অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের এক বছর
খুনির খুব কাছাকাছি গোয়েন্দারা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১১:৪৭:৪০

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের আজ এক বছর। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকের ফুটপাতে খুন হন অভিজিৎ রায়। দুর্বৃত্তদের আঘাতে এ সময় আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও সুনির্দিষ্টভাবে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে এখনো কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য দ্রুতই খুলবে বলে আশাবাদী পুলিশ।
পুলিশ দাবি করছে, এই এক বছরে কয়েকজন খুনির খুব কাছাকাছি চলে গেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা। যেকোনো দিন মূল খুনিরা পুলিশের জালে আটকা পড়বে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়. কীভাবে, কতজন অভিজিৎ রায়ের ওপর হামলা করে, তাদের কে নেতৃত্ব দেয়, খুনিদের কারা পালাতে সহায়তা করে- এসব কিছু ধীরে ধীরে খোলাসা হচ্ছে।
এদিকে অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো ১১ ধরনের আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এফবিআইয়ের কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় ডিবি পুলিশ। রিপোর্ট এলে তা গ্রেপ্তারকৃত সন্দেহভাজন আট আসামিসহ আরও বেশ কয়েকজনের ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে পুলিশ।
অভিজিৎ হত্যার পর বিভিন্ন সময় র্যাব ও ডিবির হাতে আটজন সন্দেহভাজন আটক হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে অভিজিতের খুনি হিসেবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তার পাশাপাশি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও আলোচিত এ মামলার তদন্ত চলছে বলে সূত্র জানায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে দুজন সরাসরি অংশ নিলেও এ ঘটনায় বিভিন্নভাবে আরও বেশ কয়েকজন জড়িত। তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগির এ মামলা তদন্তের সফল সমাপ্তি ঘটবে।
মনিরুল ইসলাম জানান, যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো আলামতের পরীক্ষা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই সম্ভাব্য খুনিদের সঙ্গে প্রোফাইলিং করে দেখা হবে।
এদিকে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর বাড্ডার একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকালে কামাল ওরফে শাহীন ওরফে জামাল (২৬) ও শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে হিরন (৩০) নামে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের যে দুই নেতাকে আটক করা হয়, তাদের কাছ থেকে অভিজিৎ হত্যার অনেক তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ওই দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন আরও কয়েকজনকে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। তাদের ধরতে পারলে বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের জট খুলে যেতে পারে বলে আশা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘অভিজিৎ রায়ের মামলার তদন্তের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। দ্রুত ভালো সংবাদ দেওয়া যেতে পারে।’
অভিজিৎ হত্যা মামলার বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে একই আশ্বাস শুনে আসছেন জানিয়ে অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পুলিশ বারবার একই কথা বলে আসছে। অনেক দিন তো হয়ে গেল। তারপরও আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করি, তারা সফল হবে।’
অভিজিতের ওপর হামলার সময় দুর্বৃত্তদের আঘাতে আহত তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ পরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন রাফিদা।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী ছিলেন অভিজিৎ। সেখানেই সস্ত্রীক বাস করতেন তিনি।
(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/এএ/মোআ)