logo ১৮ মে ২০২৫
ভর্তিযুদ্ধ তবু আসন খালি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে!
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১২:৫৮:৩৫
image

ঢাকা:  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল আমিন আজাদ। এইচএসসি পাসের দ্বিতীয় বছর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে তিনি এ বিভাগে ভর্তি হন। প্রথম বছর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে। দ্বিতীয় বার পছন্দের বিভাগ পাওয়ায় পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ ছেড়ে যান। ফলে ওই বিভাগের আসনটি শূন্য হয়ে যায়।


তীব্র ভর্তি যুদ্ধ এবং আসন সংকট সত্ত্বেও বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর বেশ কিছু আসন শূন্য থেকে যায়। সরকার একের পর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়ে গেলেও সেগুলোর আসনও পূরণ হচ্ছে না শিক্ষার্থীর অভাবে।


বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে সর্বমোট ১৯ হাজার ৭৯৫ টি আসন শূন্য ছিল। এর বেশিরভাগই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্য ৩৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি ৩২৭টি। ২০১৪ সালের হিসাব এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আর বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭টি। আর নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই সংখ্যা বেশি।


তবে আসন শূন্য বেশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন শূন্য ছিল সবচেয়ে বেশি ১১২ টি। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসনের বিপরীতে শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতা করে। আর ৭৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই স্তরে শূন্য ছিল এক লাখেরও বেশি আসন। সবমিলিয়ে শূন্য আসন সংখ্যা প্রায় দেড় লাখের মতো। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।


ইউজিসির হিসাবে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা ৩৮৯ জন। ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যলয় ২০১৩ সালে অতিরিক্ত সাতজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।


জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, নানা কারণে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন শূন্য থাকে। এর অন্যতম হচ্ছে পছন্দমতো বিভাগে ভর্তি হতে না পারা। অনেকেই পরের বছর অপেক্ষাকৃত ভালো বিষয়ে সুযোগ পেলে চলে যায়। ফলে আগের আসনটি শূন্য হয়ে যায়। এ সমস্যার একটি সমাধান ছিল গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি ব্যবস্থা। এটা চালু করা গেলে একসঙ্গে ভর্তির সুপারিশ যেত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে আসন শূন্য থাকত না।


বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে অনার্স প্রথম বর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন সরকারি কলেজে আসন ছিল ৬ লাখ ৫১ হাজার ১৭৮টি। বাকি ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ২২৪টি। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েই আসন শূন্য ছিল ১৯ হাজার ৪৬৮টি। উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ৫৭ হাজার ৮৫৮ জন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া থাকে না। সেখানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাকেই আসন সংখ্যা বিবেচনা করা হয়।


৩২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে শূন্য ছিল ৩২৭ আসন।  এ বছর অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন শূন্য ছিল না। এর আগের বছর ৮৯টি আসন শূন্য ছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শূন্য ছিল ১১২ টি আসন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আসন শূন্য ছিল ২৫টি। বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয় আসন শূন্য ছিল তিনটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আসন খালি ছিল তিনটি। মাওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আসন শূন্য ছিল ৩৫টি।


শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আসন শূন্য ছিল পাঁচটি। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আসন শূন্য ছিল ১০টি। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আসন শূন্য ছিল সাতটি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আসন শূন্য ছিল ৬৮টি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আসন শূন্য ছিল ১২টি। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় আসন খালি ছিল ২টি। বরিশাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আসন খালি ছিল ৪৫টি। মোট ৩২৭টি আসন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খালি ছিল।


(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/এমএম/ডব্লিউবি)