এবার শিশুর মুখে সেফটিপিন লাগিয়ে নির্যাতন
সাইফুর তালুকদার, ঢাকাটাইমস
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১২:০০:১৬

সিলেট: সিলেটে শিশুদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন কোনোভাবেই যেন থামছে না। সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁও এলাকায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয় ১৩ বছরের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে। এবার সিলেটের জৈন্তাপুরে ১৪ বছরের এক শিশুকে নির্যাতনের সময় যাতে চিৎকার না করে সেজন্য তার মুখে সেফটিপিন লাগিয়ে চালানো হয় পৈশাচিকভাবে নির্যাতন।
শুধু সেফটিপিন নয় পিটিয়ে তার হাত ভেঙে দেয়া হয়েছে। এমনকি নির্যাতনের সময় স্টিলের গ্লাস গরম করেও ছ্যাকা দেয়া হয় তার শরীরে। একজন কিংবা দুইজন নয় মহিলাসহ পাঁচজন মিলে একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয় ওই শিশুর ওপর।
শিশু নির্যাতন নিয়ে সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায় তোলপাড় চলছে। ছেলের ওপর লোমহর্ষক নির্যাতনের বিস্তারিত ঘটনা বলতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যান তার পিতা। এ ঘটনাকে টাকার বিনিময়ে রফাদফার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী আসামি পক্ষ। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিশুর পিতা বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে, এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় জৈন্তাপুর থানা পুলিশ মামলার এজহারনামীয় আসামি হানিফা বেগমকে শনিবার দুপুরে গ্রেপ্তার করে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জৈন্তাপুর থানার ঘাটেরছটি যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন। পেশায় তিনি একজন মৎসজীবী। প্রায় সময় মামলার এজহারনামীয় আসামি আব্দুল হান্নান ওরফে বেন্ডাই তার নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যান। এজন্য মৎসজীবী আবুল হোসেন ১৪ বছরের শিশু কামরুল তাদেরকে নৌকা নিয়ে যেতে নিষেধ করলে তার ওপর ক্ষেপে যান আব্দুল হান্নান গংরা।
১৩ সেপ্টেম্বর রবিবার রাত ৮টার দিকে যাত্রপুর গ্রামের আজির উদ্দিনের বাড়ির সামনে দিয়ে পিতার জন্য হাওরে খাবার নিয়ে যাচ্ছিল কামরুল। এসময় আব্দুল হান্নান ও হানিফা বেগম কামরুলকে আটক করে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। হাত-পা বেঁধে সেখানে ঘণ্টাব্যাপী তার উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। সেসময় নির্যাতন সইতে না পেরে কামরুল চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকার বন্ধ করে রাখতে মুখে সেফটিপিন আটকিয়ে স্টিলের গ্লাস গরম করে পিঠের মধ্যে ছ্যাকা দেয়া হয়।
খবর পেয়ে কামরুলের পিতাসহ আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জৈন্তাপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে শনিবার দুপুরে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির পিতা মো. আবুল হোসেন (৪৫) বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার জৈন্তাপুর থানায় মামলা (নং-৫) দায়ের করেন।
মামলার এজহারনামীয় আসামিরা হচ্ছেন- আব্দুল হান্নান ওরফে বেন্ডাই, হানিফা বেগম, আব্দুল আলী, হেলাল উদ্দিন, আজির উদ্দিন। আসামিরা জৈন্তাপুর থানার ঘাটেরছটি যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা।
জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিউল কবীর ঢাকাটাইমসকে বলেন- শিশু কামরুলকে নির্যাতনের ঘটনার মূল হোতা হানিফা বেগমকে পুলিশ ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। আর অবশিষ্ট আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী শাহেদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, হানিফার নেতৃত্বেই কামরুলকে নির্যাতন করা হয়েছে। এছাড়াও এ ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে হানিফার তিন ভাই ও স্বামী। তারা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। পুলিশ তাদেরকে হন্য হয়ে খুঁজছে। আর ঘটনাটিও আমাদের কাছে পরিষ্কারও হয়েছে।
নৌকা নিয়ে বিরোধের জের ধরেই কামরুলকে পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে বলেও জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।
কামরুলের পিতা আবুল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমার ছেলেকে নির্যাতন করে হাত ভেঙে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ছেলের ইচ্ছার কারণে আমরা তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। আজ সোমবার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করবো।
(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/এসটি/জেবি)