ঢাকা: মাত্রই শীতকাল শেষ হলো। বর্ষা আসতে বেশ দেরি। অকাল বৃষ্টিও নেই। কিন্তু রাজধানীর শান্তিনগরের রাস্তার পাশে বিভিন্ন স্থানে জমে আছে ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি। পয়োনিষ্কাশনের নালা উপচানো এই ময়লা পানি দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে পথচারীদের।
সরেজমিনে ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পলিথিন, প্লাস্টিক দ্রব্যসহ বিভিন্ন আবর্জনা জমে ড্রেন বন্ধ হয়ে যায় বলে পানি উপচে রাস্তায় পড়ে। মাঝে মাঝে এগুলো পরিষ্কার করা হলেও কয়েক দিন না যেতেই আবার একই দৃশ্যের অবতারণা হয়।
শান্তিনগর এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বাড়ির পয়োনিষ্কাশনের যে লাইন ওয়াসার ড্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে, সেগুলোর মুখ পলিথিনসহ অন্যান্য আবর্জনা পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানি সরতে না পেরে জমে যায় রাস্তার ওপর।
আবার কোথাও কোথাও ওয়াসার মূল পয়োনালার ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় সেখানে বাইরে থেকে অবাধে আবর্জনা পড়ছে, আর তা পানি চলাচলের পথে বাধার সৃষ্টি করছে।
পয়ো্নিষ্কাশনের এই দুই ব্যবস্থার দেখভাল করে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠান। মূল পয়োনালার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার, আর সংযোগ নালার দেখভালের দায়িত্ব পালন করে ঢাকা সিটি করপোরেশন। ময়লা-আবজর্নাময় পানি সড়কে উপচে পড়ার দায়িত্ব নিয়ে তাই টানাপোড়েন দেখা যায় দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শান্তিনগরে কাকরাইল-মালিবাগ সড়কের ফুটপাত ঘেঁষে রাস্তার অনেকটা অংশ ময়লা পানিতে সয়লাব। কোনো প্রয়োজনে ফুটপাত থেকে সড়কে নামার জো নেই। এমনকি ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় সাবধানে চলতে হয়, কখন না আবার চলমান গাড়ির কারণে ময়লা পানি ছিটকে এসে জামাকাপড় নষ্ট করে দেয়।
শান্তিনগর মোড়েই এ রকম নোংরা পানি জমে আছে অনেকটা জায়গা জুড়ে। সেখানে একটি চায়ের দোকান চালান তারেক। জমে থাকা পানি নিয়ে কথা বললে তারেক জানান, তিন-চার দিন ধরে এখানে পানি জমে আছে। প্রায়ই এ রকম পানি জমে। সপ্তাহে একবার ড্রেন পরিষ্কার করা হয়। তবে পরিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গে ময়লা গিয়ে আবার ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
পানি জমার কারণ হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তারেক বলেন, প্রতিদিন মানুষ পলিথিনসহ নানা ধরনের ময়লা ফেলে ড্রেনের মধ্যে। এ কারণে ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ড্রেনের পানি ওয়াসার লাইনে যেতে না পেরে উপচে পড়ে। শুকনো দিনে যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে বৃষ্টির দিনে কী অবস্থা হবে তা নিয়ে চিন্তিত এ্ই চা-দোকানি।
শান্তিনগর মোড় থেকে কিছুটা উত্তর দিকে পোস্ট অফিস। তার সামনের সড়কে কয়েকটি খোলা ম্যানহোল। পানিপূর্ণ গর্তে ভাসছে খড়কুটো, কাগজ, পলিথিন, প্লাস্টিক দ্রব্যসহ নানা আবর্জনা। সেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী পাশের ডাস্টবিনের ময়লা পরিষ্কার করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে আছে ড্রেন বন্ধ থাকার কারণে। তারা প্রতি সপ্তাহে ড্রেন পরিষ্কার করেন, কিন্তু পরে আবার বন্ধ হয়ে যায়।
সিটি করপোরেশনের এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দাবি করেন, “মূল লাইনে আটকে থাকা ময়লা-আবর্জনা ওয়াসা পরিষ্কার করে না। আমাদের বাখারি মেরে ওয়াসার ড্রেন পরিষ্কার করতে হয়।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে শান্তিনগর এলাকা। ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, এখানে ৪০-৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রতিদিন রাস্তা ঝাড়ু দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা পরিষ্কার করে থাকেন। এখানে পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন আবদুল মালেক। রাস্তার উপরে পানি জমার কারণ হিসেবে আবদুল মালেক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ড্রেনের মুখ বন্ধ থাকার কারণে রাস্তায় পানি জমে আছে। সপ্তাহে আমরা এক-দুবার ড্রেন পরিষ্কার করে থাকি। কিন্তু ওয়াসার বড় ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করার কারণে এখানে প্রায়ই পানি জমে থাকে।”
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শান্তিনগর মোড়, শান্তিনগর পোস্ট অফিস, মালিবাগ সিআইডি অফিসের সামনেসহ ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে আছে শুধু ড্রেন পরিষ্কার না করার কারণে। সেখানে চলাচল করতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শুধু ডাস্টবিনের ময়লা পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত থাকেন।
শান্তিনগর মোড়ের একটি বইয়ের দোকানের মালিক আবদুর রহমান বলেন, “শুকনো মৌসুমে যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে বৃষ্টির দিনে কী হয় বুঝুন। ময়লা পানি থেকে বাঁচতে এখানে পথচারীদের জামা-কাপড় গুছিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। কখনো কখনো দ্রুতগামী গাড়ির চাকার ঘূর্ণনে ময়লা পানি ছিটকে এসে মানুষের পোশাক নষ্ট করে দেয়।”
রাস্তায় পানি জমার কারণ হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আবদুর রহমান বলেন, এই রাস্তার ড্রেনের মুখ খুব ছোট। সহজে পানি চলাচল করতে পারে না। তার ওপর পলিথিনসহ নানা ধরনের ময়লা ড্রেনের মধ্যে পড়ে ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রাস্তায় পানি জমে।
এ ব্যাপারে ওয়াসার জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল কাদের ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকায় ছোট ছোট ড্রেনগুলোর পরিষ্কারের বিষয়টি দেখে ঢাকা সিটি করপোরেশন। এসব ড্রেনের মধ্যে ময়লা পড়লে সেটা দেখা যায়। সহজেই পরিষ্কারও করা যায়্। তবে ওয়াসার লাইনেও কিছু সমস্যা থাকতে পারে। সেটা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/৪মার্চ/মোআ)