logo ২৪ এপ্রিল ২০২৫
অবৈধ লেনদেনের মোক্ষম উপায় বিকাশ
সৈয়দ বাকের, ঢাকাটাইমস
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১২:১৯:১৫
image

ঢাকা:  বছর দুয়েক আগে গোপন কোড দেখালে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা হাতে পাওয়া যেত। সময়ের সাথে সাথে হুন্ডির ধরণ পাল্টেছে। এখন আর কোড দেখাতে হয় না। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বদৌলতে  টাকা আপনা আপনিই ঘরে পৌঁছে যায়। এক্ষেত্রে টাকা লেনদেনে ব্যবহার করা হচ্ছে দ্রুত সময়ে টাকা পাঠাতে বহুল জনপ্রিয় মাধ্যম ‘বিকাশ’কে। এমনকি দেখা গেছে, ফেসবুকসহ অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে তা ফিরে পেতে বিকাশে টাকা পাঠাতে হচ্ছে হ্যাকারের মোবাইলে।


সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরাসারি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন না হওয়া, এজেন্ট ভিত্তিক লেনদেন এবং লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে অসাধু ব্যক্তি ও ব্যবসায়িরা এ সুযোগ নিচ্ছেন। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি মুক্তিপণ আদায়, ব্লাকমেইলিং,  জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতাসহ  নানা সন্ত্রাসী কাজে  অর্থ লেনদেনে  মোক্ষম মাধ্যম হিসেবে বিকাশকে ব্যবহার করা হচ্ছে ।


সাধারণত ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা হাতে পেতে  এক-দুদিন সময় লাগে। অথচ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে তা পাওয়া যায় দু-চার মিনিটে। আর এ কাজেই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বিকাশ।একইসাথে খরচও প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কম লাগে।


বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব মতে, দেশে পাঠোনো মোট রেমিট্যান্সের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আসে হুন্ডির মাধ্যমে। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে এসব টাকা অবৈধ পথে দেশে প্রবেশ করে।


খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসা প্রায় পুরোটাই লেনদেন হচ্ছে বিকাশে। এক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরত হুন্ডি ব্যবসায়ি প্রবাসীদের থেকে টাকা গ্রহণের পর তা মোবাইল বা ইমেইলে তা দেশে থাকা এজেন্টকে জানিয়ে দেন। তারপর ওই এজেন্ট টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন।


একইভাবে হ্যাকাররাও নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যববহার করছে বিকাশকে। দেখা গেছে, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তা ফিরিয়ে দিতে মোটা অংকের অর্থ আদায় করছেন। নির্দিষ্ট নাম্বারে দাবিকৃত টাকা বিকাশ করলেই অ্যাকাউন্ট ফেরত দেয়া হচ্ছে ।


মোবাইল ব্যাংকিং দেখভালে নিযুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বিকাশে চাইলে যে কেউ টাকা পাঠাতে পারে। এ সুযোগটাই হুন্ডি ব্যবসায়ি ও হ্যাকাররা নিচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সরাসরি অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন হয়। কিন্তু বিকাশে টাকা লেনদেনে অ্যাকাউন্ট লাগে না, এজেন্ট লাগে। এখন কে-কোথায় টাকা পাঠাচ্ছে সে তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। তথ্য সংরক্ষণের বাধ্যবাদকতা না থাকার সুযোগে শুধু বিকাশে হুন্ডির টাকা লেনদেন হচ্ছে তা নয়, জঙ্গি অর্থায়নসহ নানা সন্ত্রাসী কাজে বিকাশকে ব্যবহার করা হচ্ছে।


বিষয়টি টের পেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে  পাঁচ হাজারের বেশি টাকা লেনদেনে ছবি তোলার উদ্যোগ নিতে বলেছিল। কিন্তু এতে বাদ সাধে বিকাশ।


এ বিষয়ে বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরে ওই কর্মকর্তা জানান, ছবি তোলার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে  স্টেকহোল্ডারদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল বিকাশ।  ব্রাক ব্যাংকের এ সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটির দাবি ছিল, তাদের এজেন্টদের পক্ষে ছবি তুলে রাখা সম্ভব না। এ আপত্তির প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা স্থগিত করে।


তিনি জানান, বিকাশ ছাড়া অন্য সব মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে লেনদেন করতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লাগে। তাই বিকাশে লেনদেনে তথ্য সংরক্ষণে আলাদা ব্যবস্থা প্রয়োজন। এমনটি করা গেলে শুধু হুন্ডি যে কোন অবৈধ কাজে বিকাশের ব্যবহার বন্ধ হতো। কিন্তু ব্যবসা কমে যাওয়ার ভয়ে বিকাশ কর্তৃপক্ষ তাতে আপত্তি জানিয়েছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিকাশ নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে সন্দেহজনক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য  (এসটিআর) প্রদান করে থাকে। এজন্য এজেন্টদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত  ‘এসটিআর ফর্ম’ দেওয়া আছে । এজেন্টরা যদি কোন লেনদেন সন্দেহজনক মনে করে সেক্ষেত্রে তারা ফর্মটি পূরণ করে বিকাশ দেওয়ার পর তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এটি একটি  চলমান প্রক্রিয়া।


তবে খোদ রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বিকাশ এজেন্টদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে, অধিকাংশই এসটিআর ফর্ম কি চেনেন না। এমনকি যারা চিনেন তারা ঠিকমত পূরণ করে তা বিকাশের পাঠান না। ফলে হুন্ডিসহ নানা অবৈধ কাজে বিকাশকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর তা জেনেও এক প্রকার চোখ বুজে আছে বিকাশ কর্তৃপক্ষ।


প্রসঙ্গত, ব্র্যাক ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের মানি ইন মোশনের যৌথ উদ্যোগ বিকাশের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। মোবাইলে লেনদেন সেবা প্রদানকারীর প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান গ্রাহক প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ।


(ঢাকাটাইমস/১৪ সেপ্টেম্বর/এসবি/এআর/ ঘ.)


বিকাশে অভিনব প্রতারণা, তৃতীয় কিস্তির জন্য চোখ রাখুন ঢাকাটাইমসে


অভিনব প্রতারণা, পাশে থাকছে না বিকাশ