logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
নববর্ষে বেপরোয়া উদযাপন বিষাদের কারণ হয়
০৯ এপ্রিল, ২০১৬ ১৯:৪০:২৯
image



বাঙালির সর্বজনিন লোক উৎসব পহেলা বৈশাখ সমাগত। চারদিকে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। ঢাক-ঢোল, বাদ্য-বাজনার আগাম অনুরণন দুলছে বাঙালি মনে। একই সঙ্গে উঁকি দিয়ে যায় অজানা আশঙ্কাও। গতবার যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারী নিগ্রহের ঘটনা কালিমা লেপে দেয় নববর্ষের উৎসবে।






তাই এবার আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশনা, পহেলা বৈশাখে বিকেল পাঁচটার মধ্যে নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে।






এ নির্দেশনার পক্ষে-বিপক্ষে দুই রকম প্রতিক্রিয়াই দেখা যাচ্ছে নাগরিক সমাজে। নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার বাঙালির আবহমান কালের উৎসব বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দি হওয়া যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনি বেপরোয়া উদযাপনও কাম্য নয় কারো। 






ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান যেমন বলেন, পহেলা বৈশাখে  উৎসব হবে, আনন্দও হবে; তবে কোনো ধরনের বেপরোয়া আনন্দ যাতে উৎসবে ব্যত্যয় না ঘটায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আবার শৃঙ্খলার বেড়াজালে পানসে হতে দেয়া যাবে না বাঙালির প্রাণের উৎসবকে।






পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে ঢাকাটাইমস কথা বলেছে অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সঙ্গে। শনিবার মুঠোফোনে ঢাবির এই শিক্ষক নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী।






ঢাকাটাইমস: আর কদিন পর পহেলা বৈশাখ। দিনটি নিয়ে কী ভাবছেন?






অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান: পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের প্রধানতম সর্বজনিন উৎসব। আনন্দঘন পরিবেশে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার আয়োজন থাকে ধনী-গরিবনির্বিশেষে। কেননা কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় তাই উদযাপিত হয় নববর্ষ। এবারও এর ব্যত্যয় হবে না আশা করি।






ঢাকাটাইমস: এ বছর পহেলা বৈশাখ উদযাপনে কিছু বিধি-নিষেধ জারি করেছে পুলিশ প্রশাসন। 






অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান: নববর্ষ আসে অপার আনন্দ আর আশা নিয়ে। প্রাণোচ্ছল আবাহনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটি আনন্দের একটি বিশেষ উপলক্ষ হলেও বিগত দিনে অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি আমরা। তাই হয়তো বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ। সেটি আমাদের মেনে নেয়া উচিত। শৃঙ্খলার মধ্য দিয়েই নববর্ষ উদযাপন করতে হবে। বেপরোয়া ও বিশৃঙ্খলভাবে দিনটি উদযাপন করা কোনোভাবেই উচিত নয়। বেপরোয়া উদযাপন বরং আনন্দের চেয়ে বিষাদের কারণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।






ঢাকাটাইমস: অনেকেই বলছেন, বিধি-নিষেধ আরোপে উৎসব প্রাণ হারাবে।






অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান: উৎসব অবশ্যই হবে। আমরা মনপ্রাণ দিয়েই উৎসব করব। তবে উচ্ছৃঙ্খল হব না, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যায়। আর এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সহযোগিতা করতে হবে। তবে এটা ঠিক, উৎসবের জন্য যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, বিকেল পাঁচটা পর‌্যন্ত, সেটা আরও বাড়ানো উচিত।






ঢাকাটাইমস: উৎসব অনুষ্ঠানের শেষ সময় কয়টা পর্যন্ত হতে পারে?






অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান: বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠান শেষ করতে হলে উৎসবপ্রিয় মানুষ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে। সময়সীমাটা সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত হলে নববর্ষ উৎসব পুরোপুরি উপভোগ্য হতে পারে।






ঢাকাটাইমস: এবারের পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ‘পান্তা-ইলিশ’বিরোধী প্রচার লক্ষ করা যাচ্ছে।






অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান: পান্তা কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। তবে ইলিশ বাঙালি সংস্কৃতির অংশ নয়। এটি সুস্বাদু মাছ। তবে দামি। সব সময়ই এই মাছ গরিবের নাগালের বাইরে ছিল, এখন তো আরো বেশি। তাই আমি মনে করি, পান্তা-ইলিশের বিরুদ্ধে প্রচারণা ইতিবাচক এবং যৌক্তিক। মূলত পান্তা-ইলিশ এখন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে।






ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।






অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ।






(ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/মোআ)