logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ উপস্থাপনায় সতর্ক হতে হবে: অধ্যাপক শাহীন ইসলাম
০৭ মার্চ, ২০১৬ ১৯:১৭:৩৮
image




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহীন ইসলাম। শিশুহত্যা বিষয়ক সংবাদ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সংবেদনশীলতা না থাকাও একটা বড় সমস্যা বলে মনে করেন তিনি। অপরাধের সংবাদ শিশুদের মনে যেন ভীতির সঞ্চার না করে সেদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী



কেন শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে?



মানসিক অবক্ষয় এবং সুষ্ঠু মনন লালনের ক্ষেত্র তৈরি না হওয়ায় মানুষের মধ্যে নিষ্ঠুরতা তৈরি হয়েছে। মানুষের মধ্যে মমত্ববোধ কমছে, শ্রদ্ধাবোধ নেই। ফলে দিন দিন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে সমাজের একটি বড় অংশ। আর এসবের শিকার হচ্ছে শিশুরা।



এখন তো দেখা যাচ্ছে নিজ ঘর বা স্বজনদের কাছেও তো শিশুরা নিরাপদ নয়।



সর্বত্রই মানসিক অবক্ষয় সংক্রমণ হিসেবে ছড়াচ্ছে। কেউ এর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এ কারণে নিজ ঘরেও নিরাপদ থাকতে পারছে না শিশুরা। সমাজের এই পরিবর্তনের দিকটি সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না বলেই সমস্যা বেড়েই চলেছে।



বনশ্রীতে দুই শিশু হত্যায় মায়ের নাম এসেছে। এই অভিযোগ সত্য কি না তা প্রমাণ হবে আদালতে। কিন্তু মায়ের নাম আসাটাও তো দুঃখজনক।



একজন মা কখন তার মাতৃত্বের চেয়ে অন্য কিছুকে বেশি গুরুত্ব দেন। তিনিই তো শিশু দুটিকে বড় করেছেন। নিজে অতি কষ্টে গর্ভধারণ করে লালনপালন করেছেন। কিন্তু সমাজের নৈতিকতা, অবক্ষয় এমন পর্যায়ে চলে গেছে, মা তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। জানি না তিনি এই অপরাধ করেছেন কি না, কিন্তু র‌্যাব জানিয়েছে তিনি নিজ সন্তানদের মেরে ফেলছেন। এর চেয়ে নারকীয় কিছু থাকতে পারে না।



এই অভিযোগ সত্য হলে তা কেন হতে পারে বলে মনে করছেন?



এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। পারিবারিক কলহ, অর্থনৈতিক সমস্যা। নানা কারণই থাকতে পারে। আমি সেটা বলতে পারব না। তবে মানুষ আত্মহত্যা কেন করে? পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেলে নিজে নিজের জীবনকে শেষ করে দেয়? কেউ বলতে পারে? তখন তার মনের ভেতর কী ছিল, তা তো আর জানা যাবে না।



আমাদের দেশে শিশু হত্যা নতুন নয়। বিভিন্ন সময় এমন ঘটনা ঘটে। কিন্তু বিচারে অনেক সময়ক্ষেপণ কি এ ধরনের হত্যা বেড়ে চলার একটা কারণ?



আমাদের দেশের বিচার প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে দীর্ঘ। অনেক সময় লাগে একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে। বিচার প্রক্রিয়া আরও সহজ হলে এমন হত্যা হয়ত কমে আসত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেলে মানুষ এ থেকে শিখত, অপরাধ করার বিষয়ে সাবধান হতো।



একের পর এক শিশু হত্যা চলছে, টেলিভিশন, পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার হচ্ছে। শিশুরাও সেসব সংবাদ দেখছে-পড়ছে, তাদের মনের ভেতর কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে? একটি ভীত প্রজন্ম কি গড়ে উঠছে?



অবশ্যই। প্রত্যেকটা ঘটনাই শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা কারও সঙ্গে মিশতে গিয়ে ভয় পেতে পারে, মানুষের প্রতি বিশ্বাস কমে যেতে পারে তাদের। এই মানসিক ক্রিয়ার প্রভাব পড়তে পারে তাদের শরীরেও।



বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে বড়দের বিরোধের জেরে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। কারও ওপর প্রতিশোধ নিতে তার শিশুকে অপহরণ করা হচ্ছে বা মেরে ফেলা হচ্ছে।



আগেই বলেছি, বিভিন্ন কারণে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে বড়দের বিরোধ তো আছেই। সমাজে যখন কোনো নৈতিক শক্তি এবং মানসিক শুদ্ধতার চর্চা কমে যায়, তখন মানুষের মধ্যে কলুষিত জিনিস বাসা বাঁধে। ফলে ঘটে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা।



যারা খুন করছে তাদের ঘরেও তো শিশু আছে।



মানুষ যখন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়, তখন তো তার আর বিচারশক্তি থাকে না। তখন সে যা খুশি তাই করতে পারে। নিজের জীবনেও একই ঘটনা ঘটলে কী ধরনের অনুভূতি হবে, তা বোঝার চেষ্টা করলেই অনেক কাজই আমরা করতে পারব না। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের এই সহমর্মিতার বোধটা থাকা খুবই জরুরি।



এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?



আমাদের প্রথাগত যেসব সামাজিক মূল্যবোধ আছে সেগুলো এখন অনেকের কাছেই গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ের দিকে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। এখন বড় অভাব সুশিক্ষা। শুধু জাতিকে শিক্ষিত করে তুললেই হবে না, সুশিক্ষা দিতে হবে, সম্মানবোধ তৈরি করতে হবে। আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ। গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদের কারণে অনেক সময় এ থেকে মানুষ প্রভাবিত হয়। এজন্য সংবাদ পরিবেশনেও যথেষ্ট সতর্ক হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। বিশেষ করে শিশুর প্রতি সংবেদনশীলতার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।