logo ১৪ জুলাই ২০২৫
নির্যাতনকারী স্বামীর সঙ্গে না থাকাই ভালো
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
১৮ এপ্রিল, ২০১৬ ১৮:১১:৫২
image



ঢাকা: প্রতিটি নারীই কিশোরী অবস্থা থেকেই একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের স্বপ্ন দেখা শুরু করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ স্বামী-সন্তান নিয়ে শুরু করে নানা ধরনের স্বপ্নের বীজ বুনন। কিন্তু বিয়ের পর অনেক নারীই তার স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পান না।






খবরের কাগজে প্রায়ই দেখা যায়, অনেক নববধূ তাদের হাতের মেহেদির রঙ না শুকাতেই পাড়ি দেন না-ফেরার দেশে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ঘটনার দায়ী পারিবারিক নির্যাতন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ রকমই একজন ভুক্তভোগী জানালেন তার নির্যাতনের কথা। পাশাপাশি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চেষ্টা করেছেন বিষয়টির সমাধান দেয়ার।   






ভুক্তভোগী নারী বলেন, “আমার বয়স ৩০। ২০ মাস হলো এক প্রকৌশলীর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। আমাদের পাঁচ মাসের একটি সন্তান রয়েছে। স্বামীর পরিবারের সঙ্গেই আছি। স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা সব সময় আমার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়। এই পরিবারের জন্য যতই পরিশ্রম করি না কেন, কোনো প্রশংসা পাই না। ছোটখাটো নানা বিষয় নিয়ে অযথাই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। তারা সব সময় আমার খুঁত ধরার চেষ্টা করে এবং প্রমাণ করার চেষ্টা করে আমি তাদের গুরুত্ব দিই না।






“গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের পর থেকেই শাশুড়ি আমার মা-বাবাকে অপমান করা শুরু করে। বিয়ের পর যখনই আমার বাবা আমাকে দেখতে এসেছে, আমার শাশুড়ি খুব কর্কশ আচরণ করেছেন, নয়তো আমার বিরুদ্ধে হাজার অভিযোগ করেছেন।






“স্বামীর সঙ্গে মাঝে মাঝে তর্ক-বিতর্ক হতো। এই সময় তিনি আমাকে প্রায়ই গালাগালি করতেন। সর্বশেষ আমার সঙ্গে ঝগড়া করার সময় সে এতটাই মারমুখী ছিল যে, আমার গায়ে হাত তোলে। যদিও এই ঘটনার পর স্বামী কান্নাকাটি করেছে। ওই ঘটনার পরপরই আমি বাবা-মার কাছে চলে আসি। তারপর থেকে আমার স্বামী একটি বারও ফোন দেয়নি। আমি তাকে ফোন করি। অবশ্য তিনি তখন স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছেন। দুই পরিবারের কেউই এই ঘটনা সম্পর্কে জানে না।






“এই পরিস্থিতির মোকাবেলা কীভাবে করব বুঝতে পারছি না। আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ছোট্ট শিশুটির কথা ভেবে তা পারছি না। দয়া করে সাহায্য করুন।”      






ভারতের ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী এবং লেখক ডা. সিমা হিনগোরানি ভুক্তভোগীর এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আমি আপনার বিষয়টি বুঝতে পেরেছি এবং সহানুভূতি প্রকাশ করছি। আমি আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করছি এই কারণে যে, আপনি নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য না করে নিজের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আপনি আপনার স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পারেন এবং শেষবারের মতো সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে অবশ্যই পরিষ্কার ভাষায় শর্ত দিয়ে ফিরে যাবেন। আমার মনে হয়, আপনার স্বামীকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত, যিনি তাকে পরামর্শ দেবেন কী করে আরও ভদ্র ও ভারসাম্যপূর্ণ দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষা করা যায়। তাকে (স্বামী) এই বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে হবে যে, তিনি কোনোভাবেই আপনাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করতে পারেন না।”






ডা. সিমা হিনগোরানি আরো বলেন, “দয়া করে ছোট্ট শিশুটির কথা ভেবে নিজের মধ্যে গ্লানি তৈরি করবেন না। ভেবে দেখুন, শিশুটি যখন দেখবে বাবা তার মায়ের গায়ে হাত তুলছে, তখন তার মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর চেয়ে আপনি একা থাকা অনেক ভালো। আমি এমন অনেক নারীকে দেখেছি যারা স্বামীর সঙ্গে সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার পরও ভালো চাকরি করছে এবং সন্তানদের সঠিকভাবে বড় করছে। তাই সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন এবং সুখে থাকার চেষ্টা করুন।”      






(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/এসআই/মোআ)