ঢাকা: নতুন জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নামের তালিকা প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৩৫ জনের এ তালিকা মন্ত্রণালয়টির ওয়েবসাইটে এক ঝলক প্রকাশও করা হয়েছিল। মঙ্গলবার থেকে এসব কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
পৌরসভা নির্বাচনের পর পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের নিয়োগ দেয়া হবে।
এই তালিকা নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, যারা ডিসি হওয়ার অনাগ্রহ থেকে পরীক্ষা দেননি এমন কারো নাম যেমন আছে তালিকায়, তেমনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) নেতিবাচক তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন দেয়ার পরও কারো কারো নাম আছে সেখানে। অথচ ডিসি হতে আগ্রহী এবং সন্তোষজনক পরীক্ষা দিয়েও অনেকে তালিকায় স্থান পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে নতুন ডিসি নিয়োগের আগে এ ধরনের তালিকা প্রকাশ নতুন ঘটনা বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন। তবে এ তালিকা প্রকাশকে আবার অনেকে ইতিবাচক হিসেবেও দেখছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) মহিবুল হক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিাফোর ডটমককে বলেন, এটি গোপন কোনো বিষয় নয়। যে ৩৫ জনের নামের তালিকা ওয়েবসাইটে দেয়া হয়, তারাই পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
এ ধরনের তালিকা প্রকাশ আগে হয়েছে কি না জানাতে চাইলে এপিডি বলেন, “এতে কোনো সমস্যা নেই। গোপন কিছু তো করা হয়নি। আগামী মঙ্গলবার থেকে তারা প্রশিক্ষণ নেবেন।”
নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন- হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্টের প্রকিউরমেন্ট অফিসার মো. মাহমুদুল হোসাইন খান, পাবলিক প্রাইভেট পাটনারশিপ অফিসের ডেপুটি ম্যানেজার ড. বশিরুল আলম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. আমিন উল আহসান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ও মো. রাশেদুল ইসলাম, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মো মুশফিকুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. খায়রুল আলম শেখ ও উম্মে সালমা তানজিয়া, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের উপপরিচালক অমল কৃষ্ণ মন্ডল, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. খলিলুর রহমান, বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দিলীপ কুমার বনিক, অর্থ বিভাগের উপসচিব মো. জহির রায়হান ও বেগম জিনাত আরা, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমেনা বেগম, লিয়েনে কর্মরত মো. মাহমুদুল হাসান, অর্থ বিভাগে সংযুক্ত উপসচিব মোহাম্মদ মনজুরুল মান্নান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব রেখা রাণী বালো, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব রাব্বী মিয়া ও মো. তোফায়েল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস ও মো. মোখলেসুর রহমান সরকার, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আহম্মেদ ফয়সাল ইমাম, ঢাকার গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের পরিচালক কামরুন্নাহার সিদ্দিকা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সায়লা ফারজানা, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত উপসচিব রেজওয়ানুর রহমান, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের উপসচিব তপন কুমার বিশ্বাস, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. সুভাস চন্দ্র বিশ্বাস, ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম শাহিনা খাতুন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. আবদুল আওয়াল, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক শাহনেওয়াজ দিলরুবা খান এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল সিংহ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে জনপ্রশাসনে ডিসিদের ‘ফিটলিস্ট’ প্রণয়ন এবং নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন থাকত। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দু-চারজন শীর্ষ কর্মকর্তাই কেবল জানতেন তা। এবারই এর ব্যতিক্রম হলো।
জানা যায়, নতুন ডিসি তালিকা করার জন্য গত ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩, ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের ১২৭ জন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে ডাকা হয়। তার মধ্যে ১৩তম ব্যাচের ৫৪ জন, ১৫তম ব্যাচের ৩৬ জন এবং ১৭তম ব্যাচের ৩৭ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৪ জন কর্মকর্তাকে নির্বাচিত করা হয়। তাদের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিতে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাকে (এনএসআই) দায়িত্ব দেয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এ বছর প্রথম মৌখিক পরীক্ষার পর কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কারা কারা ডিসি হতে আগ্রহী নন। যারা ডিসি হতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন তারা মৌখিক পরীক্ষার পর আর কোনো পরীক্ষায় অংশ নেননি।তবে তাদের মধ্যেও কারো নাম প্রকাশিত ফিটলিস্টে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ডিসি হতে আগ্রহী কয়েকজন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগ্রহ নিয়েই তারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। সব ধরনের প্রশ্নের যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য জবাবও দিয়েছেন তারা। কিন্তু ফিটলিস্টে তাদের নাম নেই।
তাদের অভিযোগ, কয়েকজন কর্মকর্তা সম্পর্কে এনএসআই গুরুতর নেতিবাচক তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন দেওয়া সত্ত্বেও তাদের নাম নতুন ডিসির তালিকায় স্থান পেয়েছে। এই কর্মকর্তাদের নাম জানতে চাইলে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা।
(ঢাকাটাইমস/২ ডিসেম্বর/এইচআর/মোআ)