logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
ভালো প্রকাশকদের উৎসাহিত করা উচিত: মনিরুল হক
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:৩৫:৩১
image



চলছে অমর একুশে বইমেলা। রাজনৈতিক কোনো অস্থিরতা না থাকায় এবার বইমেলা গত দুইবারের চেয়ে জমে উঠেছে। প্রকাশকরা আশা করছেন এবারের মেলায় বিক্রির টার্গেট পূরণ হবে। প্রকাশনা শিল্পের নানা বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক। 






অনন্যার যাত্রা কবে শুরু হয়েছিল?






১৯৬০ সালে অনন্যা প্রকাশনী যাত্রা শুরু করে। এটি আমার পৈতৃক ব্যবসা। আমি মূলত ১৯৮৭ সাল থেকে প্রকাশনা ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত হই। আমি তখন লেখাপড়া শেষ করে অন্য ব্যবসার কথা ভাবছিলাম। তখন হঠাৎ করে মাথায় আসে আমি তো প্রকাশনা ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। ইমদাদুল হক মিলনের লেখা ‘পরীর তিন প্রেমিক’ বই দিয়ে আমার প্রথম প্রকাশনা শুরু। এভাবেই আমি আমার পৈতৃক প্রকাশনায় ধীরে ধীরে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করে নেওয়ার চেষ্টা করি।






তখন প্রকাশনা জগতের অবস্থা কেমন ছিল?






তখন প্রকাশনা জগতের অবস্থা এতটা উন্নত ছিল না। অনেক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে একটি বই বের হতো। পাণ্ডুলিপি পাওয়ার পর সেটি হ্যান্ড কম্পোজ, প্রুফ দেখা হতো, আবার পুনর্মুদ্রণ হতো। বর্তমানে প্রযুক্তি এতটা উন্নত যে, এখন চাইলেই দুই দিনে একটা বই বের করার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।






শুরুতে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন?






সত্যি বলতে তখন আমি তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হইনি। ব্যবসায়ের মধ্যে যদি সততা থাকে এবং সততার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতাই বাধা হতে পারে না। প্রকৃত পক্ষে আমাকে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি। পৈতৃক ব্যবসায়ের সূত্র ধরে আমি যে সব লেখকের বই প্রকাশ করতে চেয়েছি সফলতার সঙ্গে সেটি করতে পেরেছি।






আপনার প্রকাশনার সবচেয়ে বড় সফলতা কী?






প্রকাশনা জগতের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে আমার সততা। একমাত্র সততার গুণে আমার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে এতদূর নিয়ে আসতে পেরেছি। যেহেতু আমি বাংলাদেশের নাগরিক তাই বাংলাদেশ তথা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লেখা কোনো বই, ইসলাম, বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টান যেকোনো ধর্মের বিরুদ্ধে লেখা বই কখনোই প্রকাশ করব না। আমি জামায়াত সম্পর্কে লেখা বইও প্রকাশ করব না। আমি বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সাধারণত এই মৌলিক তিনটি বিষয় মাথায় রাখার চেষ্টা করি।






বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প সম্পর্কে আপনার অভিমত?






আসলে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে সরকার এখনো শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেনি। আমরা আশা রাখি অচিরেই এটি শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। তারপরও আমরা থেমে নেই। পৃথিবীর বড় বড় বইমেলাতে আমরা বাংলা ভাষায় রচিত বই, বাংলা সাহিত্যকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। একদিন আমরা সফল হব এটাই আমাদের প্রত্যাশা।






তথ্যপ্রযুক্তি দিন দিন উৎকর্ষ হচ্ছে, সেক্ষেত্রে প্রকাশনা শিল্পের ভবিষ্যৎ কী?






তথ্যপ্রযুক্তি তথা অনলাইন ভবিষ্যতে প্রকাশনা শিল্পের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে আমি এমনটা মনে করি না। উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি, আমি প্রতিদিন অনলাইনে পত্রিকা পড়া সত্ত্বেও ঘুম থেকে উঠে আগে প্রিন্ট মিডিয়া বা পত্রিকা না পড়লে মানসিকভাবে শান্তি পাই না। ঠিক একইভাবে কাগজ-কালির ছাপা বইয়ের গন্ধ, স্পর্শ পেতে চান এমন পাঠক সংখ্যাও কম নয়। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি হার্ড কপি বা প্রিন্টেড বইয়ের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না।






বইয়ের পাঠক কমছে, না বাড়ছে?






নিঃসন্দেহে বইয়ের পাঠক বেড়েছে। আগে বইয়ের প্রকাশক ছিল মাত্র এক শ থেকে দেড় শ যেটি বর্তমানে চার শ থেকে পাঁচ শ এসে পৌঁছেছে। তাই পাঠক বেড়েছে, লেখক বেড়েছে পাশাপাশি প্রতিবছর অনেক বই প্রকাশিত হচ্ছে। তাই আমি মনে করি যত পাঠাগার বাড়বে তত পাঠক বাড়বে।






একটি সমাজের জন্য বই কেন জরুরি?






আসলে বই আমাদের মেধা মনন বিকাশের একটি অন্যতম হাতিয়ার। যে মানুষ বই পড়তে পারে সে কখনো খুন করতে পারে না। যে পড়তে জানে বা পড়তে চায় সে কখনো খারাপ কাজ করতে পারবে না। তাই আমি মনে করি বইয়ের বিকল্প নেই। হুমায়ূন আমমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, সৈয়দ আহমেদ এরা কিন্তু সমাজে ব্যাপক পাঠক তৈরি করেছেন।






প্রকাশনা শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের কোনো করণীয় আছে?






আসলে সরকারের ভালো লেখক, ভালো প্রকাশকদের উৎসাহিত করা উচিত। ভালো বই বিভিন্ন পাঠাগারে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। সরকার নির্দিষ্ট সংখ্যক বই কিনে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিলে বইয়ের ওপর বেশি পাঠক তৈরি হবে। পাশাপাশি সরকার শুল্কমুক্ত কাগজের ব্যবস্থা করলে প্রকাশনা শিল্প আরও এগিয়ে যাবে।






অনন্যা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?






ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে প্রতি বছর যেন ভালো বই পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি। প্রতি বছরই আমরা পাঁচ থেকে দশজন নতুন লেখকের বই প্রকাশ করে থাকি। আমরা চাই আরও বেশি লেখক তৈরি করতে। তাই এ ধারাটি অব্যাহতভাবে বজায় রাখাই আমাদের একমাত্র লক্ষ।