ঢাকা: পর্যাপ্ত ওজন না থাকায় এবং কাঠামো তৈরিতে মানসম্মত উপাদান ব্যবহার না করায় দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রানার গ্রুপের ‘দুরন্ত’ ও ‘রয়েল প্লাস’ মোটরসাইকেল। শিল্প মন্ত্রণালয়ও মনে করছে এই মোটরবাইক চালকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
রানার গ্রুপের মোটরসাইকেলের নিরাপত্তা-ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন ও সংযোজন কোম্পানিগুলোর মোটরবাইক পরীক্ষা করে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। অতিরিক্ত সচিব(প্রশাসন) জামাল আব্দুল নাসের চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত কমিটি ২০ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন শিল্পসচিবের কাছে জমা দেবে বলে জানা গেছে।
নিরাপত্তা ও মান নিয়ে যে রানার গ্রুপের মোটরসাইকেল নিয়ে চালকদের মধ্যে অসন্তোষ চলছে, সেটি চীনের ডায়াং মোটরসাইকেল বিপণনের মাধ্যমে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড নামে দেশে যাত্রা শুরু করে ২০০০ সালে। ২০০৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কম্পোনেন্টস তৈরির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল সংযোজন (অ্যাসেম্বলিং) শুরু করে। ২০১১ সালে পানচিং, ওয়েল্ডিং, পেইন্টিং, অ্যাসেম্বলিং, টেস্টিং ইত্যাদি যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী হিসেবে গড়ে ওঠে রানার। এরপর বিআরটিএর অনুমোদন নিয়ে মোটরবাইক উৎপাদন করে আসছে। তবে শিল্প মন্ত্রণালয় বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
অথচ এসব অনুমোদন ছাড়াই সারা দেশে রাস্তায় চলছে রানার গ্রুপের এই ঝুঁকিপূর্ণ মোটরবাইক। এই অনিয়ম এবং ঝুঁকিপূর্ণ মোটরবাইক উৎপাদনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি আবার পিকআপ ও ট্রাকও আমদানি করছে।
রানার গ্রুপের ‘দুরন্ত’ ও ‘রয়েল প্লাস’ মোটরবাইকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর অন্যতম হলো, চালক ও আরোহীর ওজনের চেয়ে এগুলোর ওজন কম, যা ঝুঁকিপূর্ণ।এ ছাড়া সেতু কিংবা ফ্লাইওভারে ওঠার সময় উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কোনো মোটরবাইকের ওজন কম থাকার ঝুঁকি সম্পর্কে এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, হালকা মোটরবাইক চলন্ত অবস্থায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনায় পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।
মোটরবাইক নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কমিটির বিষয়ে আবুল কাশেম বলেন, মোটরবাইক আমদানি-রপ্তানি ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিয়ে একটি সভা হয়েছে কমিটির।মানুষের ওজনের চেয়ে গাড়ির ওজন কম হলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে্-এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মালিকরা গাড়িগুলো আরো উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রানার গ্রুপ যেসব গাড়ি বাজারে ছাড়ছে, তার ওজন ৮০ থেকে ১০০ কেজি, যা চালকের ওজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। এ ছাড়া ব্যবহৃত উপদান ও রং নিম্নমানের বলেও অভিযোগ আছে।
মাস কয়েক ধরে রানারের মোটরবাইক ব্যবহার করছেন হাসিবুল হাসান নামের একজন চাকুরে। তার মোটরবাইকটি দেখিযে হাসিব বলেন, এ কদিনের মধ্যে বাইকের এই অবস্থা। ৩০ কিলোমিটারের বেশি গতি ওঠে না। এর বেশি যদি ওঠে, তখন গাড়ি ও চাকা ‘টাল’ খায়, পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। চলন্ত অবস্থায় ঘড়ঘড় শব্দ করে। রাস্তায় সব সময় ভয়ে ভযে থাকি।”
তাদের মোটরবাইক সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, “আমরা বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে গাড়ি উৎপাদন ও বিপণন করছি। আমার কোম্পানি কোনো অনিয়ম করছে না।”
রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের সেলস এক্সিকিউটিভ মো. নাঈম ঢাকাটাইমসকে জানান, দেশীয় ব্র্যান্ড গত বছর ‘দূরন্ত’গাড়ি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে। পাশাপাশি কালো রয়েল প্লাস তো রয়েছেই।
রানার গ্রুপের জাল-জালিয়াতি নিয়ে পরবর্তী কিস্তিগুলোও প্রস্তুত, চোখ রাখুন ঢাকাটাইমস-এ
(ঢাকাটাইমস/৯মার্চ/এইচআর/মোআ)