কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ): ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে এসে হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকাটাইমসের আটজন সাংবাদিক। বেধড়ক পেটানোর পাশাপাশি ছিনিয়ে নেয়া হয় সাংবাদিক পাস। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার পোনা গ্রামে ঘটেছে এ ঘটনা। হামলাকারীরা ছিল আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মসিউর রহমান খানের নেতাকর্মী পরিচয়ে সন্ত্রাসী ও ক্যাডার। পুলিশ সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেলেও রাতভর থানাতেই থাকতে হয়েছে তাদের। হামলার শিকার সাংবাদিকেরা হলেন, হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, মহিউদ্দিন মাহী, মোসাদ্দেক বশির, হাবিবুর রহমান, তানিম আহমেদ, বোরহান উদ্দিন, সৈয়দ ঋয়াদ এবং ফটোসাংবাদিক রাজিব নূর খান। শনিবার কাশিয়ানী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে এবং বোয়ালমারী উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হচ্ছে। দুই উপজেলার ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য সাংবাদিকরা ঢাকা থেকে এসেছে। শুক্রবার রাতে তারা একসঙ্গে অবস্থান করছিল।
হামলার শিকার সাংবাদিকেরা জানান, শুক্রবার রাতের খাবার খাওয়ার জন্য তারা কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় যান। সেখান থেকে তারা ফিরছিলেন কাশিয়ানীর পোনা গ্রাম হয়ে। তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল পোনা গ্রামে পৌঁছালে আগে থেকে ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা মই ফেলে রাস্তায় গাড়ির গতিরোধ করে। পরে সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলা করে প্রায় ৩০০ জন লোক। যাদের সবার হাতেই ছিল লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র। এসময় দু-একজন চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘ভোট হবে চুপিসারে। এখানে সাংবাদিক দিয়ে কী হবে? তোরা কেন আইছিস।’
এসময় ঢাকাটাইমসের ফটোসাংবাদিক রাজিব নূর খানকে এলোপাথারি পেটাতে থাকে সরকারি দলের ক্যাডাররা। এতে রাজিব নূরের পিঠ এবং কোমরের বেশকিছু জায়গায় গভীর ক্ষত হয়েছে। রাজিব জানান, তিনি মোটরসাইকেলে ওপর বসা ছিলেন। হামলার এক পর্যায়ে কয়েকজন তাকে টেনেহেঁচড়ে নামিয়ে ফেলে মোটরসাইকেলটিকে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর করে। পাশাপাশি বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটায়।
তাকে বাঁচাতে গেলে ঢাকাটাইমসের অন্য সাংবাদিকেরাও হামলার শিকার হন। পোনা গ্রামের স্থানীয় সন্ত্রাসীরা, হাতে থাকা লাঠি এবং ধারালো অস্ত্রের বাঁট দিয়ে বুকে ও পিঠে আঘাত করে। এসময় ফায়েকুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার নাম ফায়েক। ভুয়া সাংবাদিক পিটিয়ে আমার অভ্যাস আছে। নৌকার ভোট হবে দুই ঘণ্টায়। পোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বক্স ভরবে নৌকা মার্কার ভোটে। অন্য কারো ভোট দেয়া লাগবে না।’
কালু মৃধা সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, ‘ঢাকা ফিরে যা। তা না হলে ডাকাত বলে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেবো।’এসময় সাংবাদিকেরা তাদের শান্ত হতে বললে, জাপান মোল্যা নামে একজন বলেন, ‘শান্ত হবো তোদের মেরে। পুলিশ আসুক, সব বুঝতে পারবি।’
পরে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন কালু মৃধা, সালাউদ্দিন মৃধা, শামীম মৃধা, মামুন কাজী, মারুফ মোল্লা, তামীম মৃধা, এরশাদ মোল্যা প্রমুখ। হামলার পর সন্ত্রাসীরা আটকে রাখলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে সাংবাদিকদের গাড়িতে তুলে কাশিয়ানী থানায় নিয়ে আসা হয়। পুরো বিষয়টি খুলে বললে পুলিশ জানায়, ‘কিছু করার নেই। উপরের নির্দেশ; আজ রাত থানায় থাকতে হবে। ’কোন সেই উপরের নির্দেশ? জানতে চাইলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘খান সাহেবের নাম শোনেন নাই? ফারুক খান। তার প্রার্থী মসিউর রহমান খান। এমপি স্যার বলছেন, ভোট শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনাদের থানায় রাখতে।’ এসময় তারা সাংবাদিকদের নির্বাচন কমিশনের পাসগুলো জমা নেয়।
পরে শনিবার সকাল ৯টার দিকে কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেখে দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, ‘যা হবার হয়েছে। এখানে ভুল বোঝাবুঝি। কিছু মনে করবেন না। আমার জায়গায় আপনারা থাকলে এটাই করতেন।’
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা গণমাধ্যমের ওপর হামলা। আপনারা অভিযোগটি ইউএনওকে জানান। পরে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, ‘দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলার বিচার হওয়া উচিত। যতদ্রুত সম্ভব হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছি। কারা ওই হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে। হামলাকারীদের শনাক্ত করা গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো।’
(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এইচএফ/জেবি)