logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
‘ইউনিয়ন ভূমি’ অফিস নির্মাণে মেগা প্রকল্প
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
০১ মার্চ, ২০১৬ ০৮:০৮:১৩
image



ঢাকা: দেশে ভূমি রেকর্ড সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়নে তিন হাজার ১০০টি ‘ইউনিয়ন ভূমি’ অফিস নির্মাণের লক্ষ্যে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গত ১২ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে (পিইসি) পাঠিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।






দেশের সব পুরনো ভূমি অফিস নির্মাণে ১৯৮৫ সালে একটি উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। কিন্তু গত ৩০ বছরে মাত্র ১ হাজার ১৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। এই নিয়মে বাকি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ করতে সময় লাগবে ৯০ বছর।






এই প্রেক্ষিতে ভূমি অফিস নির্মাণে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে, যেটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৯ সাল। এই সময়ের মধ্যে তিন হাজার ১০০টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের কাজ শেষ হবে।






মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই তিন হাজার ১০০টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ সম্পন্ন হলে দেশে আর কোনো জরাজীর্ণ ভূমি অফিস থাকবে না। মূল্যবান দলিল-দস্তাবেজ সঠিকভাবে সংরক্ষণসহ বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটবে ভূমি প্রশাসন ব্যবস্থায়।






ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের ভূমি উন্নয়নব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে ২ হাজার ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকার এই বিশাল প্রকল্প প্রস্তাব গত ১২ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে (পিইসি) পাঠিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ গত সপ্তাহে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিকে এ-সংক্রান্ত বৈঠকের দিনক্ষণ জানাতে তাগাদা দিয়েছেন।






নিয়ামানুযায়ী পিইসিতে প্রকল্পের আকার নিয়ে সিদ্ধান্তের পর সেটি পাঠানো হবে একনেকে। সেখানে পাস হওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।






এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে জনবল নিয়োগের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় আজ সোমবার চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। ১৩৬ জন জনবল চাওয়া হয়েছে ওই প্রস্তাবে। এর মধ্যে নতুন নিয়োগ দিতে হবে ৩০ জন কর্মচারী। বাকি ১০৬ জন ভূমি ও এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, যারা প্রেষণে এই প্রকল্পে কাজ করবেন।






জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আবুয়াল হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। ১৯৮৫ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প এত দিন ছোট ছোট আকারে বাস্তবায়িত হলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভূমিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় এই বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগের ছোট ছোট প্রকল্প নিয়ে এগোলে দেশের বাকি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৯০ বছর। এসব কিছু বিবেচনায় মন্ত্রী এই মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। আশা করছি সবার সহযোগিতায় এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাবে।”






আবুয়াল হোসাইন বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে-জুনে এই প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। আর আগামী অর্থবছরে শুরু হবে ভবন নির্মাণের কাজ। চলতি সপ্তাহে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দাগ-খতিয়ান ও জমির পরিমাণসহ বিস্তারিত তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হবে।






দোতলার ফাউন্ডেশন দিয়ে এক তলাবিশিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আয়তন হবে ১৫০০ থেকে ১৬০০ বর্গফুট। তাতে তিনটি কক্ষ, দুটি বাথরুম ও একটি বড় বারান্দা থাকবে। ভবনগুলো নির্মাণ করবে এলজিইডি। আর কাজের তদারক করবে ভূমি মন্ত্রণালয়।






এর আগে ১৯৮৫ সালে উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত ৩০ বছরে ৪ হাজার ৫২২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মধ্যে মাত্র এক হাজার ১৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ করা হয়। আর ৫০০টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যেগুলোর নির্মাণ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে এপ্রিলের মধ্যে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।






এ ৩০ বছরে দেশের ৪৭৮টি উপজেলা ভূমি অফিসের মধ্যে নির্মাণ হয়েছে ৩৪৫টি। বাকি ১৩৯টি উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।






উপজেলা ও ইউনিয়ন মিলিয়ে মোট ৬৩৯টি ভূমি অফিস নির্মাণে ৫৩৭ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। খুব শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হবে।






আবুয়াল হোসাইন বলেন, দেশে বিদ্যমান উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো অতি পুরনো ও জরাজীর্ণ। ফলে জমির রেকর্ড ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতিমধ্যে পাঁচটি পর্যায়ে দেশের মোট ৩৪৫টি উপজেলা ভূমি অফিস এবং এক হাজার ১৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ষষ্ঠবারের মতো প্রস্তাবিত প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের পর ভবন নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। আর নতুন এ প্রকল্পটি ‘প্রোজেক্ট ইভালুয়েশন’ কমিটিতে রয়েছে।






ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী দিনে নগরায়ণ ও শিল্পায়নসহ নানা কারণে ভূমির ব্যবহার আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ কারণে ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থাপনা উন্নততর হওয়া প্রয়োজন। এরই ধারাবাহিকতায় সপ্তম পর্যায়ে সারা দেশে ৩ হাজার ১০০টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের জন্য ২ হাজার ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়েসাপেক্ষ একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এটি এখন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে রয়েছে।






খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইউনিয়ন ভূমি অফিস না থাকায় কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে এর কার্যক্রম। ফলে ভূমিসংক্রান্ত কাজ ও খাজনা দিতে গিয়ে যেমন ভোগান্তি হয় জনগণের, তেমনি জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না সরকার।






বাংলাদেশে পাঁচ হাজারের মতো ইউনিয়ন রয়েছে। সব ইউনিয়নে ভূমি অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত থাকলেও গত ৩০ বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। অর্থসংকট ও অদক্ষতাই এর কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।






১৯৮৩ সালে ভূমি সংস্কার কমিটির সুপারিশ মোতাবেক ভূমি ব্যবস্থাপনা সুদৃঢ় করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ভূমি অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ‘নিকার’-এ। বর্তমানে কোনো কোনো জায়গায় দুই থেকে তিনটি ইউনিয়নের জন্য রয়েছে একটি ভূমি অফিস। আবার কোথাও কোথাও অফিসগুলো অনেক পুরনো ও জরাজীর্ণ। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে মূল্যবান কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসেও ভূমি অফিসের কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।






এ প্রসঙ্গে আবুয়াল হোসাইন বলেন, “এত দিন টাকার জন্যই ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো করা যায়নি। বর্তমান মন্ত্রী সাহস করে নতুন এই প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে আর সমস্যা থাকবে না।”






১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পর ভূমি রাজস্ব ও অন্যান্য কর আদায় এবং ভূমিসংক্রান্ত দলিলপত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সারা দেশে ৩২৭টি থানা রাজস্ব অফিস এবং ১৯১৫টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস স্থাপন করা হয়। ১৯৮৭ সালে আরও এক হাজার ৪৫৮টি ভূমি অফিস স্থাপন করা হয়। ফলে মোট ভূমি অফিসের সংখ্যা দাঁড়ায় তিন হাজার ৩৭৩। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ফলে উপজেলা ভূমি অফিসের সংখ্যা ৪৭৮টি এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সংখ্যা চার হাজার ৫২২টিতে দাঁড়িয়েছে।






(ঢাকাটাইমস/১মার্চ/এমএম)