logo ১৯ মে ২০২৫
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের সেতুবন্ধ
জহির উদ্দিন বাবর
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ২০:৫৯:৫২
image

ইসলামি জীবন বিধান, ইসলামের অপূর্ব দর্শন এবং এর প্রায়োগিক ব্যবস্থা অন্য যেকোনো ধর্ম ও মতাদর্শ থেকে শ্রেষ্ঠ। ইসলামি শরিয়তের পর্যালোচনামূলক বিশ্লেষণ দ্বারা এ কথা যে কারও কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হবে। ইসলাম মুসলিম উম্মাহকে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। পারস্পরিক সম্পর্কের প্রগাঢ়তা ও ব্যাপ্তির ক্ষেত্রে ইসলাম অনন্য ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ইসলামের প্রায় সব বিধানেই এর স্পষ্ট অথবা প্রচ্ছন্ন একটা ছাপ লক্ষ্য করা যায়। ইসলামের অন্যতম মৌল স্তম্ভ হজ এর অন্যতম।


মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির সবচেয়ে বড় সেতুবন্ধ হজ। আল্লাহতায়ালা হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) নির্দেশ দিলেন, মানুষের মধ্যে হজের জন্য ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূরদূরান্ত থেকে। যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তার দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময়।' (হজ : ২৭-২৮)


হজ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত, যার দ্বারা মহান স্রষ্টা মুসলিম উম্মাহকে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের অপূর্ব শিক্ষা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে 'আমি কাবাগৃহকে লোকদের জন্য সম্মিলনস্থল ও শান্তির আলয় করলাম।' (বাকারা : ১২৫)


কোরআনে করিমের নির্দেশনা এবং হাদিসে নববীর বিবরণীতে বারবার এ কথা ব্যক্ত হয়েছে, মুসলমান মুসলমানের ভাই, তারা পরস্পরে সম্পর্কের সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ। গোটা মুসলিম উম্মাহ যেন 'এক দেহ এক প্রাণ।' ইসলাম সব মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জোরালো নির্দেশ দিয়েছে। তেমনি মতানৈক্য ও বিভেদের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকার তাগিদও করেছে। আল্লাহর ঘোষণা_ 'তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর, পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।' (আল ইমরান : ১০৩)


বায়তুল্লাহর হজ সারাবিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। হজ উপলক্ষে বিশ্বের মুসলমানদের যে মিলনমেলা ঘটে তাতে 'এক দেহ এক প্রাণ' মুসলিম উম্মাহর অভিন্নতা ও অবিচ্ছেদ্যের অনুপম দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠে। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে, প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদের অপূর্ব মিলন এবং তাদের আকুল প্রাণের ব্যাকুল মিনতি সত্যিই মোহনীয়! অতুলনীয় এই দৃশ্য! পৃথিবীর আর কোনো ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠী এর কোনো নজির পেশ করতে পারবে না। একতার এই অবিনাশী চেতনা প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের সব কালিমা ধুয়ে-মুছে পাক-সাফ করে দিয়ে যায়। উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব, জাত-বিজাত, ধলা-কালো, গোলাম-মনিব কোনোই বাছবিচার নেই। আভিজাত্য ও কুলীনতার কোনো স্থান নেই। অনন্ত অসীম সত্তার সামনে সবার পরিচয় এক, সবাই তার নিয়ামত-প্রত্যাশী।


মুসলমান যে কোনো গোত্রের হোক, যে কোনো বর্ণের অধিকারী হোক, যে কোনো পোশাকধারী হোক, কৃত্রিমাত্মক শ্রেষ্ঠত্বে সে যত ঊর্ধ্বেই চলে যাক_ হজের ক্ষেত্রে সে একজন নগণ্য মুসলমান থেকে বিন্দুমাত্রও এগিয়ে নেই। পবিত্র এই স্থানে, বরকতময় এই মুহূর্তে ধনী-গরিবের যেমন পার্থক্য নেই, তেমনি রাজা-প্রজার মধ্যেও কোনো বিভেদ নেই। একই অবস্থায়, একই অনুভূতিতে, একই পোশাকে হাজিদের তাওয়াফের মনোমুগ্ধকর অনাবিল দৃশ্য যে কারও নজর ও হৃদয় কাড়বে। রাসুল (সা.) বিদায় হজের ভাষণে মুসলমানদের একতাবদ্ধ থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যের ডোরে আবদ্ধ করে দিয়েছেন। সব ধরনের বিভেদ, বৈষম্য ও কৃত্রিম পার্থক্যকে মিটিয়ে দিয়েছেন। এটাই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা। এটাই হজের শাশ্বত আহ্বান। বর্তমানে ইসলাম যখন হুমকির সম্মুখীন, মুসলিম উম্মাহ যখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে তখন বিদায় হজের সেই পয়গাম তাদের সামনে জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য ও সংহতির অদৃশ্য যে ডোর নবী করিম (সা.) বিস্তার করে গেছেন তা অক্ষুণ্ন রেখে সম্মিলিত পথচলাই হজের অঘোষিত আহ্বান।