logo ২২ এপ্রিল ২০২৫
মেয়র খোকনের ‘ক্লিন গুলিস্তানের’ ঘোষণা এবং...
আশিক আহমেদ
০২ মার্চ, ২০১৬ ০৯:১৪:০২
image




গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কতবার যে অভিযান চালানো হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ জন্য সিটি করপোরেশন দায়ী করছে পুলিশকে, দায় অস্বীকার করছে পুলিশ। দুই পক্ষই আবার ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তারকারী ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের দিকে আঙুল তুলছেন। তবে ফুটপাত দখলকারী হকাররা জানাচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন, পুলিশ আর ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কর্মী তিন পক্ষই একাট্টা। ফুটপাতে ব্যবসা করতে না পারলে না খেয়ে মরতে হবে এমন কথাও বলেছেন হকাররা।



সুন্দরবন মার্কেটের সামনে রাস্তার উপরে নীল রঙের পলিথিন আর তার ওপর সাদা বেশ কিছু শার্ট নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল বৃদ্ধ শাহজাহান আলীকে। এই ব্যবসা করে তিনি জীবন চালাচ্ছেন ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তার পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণ পুরোটাই চলে ভাসমান এই দোকানের ওপর নির্ভর করে। শাহজাহান বলেন, ‘দোকান উঠিয়ে দিলে কী করব? পেট চলবে কীভাবে? চুরি-ডাকাতিও তো করতে পারি না। তাই বেহায়ার মতো আবারও বসি।’ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে জুতার দোকান দিয়েছেন আল আমিন। ১০ জানুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত তার দোকান তুলে দিয়েছিল।



তবে পুলিশকে টাকা দিয়ে আবার বসেছেন তিনি। আল আমিন এই প্রতিবেদককে  বলেন, ‘পুলিশরাই দোকান বহায়। সব দোকান থেইক্যা ট্যাকা নেয় প্রতিদিন। কোনোদিন ট্যাকা না দিলে কুত্তার মতো পিডাইয়া ওডায় দেয়। আর ট্যাকা দিলে দোকান বইতে দেয়।’ হকারদের হিসাবে গুলিস্তান এলাকায় তিন হাজারের বেশি দোকান আছে ফুটপাতে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও একই হিসাব দিয়েছেন। ছিন্নমূল এই ব্যবসায়ীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে টাকা কামাচ্ছে পুলিশ, সিটি করপোরেশনের কর্মী আর রাজনৈতিক কর্মীরা। এই টাকা তোলার দায়িত্ব পালন করে লাইনম্যান পরিচয়ধারী কিছু ব্যক্তি।



আর এ প্রক্রিয়ায় চাঁদা না দিলেই নির্যাতন শুরু হয় পোশাকধারীদের মাধ্যমেই। শুরু হয় উচ্ছেদসহ নানা ভোগান্তি। স্থানভেদে এই এলাকার প্রতিটি দোকানদারকে দিনে গুনতে হয় পঞ্চাশ টাকা। কোথাও বা ২০ টাকা। আর হকারদের হিসাব অনুযায়ী অন্তত তিন হাজার দোকান থাকলে দিনে এখান থেকেই তোলা হয় অন্তত লাখ টাকা, আর মাসে ৩০ লাখ টাকা। এই এলাকা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করে দিলে মাসে ৩০ লাখ টাকা আর ভাগ-বাটোয়ারা করা যাবে না। মূলত এ কারণেই হকার পুনর্বাসনের কাজও আটকে আছে বছরের পর বছর ধরে।



ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর হকারদের একটি নিয়মের মধ্যে এনে ক্লিন গুলিস্তান গড়ার ঘোষণা দেন সাঈদ খোকন। ২০ ডিসেম্বরের সেই ঘোষণার পর গত ১০ জানুয়ারি গুলিস্তান এলাকায় চালানো হয় অভিযান। উচ্ছেদ হয় পাঁচ শতাধিক অস্থায়ী দোকান। ৫০ জনেরও বেশি দোকানিকে জরিমানা ও মালামাল জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ফুটপাতে থাকা রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ও। মেয়রের ঘোষণার বাস্তবায়ন হলে এরই মধ্যে গুলিস্তান ক্লিন হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখনো আগের মতোই ঘিঞ্জি গুলিস্তান মেয়রের ব্যর্থতার কথাই বলছে।



সেই অভিযানের আর কোনো নমুনাই এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। গোলাপশাহ মাজার, আন্ডারপাস এলাকা, মহানগর নাট্যমঞ্চের পশ্চিম পাশের সড়ক ও ফুটপাত, ঢাকা ট্রেড সেন্টারের চার পাশ, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশ, বাদামতলী, বাবুবাজার এলাকায় আগের মতোই অবৈধভাবে দোকানিরা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আর হাঁটার পথে এ ধরনের ভ্রাম্যমাণ দোকানের কারণে পথচারীদের নিত্য ভোগান্তি গুলিস্তানে।



মেয়রের ক্লিন গুলিস্তানের ঘোষণা কেন ব্যর্থ হলো জানতে চাইল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহম্মেদ বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হলো অবৈধ ফুটপাত দখলমুক্ত করা। আমরা সেটি করেছি। এখানে যেন আর কেউ বসতে না পারে, সেটি দেখার দায়িত্ব পুলিশের। তারা এটা না করলে আমরা কী করব। কেউ টাকা খেয়ে অবৈধ দোকানিদের বসিয়ে দেয়। আপনারা এর বিরুদ্ধে লিখুন। যারা টাকা খায় তাদের বিরুদ্ধে লিখুন।’



পুলিশের বিরুদ্ধে হকারদের কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে এ বিষয়ে যদি কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে তবে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’-সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।