logo ১৮ এপ্রিল ২০২৫
শ্রমিকদের অধিকার আজও অধরা
০১ মে, ২০১৬ ২২:২৯:৫৬
image



সবার জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ও নিরাপদ কাজের অধিকারের দাবিতে আজো সোচ্চার শ্রমিক সংগঠনগুলো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়িত হয়নি।তাদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা কাজ করছে।পহেলা মে শ্রমিক দিবসে তাদের অধিকার নিয়ে ঢাকাটাইমসের মুখোমুখি হয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনরত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ । তিনি বলেছেন, দেশের প্রতিটি নাগরিক নিরাপদে বাঁচার অধিকার নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। একটি ন্যূনতম আয়সীমা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।






মে দিবস উপলক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন মহিউদ্দিন মাহী






ঢাকাটাইমস: আজ (১ মে) শ্রমিক দিবস। বিশ্বজুড়েই পালিত হয় দিবসটি।আমাদের দেশেরও। আসলে শ্রমিকরা কী ন্যায্য মজুরি পায়? কী বলবেন ।






আনু মুহাম্মদ:  জাতীয় ন্যূনতম মজুরি হচ্ছে ঘণ্টা, দিন, সপ্তাহ বা মাস ভিত্তিতে মজুরি। এদের একটা ন্যূনতম মজুরি থাকতে হবে।কোনো কাজে এর নিচে দেশের কোথাও, কোনো মজুরি বা বেতন হতে পারবে না। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে এই শর্ত পূরণ করতে হবে এবং এই মজুরি অবশ্যই বেঁচে থাকার প্রয়োজনে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ হতে হবে।আর এই মজুরি দারিদ্র্যসীমার আয়ের নিচে হতে পারবে না। সেটা কিন্তু আমাদের দেশে নেই। অনেকেই বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।






ঢাকাটাইমস: শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা নিয়ে নিয়ে যদি কিছু বলেন।






আনু মুহাম্মদ:  আট ঘণ্টা শ্রম দিবসের অধিকার এখন বিশ্বে এমনভাবে স্বীকৃত যে তাকে স্বতঃসিদ্ধ বলেই মনে হয়। কিন্তু এই অধিকার মানুষ এমনি এমনি পায়নি। তার জন্য অসংখ্য মানুষের শ্রম, ঘাম, মেধা কাজ করেছে, অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। যে ঘটনাপ্রবাহ এই মে দিবস তৈরি করেছিল, তার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল উনিশ শতকে, অনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কর্মক্ষেত্রে শিশু-নারীসহ শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতা ও নির্যাতন দূর করার জন্য কয়েক দশকে মানুষের চিন্তা, সক্রিয়তা ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।কাজের সময় কিংবা মজুরির তখন ঠিক ছিল না। ক্রমেই নারী-শিশুসহ শ্রমিকদের অবর্ণনীয় জীবন পরিবর্তনের জন্য অসংখ্য প্রতিবাদ–বিক্ষোভ তৈরি হয়। সংগঠন গড়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত তা আট ঘণ্টা কাজ করে বাঁচার মতো মজুরির অধিকারের দাবিতে একটি ঐকমত্য তৈরি করে।






ঢাকাটাইমস: কিন্তু পোশাক শ্রমিকসহ অনেক পেশায় ৮ ঘণ্টা কর্মঘণ্টা মানা হচ্ছে না।






আনু মুহাম্মদ: এটা ঠিক। বিশেষ করে পোশক কারখানায় শ্রমিকদের অনেক সময় দিতে হয়। ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় তারা দিয়ে থাকেন। এটাকে অবশ্যই কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য সরকারকেই তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসতে হবে।






ঢাকাটাইমস: শ্রমিক দিবসের ইতিহাস তো রক্তে ভেজা।






আনু মুহাম্মদ: আন্দোলনের ধারাবাহিকতাতেই ১৮৮৬ সালের মে মাসের প্রথম দিনে তিন লক্ষাধিক শ্রমিকের ধর্মঘটের মধ্যে অন্য অনেক শহরের মতো শিকাগো শহরেও বড় সমাবেশ হয়। আতঙ্কে হামলা করে রাষ্ট্র ও মালিকপক্ষ। প্রতিবাদে আবারও সমাবেশ, আবার হামলা। গুলিতে, সংঘর্ষে শ্রমিক নিহত হন, পুলিশও। পরে প্রহসনমূলক বিচারে সংগঠকদের ফাঁসি দেওয়া হয়।






ঢাকাটাইমস: নিম্ন আয়ের মানুষের তো কোনো কর্মঘণ্টা নেই।






আনু মুহাম্মদ: এত বছর পরেও আট ঘণ্টা কাজ করে বাঁচার মতো মজুরির অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে বাংলাদেশ অনেক দূরে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে নেহাত টিকে থাকতেও শুধু আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলেই হয় না, শিশুসহ পরিবারের একাধিক সদস্যকে কাজে যোগ দিতে হয়। এ ছাড়া মজুরিবিহীন শ্রমের অস্তিত্ব আছে, আছে নারীর অস্বীকৃত শ্রম।






ঢাকাটাইমস: আইএলও কনভেশন কী তাহলে মানা হচ্ছে না?






আনু মুহাম্মদ: ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগানাইজেশন- আইএলও কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করলেও সেই কনভেনশনে স্বীকৃত শ্রমিকদের বহু অর্থনৈতিক ও আইনগত অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষ নন, যাঁরা শ্রমিক বলে নিজেদের ভাবেন না—এ রকম পেশাজীবীরাও এখন পরিবারের একাধিক সদস্যের রোজগার ছাড়া জীবন চালাতে পারেন না।






ঢাকাটাইমস: এটা কী হওয়ার কথা ছিল?






আনু মুহাম্মদ: এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। একজনের আয়ে অন্তত চারজনের পরিবার বাঁচার মতো আয় করতে পারবেন সেটাই স্বীকৃত অধিকার। মজুরি কীভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে হতে পারে, এই প্রশ্ন খুবই জোরেশোরে তোলা দরকার।






ঢাকা: দেশে কী জাতীয় ন্যূনতম মজুরি আছে?






আনু মুহাম্মদ: বর্তমানে দেশে কোনো জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নেই। শ্রমিকদের মধ্যে খাতওয়ারি কিছু ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে, সব প্রতিষ্ঠানে তা-ও কার্যকর হয়নি। জাতীয় ন্যূনতম মজুরির অনুপস্থিতি, চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি থাকা এবং অসংগঠিত খাতের প্রাধান্যের কারণে সব পর্যায়ে মজুরি ও বেতনের ক্ষেত্রে সব সময়ই একটি নিম্নমুখী ঝোঁক বা টান থাকছে। ক্ষুদ্রশিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত যেখানে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান করে, সেখানে কোনো মজুরিবিধি নেই, সরকারেরও সে ক্ষেত্রে কোনো দায়-দায়িত্ব বা ভূমিকা দেখা যায় না।






ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ






আনু মুহাম্মদ: আপনাকেও ধন্যবাদ