logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
বাড়তি টাকা সমন্বয় করছে রাজধানীর স্কুলগুলো
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ২০:৫৮:৩৭
image



ঢাকা: শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া বাড়তি টাকা সমন্বয় করতে শুরু করেছে রাজধানীর বড় বড় স্কুলগুলো। বাড়তি টাকা ফেরত দেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া সময়সীমার শেষ দিন ছিল গতকাল রবিবার।






৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক নির্দেশে সাত কার‌্যদিবসের মধ্যে ভর্তি, সেশন, টিউশন ফি ও এসএসসির ফরম পূরণে নেওয়া বাড়তি টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।






তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরেজমিন বেশ কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক স্কুলই শিক্ষার্থীদের বাড়তি টাকা ফেরত দেয়ার পরিবর্তে তা বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থানের কারণে অন্তত বাড়তি টাকা আদায় বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় ও অভিভাবকরা জানান।






রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে নেওয়া অতিরিক্ত বেতন ও ভর্তি ফি চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা গত সপ্তাহে অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো হয়।






তাজরিন নামে এক শিক্ষার্থীর মা ঢাকাটাইমসকে জানান, অতিরিক্ত ভর্তি ফি ও বেতন ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে জানিয়েছে স্কুল। আর যারা নতুন ভর্তি হচ্ছে তাদের কাছ থেকে আগের বেতনই (বাড়তি ছাড়া) নেয়া হচ্ছে।






এই প্রতিবেদক স্কুলটির সামনে ব্যাংক এশিয়া শাখায় খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, আগের নিয়মে টাকা নিতে ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন বলেন, যারা ইতিমধ্যে ভর্তি হয়েছে তাদের টাকা সমন্বয় করা হবে। আর যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের কাছ থেকে বর্ধিত টাকা নেয়া হচ্ছে না।






তবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে বেতন ও ভর্তি ফির ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাড়তি ফি আদায় নিয়ে অভিভাবকদের অসন্তোষ ও আন্দোলনের মধ্যেই টিউশন ফি বাড়িয়েছে বিদ্যালয়টি। জানুয়ারি মাস পেরিয়ে গেলেও এ প্রতিষ্ঠানে এখনো ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি।






স্কুলটির অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা ঢাকাটাইমসকে জানান, অনেক স্কুলে বেশ আগেই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু ভিকারুননিসায় এখনো ভর্তি করা হচ্ছে না। তারা বলেছে, চলতি মাসের ৭ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে ভর্তি নেওয়া হবে। কিন্তু এখনো শুরু হয়নি। তিনি বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের হয়তো অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, তাই তারা ভর্তি নিয়ে গড়িমসি করছে।






রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে জানুয়ারি মাসে ১০০ টাকা বেতন বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছিল। এ স্কুলের এক ছাত্রের মা বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে বেতন ১০০ টাকা কমানো হয়েছে।  তবে  জেনারেটর ফি, ডায়েরি, বর্ষপঞ্জিসহ বিভিন্ন খাত সৃষ্টি করে অতিরিক্ত সাড়ে নয় শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে, যা গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি।






জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম জাকির হোসাইন ভুঁইয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর আল্টিমেটামের পর স্কুলগুলো সাড়া দিয়েছে। অনেক স্কুল অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। তারা অতিরিক্ত অর্থ বেতনের সঙ্গে সমন্বয়ে করবে বলে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।






তবে কতটি স্কুল এ পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ ফেরতের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে সে হিসাব মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। এ বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানান যুগ্ম সচিব জাকির হোসাইন।






এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আল্টিমেটামের পর অতিরিক্ত অর্থ ফেরতের বিষয়ে স্কুলগুলোর সাড়া মিলেছে। তারা বেতন সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।       






২০১২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরও অতিরিক্ত ভর্তি ফি ফেরত না দেওয়ায় ভিকারুননিসা, মনিপুর ও আইডিয়াল স্কুলের তিন অধ্যক্ষের সরকারি এমপিও স্থগিত করা হয়েছিল। পরে তারা অভিভাবকদের কিছু টাকা ফেরত দিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক প্রভাবে বেতনের এমপিও অংশ পাওয়ার প্রক্রিয়া সচল করে নেন। এবারও এমন কিছু ঘটবে কি না তা নিয়ে অভিভাবকরা শঙ্কিত। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, অতীতে দেখা গেছে সরকারি নির্দেশনার পরেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত দেয়নি।






গত দুই সপ্তাহ রাজধানীর নামিদামি স্কুলগুলোতে তদন্ত চালিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক গৌরচন্দ্র মণ্ডলের নেতৃত্বে পরিচালিত এ তদন্তে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট জোসেফ স্কুল, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মিরপুর পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে বাড়তি টাকা আদায়ের প্রমাণ মেলে।






এ ছাড়া বিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ইচ্ছামতো ভর্তি ফি আদায় ও বেতন বাড়ানোর অভিযোগ ওঠে।






মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াস হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাতটি প্রতিষ্ঠানের ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছি। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটা মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে।”






(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/এমএম/মোআ)