ও অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে এ প্রক্রিয়াটি স¤পন্ন করেছিলেন। কিন্তু এখন তা ভেস্তে যাওয়ার পথে। গুলশান কার্যালয়ের বেশির ভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারীই এ ব্যাপারে অবগত। এমনকি কতিপয় বিতর্কিত কর্মকর্তা ও সাবেক আমলা-নেতাদের কর্মকা-ে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও চরম বিরক্ত ও অতিষ্ঠ। কিন্তু চাকরি যাওয়ার ভয়ে তারা মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এদিকে বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হলেও নিজের দলের ভেতরের ঐক্যই বিএনপি কতটা ধরে রাখতে পারছে, সেটি বিবেচনা করেই কূল পাচ্ছেন না দলীয় নেতা-কর্মীরা।

মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীরা

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রতিবাদে সরকার পতন আন্দোলনে বারবার ডাক দেওয়ার পরও মাঠে নামেনি বিএনপি নেতা-কর্মীরা। সরকারের এক বছর পূর্তির দিন থেকে টানা তিন মাসের আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বাধ্য হয়ে পিছু হটতে হয়েছে নেতা-কর্মীদের সক্রিয়তার অভাবে। এমনকি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে দলীয় প্রধানের পাশে ছিল না কেউ। যে কারণে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাড়ি থেকেই সেদিন বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া। অথচ তার বাড়ি থেকে হাঁটার দূরতে বিএনপির প্রায় অর্ধডজন নেতার বাড়ি। যারা বিএনপির সময় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ছিলেন। এতসব ব্যর্থতার পেছনে নেতা-কর্মীদের যুক্তি একটাই, সরকারের দমনপীড়ন। মামলায় জড়িয়ে হয়রানি।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, ‘বিএনপিকে মামলা দিয়ে জর্জরিত করে ফেলেছে সরকার। তবু জনপ্রিয়তা কমেনি। মাঠ পর্যায়ে কোটি কোটি কর্মী রয়েছে। কাজেই মামলা আরো দিলেও সমস্যা নেই।’

বড় ভয় খালেদা-তারেককে নিয়ে

মামলায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ নির্বাহী কমিটির নেতাদের মধ্যে ভবিষ্যতে দুশ্চিন্তা থাকলেও বড় ভয় বর্তমান দলীয়প্রধান ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে। তাদের শঙ্কা সরকার বিচারাধীন মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠাবেন। আর তারেক রহমানের ক্ষেত্রেও একই জুজু দেখিয়ে তাকেও দেশে ফিরতে দেবে না। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতৃত্বে হাল ধরার মতো নেতার সংকট দেখা দিতে পারে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর বিচারকাজ ত্বরান্বিত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- গ্যাটকো, নাইকো, বড়পুকুরিয়া, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা। এর মধ্যে নি¤œ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার বিচার চলছে। সম্প্রতি গ্যাটকো, নাইকো মামলা বাতিল চেয়ে খালেদার করা আবেদন হাইকোর্টে খারিজ হওয়ায় নি¤œ আদালতে এখন মামলাগুলোর বিচার শুরু হবে।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ১৭৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলায় তারেক রহমানের সাজা হওয়ার আশঙ্কা করছেন নেতা-কর্মীরা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হবে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও ¯পর্শকাতর মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বিএনপির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাদের নিয়েও চিন্তিত বিএনপির নীতিনির্ধারক মহল। তারা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু প্রমুখ।

আন্দোলনের চিন্তা শিকেয় তুলেছে বিএনপি

এখন আপাতত আর আন্দোলন নিয়ে ভাবছে না বিএনপি। তাই নতুন করে আন্দোলনে নামার আগে সংগঠন গুছিয়ে মাঠে নামতে চান বিএনপিপ্রধান। কিন্তু সংগঠন গোছানো নিয়েও আছে আতঙ্ক। এক বছর আগেও বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে নানা সময় জোরাল আন্দোলনের কথা বলা হলেও এখন বারবার দল না গুছিয়ে আন্দোলনে নামা হবে না এমন ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

নেতারা বলছেন, দলের যে হাল তাতে আন্দোলন জমানো যে সম্ভব নয়, তা বুঝে গেছেন তারা। আবার দুই দফা আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর কোন মুখে একই কথা বলবেন, তাও ভেবে পাচ্ছেন না তারা। এ কারণে নেতা-কর্মীদের আস্তে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।-সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।