logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার
মার্চেই চালু হচ্ছে একাংশ
আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১০:৪৩:৪৫
image




ঢাকা: রমনা থেকে মগবাজার হয়ে সাতরাস্তার দিকে যেতে চাইলে প্রতি মুহূর্ত থমকে থাকতে হয় সড়কে সিগন্যালের কারণে। দুই কিলোমিটারেরও কম এই সড়ক পারি দিতেই কখনও কখনও এক ঘণ্টার বেশি লেগে যাচ্ছে। তবে সুখবর হচ্ছে এই পথে চলাচলকারীদের ভোগান্তি এখন অবসানের অপেক্ষায়। কারণ মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের আংশিক চালু হচ্ছে এক মাসের মধ্যেই।



সাতরাস্তা থেকে রমনা পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ পর্যায়ে। স্বাধীনতা দিবসে এই সড়কটি উদ্বোধনের জন্য চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ।



এরই মধ্যে সড়কের উপরের অংশের কাজ শেষ হয়েছে। উড়াল সড়কে উঠানামার জন্য তিনটি ঢালের কাজ চলছে। সাতরাস্তা মোড় পেরিয়ে উড়াল সড়ক থেকে নামার ঢালের কাজ শেষ হয়ে গেছে। রমনায় সড়কে উঠার ঢালের কাজও শেষ পর্যায়ে। আর সাতরাস্তা পেরিয়ে রমনার দিকে উড়াল সড়কে উঠার ঢালে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।



হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ঢালে র‌্যাম্পিংয়ের কাজ করছে শ্রমিকরা। শ্রমিকরা জানান, তাদেরকে মার্চের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে রমনা থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত পুরো কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।



উপরের অংশের সড়ক পুরোটাই নির্মাণ হয়েছে। এখন কেবল পিচ ঢালাই করা হবে। এই কাজে বেশি সময় লাগবে না বলে আশা করছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এখন চলছে উপরের সড়কের পাশে বাতি সংযোজন এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। এই সড়কটি চালু হলে আগের মতো মগবাজার মোড়, ট্রেন আসা যাওয়ার সময় মগবাজার রেলগেইট আর এফডিসি মোড়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকতে হবে না।



এই উড়ালসড়কটি অবশ্য কেবল রমনা থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত বিস্তৃত নয়। মোট আট দশমিক ৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই উড়াল সড়কটির একটি অংশ বাংলামোটর থেকে মৌচাক হয়ে শান্তিনগর এবং মৌচাক হয়ে রামপুরার দিকে যাবে আরেকটি অংশ।



২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। পরে তিন দফা সময় বাড়িয়ে উড়ালসড়কটি পুরোপুরি চালু হতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে সরকার। ভারতের সিমপ্রেকস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানার যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান সিমপ্লেক্স নাভানা জেভি এবং চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য নাম্বার ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ ম্পোানি-এমসিসিসি ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন এই সড়কটি নির্মাণে কাজ করছে।



চার লেনের এই উড়ালসড়কে উঠানামার জন্য তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, সোনারগাঁও হোটেল, মগবাজার, রমনা (হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল) বাংলামোটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও শান্তিনগর মোড়ে লুপ বা র‌্যাম্প রাখা হয়েছে।



এই উড়ালসড়কটি চালু হলে সাতরাস্তা, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর এলাকার যানজট নিরসনের আশা করছে সরকার।



তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সড়কের নকশায় কিছু ত্রুটি থাকায় যতটা আশা করা হয়েছিল ততটা সুফল পাবে না নগরবাসী। কারণ, বেশ কিছু এলাকায় ডান দিকে মোড় নেয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। মৌচাক থেকে সাত রাস্তার দিকে যেতে হলে উড়াল সড়ক ধরে যাওয়ার সুযোগ নেই। একইভাবে বাংলামোটর থেকে সাতরাস্তা বা রমনার দিকে যাওয়া যাবে না। আবার সোনারগাও মোড় থেকে উড়াল সড়কে উঠে সাত মগবাজারের দিকে আসার সুযোগ রাখা হয়নি। তবে সাত রাস্তা থেকে যারা মৌচাক-মালিকাগের দিকে যেতে চান, তারা উড়াল সড়ক ব্যবহার করেই যেতে পারবেন।  



আবার মৌচাক মোড়ে সড়কের ওপরের অংশেও সিগন্যালের ব্যবস্থা রাখায় নিচের অংশের মতোই যানজটের আশঙ্কা আছে।



তবে প্রকল্প পরিচালক নাজমুল আলম বলছেন, বিভিন্ন মোড় সংকীর্ণ থাকায় ডান দিকে মোড় দেয়ার সুবিধা রাখা যায়নি। তবে এতে তেমন কোন সমস্যা হবে না বলে আশা করছেন তিনি। কারণ, উড়াল সড়ক চালু হলে কিছু যানবাহন উপর দিয়ে চলবে, কিছু চলবে নিচ দিয়ে। তিনি বলেন. ‘মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এর ফাউন্ডেশন মাটির নিচে। ফলে অন্যান্য ফ্লাইওভারের মতো নিচের সড়ক সংকীর্ণ হয়নি। ফলে নিচের রাস্তার প্রায় সম্পূর্ণই যান চলাচল উপযোগী থাকবে আগের মতোই’।



প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই উড়ালসড়কটি আরও আগেই উদ্বোধন করার কথা থাকলেও বারবার নকশা পরিবর্তন আর মাটির নিচের বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইনের কারণে কাজ বিঘিœত হয়েছে। ফলে ধীরগতিতে এগিয়েছে কাজ।



এর মধ্যে সাতরাস্তা থেকে রমনা পর্যন্ত সড়কের কাজ যত দ্রুত আগাচ্ছে, অন্য অংশের কাজ তত দ্রুত আগায়নি। তবে প্রকল্প পরিচালক নাজমুল আলম আশা করছেন, মার্চের মধ্যে একাংশ খুলে দেয়ার পর কাজের গতি আরও বাড়বে এবং নির্ধারিত সময় ডিসেম্বরের মধ্যেই সড়কটি পুরোপুরি চালু হবে ।



(ঢাকাটাইমস/২৪ ফেব্রুয়ারি/ডব্লিউবি)