ঢাকা: উপজেলার নেতাদের সুপারিশে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা তৈরি হলেও জেলা বিএনপি তা পাল্টে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের তালিকার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকারও করেছেন জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে একটি উপজেলায় এমনটা ঘটলেও পরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাপে তৃণমূলের সুপারিশ ঠিক করেছে কেন্দ্র, এমন খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে প্রথম দফার ৭৩৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ২২টি ইউনিয়নে বিএনপি কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে দলটির নেতারা সরকারি দলের ভয়ভীতি দেখানো ও প্রশাসনের হুমকির কথা বলছেন।
প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলার ৭৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭৪টিতে নির্বাচন হবে। প্রার্থী সংকট না থাকলেও প্রতিটি উপজেলার দু-তিনটি ইউনিয়নে দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে নাও পারেন। কারণ তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে, মনোনয়নপত্র জমা দিলে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হবে।” চিতলমারি ও মংলা উপজেলার অবস্থা বেশি খারাপ বলে জানান তিনি।
এদিকে দলীয় কোন্দলের কারণেও বেশ কিছু ইউনিয়নে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে একটি, শ্যামনগরে চারটি, দেবহাটা ও তালা উপজেলার একটি করে ইউনিয়নে বিএনপি কোনো প্রার্থীর নাম সুপারিশ করতে পারেনি।
আর খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে জেলার নয়টি ইউনিয়নে দলের প্রার্থী না থাকার কথা নিশ্চিত করেন।
এ ছাড়া বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রার্থীর নাম সুপারিশ করতে পারেনি তৃণমূল। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জ ছাড়া অন্য জায়গায় ভয়ভীতি দেখানোর কারণে প্রার্থী সুপারিশ করা যায়নি বলে জেলার নেতাদের দাবি।
এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ৬ নম্বর মাগুরাগোনা ও ৭ নম্বর শোভনা ইউনিয়নের জন্য যেসব প্রার্থীর সুপারিশ করেছিলেন উপজেলা নেতারা, তা পাল্টে অন্য প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠান জেলা নেতারা।
জানা গেছে, মাগুরাগোনায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির নেতারা আবুল কালাম শামসুদ্দিনের নাম সুপারিশ করে জেলায় পাঠান। এই বর্তমান চেয়ারম্যান খুলনার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত। কিন্তু জেলার নেতারা তা পাল্টে নজরুল ইসলামের নাম সুপারিশ করেন।
জানতে চাইলে আবুল কালাম শামসুদ্দিন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “থানা ও ইউনিয়ন কমিটির নেতারা আমার নাম সুপারিশ করলেও জেলার নেতারা তা পাল্টে দিয়ে অন্য একজনের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে।” বিষয়টি কেন্দ্রকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
একইভাবে শোভনা ইউনিয়নেও শেখ মতিয়ার রহমান বাচ্চুর জায়গায় জেলা কমিটি অন্য একজনের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। একই উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নেও স্থানীয় নেতাদের সুপারিশ বদলে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “ডুমুরিয়া উপজেলার নেতারা পরিস্থিতির কারণে এসব প্রার্থীর নাম দিলেও পরে তাদের পরামর্শেই গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন নেতাদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দকে আমলে না নিয়ে দলের স্বার্থকে বেশি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।”
বিষয়টি দলটির শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করেছেন। তবে প্রার্থী সংকটের কারণে এমনটা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে অবশ্য দ্বিমত প্রকাশ করেন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা এক কেন্দ্রীয় নেতা।
ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কোথাও প্রার্থী সংকট নেই। প্রায় শতাধিক ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থী আছে। তবে সর্বসাকল্যে ২০ থেকে ২২টি ইউনিয়নে আতঙ্কের কারণে নেতারা আগ্রহ না দেখানোয় প্রার্থী দেয়া যায়নি। এই সংখ্যা খুলনা জেলায় বেশি বলে জানান তিনি।
আগামী ২২ মার্চ প্রথম দফায় ৭৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় পাঁচ নেতা এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের এমপি প্রার্থী্- এই ছয়জনের সুপারিশসহ তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয় বিএনপি।
দলীয় সূত্রমতে, রবিবার রাতের মধ্যে প্রথম দফার নির্বাচনের সব প্রার্থীর প্রত্যয়নপত্র প্রার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার কথা। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৬৯২টি ইউনিয়নের প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স।
এরপরও যেসব জায়গায় একাধিক প্রার্থী থেকে যাবে, সেখানে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে একক প্রার্থীর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেসব জায়গায় প্রার্থী নেই, সেসব জায়গায় হয়তো শরিকরা প্রার্থী দিলে সমর্থন দেয়া হতে পারে।”
(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/বিইউ/মোআ)