ঢাকা: সম্প্রতি রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে। এসব ঘটনায় কয়েকজন ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। তবে এসব ঘটনার মুল আসামিদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে না পারায় ডাকাতির ঘটনা একের পর এক বেড়ে চলেছে। তাই এই ব্যাপারে গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধের বিশেষায়িত টিম আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত অব্যাহত অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের (উত্তরের) উপ-কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শফিকুল ইসলাম সজল, মো. বুলু, ডাকাত চক্রের দলনেতা ফয়সাল, মো. মাইনউদ্দিন ও মো. আসলাম।
এ সময় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি পিকআপ, তিনটি চাপাতি, ছিনতাইকৃত তিনটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল আলম উল্লেখ করেন, গত ২৫ জুন দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে ১৫-১৬ জনের একটি ডাকাত দল লোহার রড, চাপাতি ও ছোরা দিয়ে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ৭১ টেলিভিশনের একটি সাদা রংয়ের নোয়া মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
একই কৌশলে ডাকাত দলের সদস্যরা গত ২৭ জুন শেরে বাংলানগর থানার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস, গত ১৯ মে কাফরুল থানার বিমান বন্দর এলাকা থেকে একটি নোয়া মাইক্রোবাস, গত ১৮ আগস্ট আদাবর থানার বায়তুল আমান এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস ও মোবাইল সেট এবং গত ২ মে মতিঝিল থানা এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস মৃত্যু ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক নিয়ে যায়।
তিনি জানান, এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি ও দস্যুতা মামলা হয়। কিন্তু মূল আসামিদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হওয়ায় তারা একের পর এক ডাকাতি ও দস্যুতা সংঘটন করে আসছিল। এই ব্যাপারে গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিশেষায়িত টিম আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, আদাবর থানায় সংঘটিত উপরোল্লেখিত ঘটনায় উক্ত থানায় মামলা হলে আদাবর থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামি সোহরাবকে গ্রেপ্তারসহ একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে। সোহরাবকে গোয়েন্দা পুলিশ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তার দলের অন্যান্য সদস্যদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে। সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরা-পশ্চিম থানার গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. মঞ্জুর হোসেন আলীকেও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ।
সোহরাব ও মঞ্জুরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকা থেকে শফিকুল ইসলাম সজল ও মো. বুলুকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তী সময়ে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, কুখ্যাত ডাকাত ফয়সাল ও টিটুর নেতৃত্বে সহযোগী আসামি আসলাম, মাইনউদ্দিন, সোহরাব, কোরবান আলী, শুকুর আলী, নাহিদ, সেলিম, রবিন, আবদুল্লাহ, সোহেল, মিজানসহ আরও কিছু উঠতি যুবক পিকআপ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে লোহার রড, চাপাতি ও ছোরা দিয়ে ড্রাইভারকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ইতোমধ্যে অনেক মাইক্রোবাস, পিকআপ ও প্রাইভেটকার ছিনিয়ে নিয়েছে।
এসব ছিনতাইকৃত গাড়ি ডাকাত দলের সদস্যরা শফিকুল ইসলাম সজলের কাছে হস্তান্তর করে। সজল গাড়িতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট বানানোসহ জাল কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করতো। আর একাজে তাকে সহায়তা করতো আসামি মো. বুলু। এরপর সজল গাড়িগুলো বিক্রির জন্য মঞ্জুর হোসেন আলীর নিকট হস্তান্তর করলে, মঞ্জুর গাড়ির ক্রেতা ঠিক করে। গাড়ি বিক্রির সময় কখনও শফিকুল ইসলাম সজল, কখনও মো. বুলু আবার কখনওবা মঞ্জুর হোসেন আলী মালিক সেজে গাড়িগুলো বিক্রির জন্য সাধারণ ক্রেতাকে প্রস্তাব করতো।
শেখ নাজমুল আলম আরও জানান, আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে ডিবি পুলিশ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার তারাবো এলাকা থেকে একটি প্রাইভেটকার, ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস, কদমতলী থানা এলাকা থেকে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে তিনটার দিকে ডাকাত চক্রের দলনেতা মো. ফয়সল, সহযোগী মো. মাইনুদ্দিন ও মো. আসলামকে গ্রেপ্তারসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দুটি পিকআপ ও তিনটি চাপাতি উদ্ধার করে।
পরে সিলেট মহানগরীর দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকা থেকে ও নরসিংদী সদর থানা এলাকা থেকে দুটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত চক্রের সদস্যরা জানায়, তারা রাত্রিকালে পিকআপ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের ডিসি, ডিবি (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমানের নির্দেশনায় এডিসি আশিকুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. শাহাদত হোসেন সুমার নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এএ/জেবি)