logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
ছাত্রদলের এই কমিটি ‘ওয়ান টাইম প্রজেক্ট’
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৯:১১:২০
image



স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক অনেক কর্মসূচিতে একসময় সামনের সারিতে দেখা যেত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। সেই ‘তেজি’ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের পদবিক্ষেপ এখন আর রাজপথের আন্দোলনে দেখা যায় না। কারণ হিসেবে বলা হয়, সরকারের দমন-পীড়ন আর সংগঠনের অপূর্ণাঙ্গ কমিটির কথা। অবশেষে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সংগঠনটির গঠনতন্ত্রের প্রায় তিন গুণ সদস্য নিয়ে। তারপরও ছাত্রদল এখন পুড়ছে বিদ্রোহের আগুনে্। পদবঞ্চিত দাবিদারদের বিক্ষোভ, কেন্দ্রীয় কার‌্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। এত বড় কমিটি ঘোষণার পরও এই অসন্তোষ কেন?






ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের সঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের। তিনি এর কারণ হিসেবে বলছেন ‘নেতৃত্বজট’-এর কথা। একই সঙ্গে তার মতে, ছাত্রদলে নেতৃত্ব লাভের ক্ষেত্রে বয়সের সীমারেখা বেঁধে দেয়া সময়ের দাবি। নেতৃত্বে আনতে হবে নিয়মিত ছাত্রদের। তাহলে ফিরে আসবে ছাত্রদলের হারানো গৌরব।






বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোন সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক বোরহান উদ্দিন






ঢাকাটাইমস: ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের তিন গুণ বেশি সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন?






ফজলুল হক মিলন: এত বড় পরিসরে আসলে ছাত্রদলের কমিটি আগে কোনোদিন হয়নি এটা যেমন ঠিক, তেমনি কী কারণে এটি দিতে হলো তাও দেখতে হবে। সারা দেশে সব ক্ষেত্রে যে বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি হয়েছে, ছাত্রদলের কমিটি বড় হওয়ার পেছনে কিন্তু এটাও একটি কারণ। আগের মতো এখন আর স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার সুযোগ নেই। বিএনপির মতো বড় দল দুই বছর চেষ্টা করেও জাতীয় কাউন্সিল করতে পারছে না। ফলে দল, দলের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনে সেশনজটের মতো নেতৃত্বজট বেঁধেছে। ছাত্রদলেও তা-ই হয়েছে। সে কারণে নেতার সংখ্যা অনেক বড় হয়েছে কমিটিতে। তার পরও কিন্তু সবাইকে পদ দেয়া যায়নি। অন্তত এক হাজারের মতো নেতাকর্মী আছে, যারা পদ পাওয়ার যোগ্য।






তবে এটা স্থায়ী পদ্ধতি, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। যেটা দেয়া হয়েছে এটাকে ‘ওয়ান টাইম প্রজেক্ট’ বলতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করার পর অন্তত একটা সাংগঠনিক পরিচয় পাওয়া গেল।






ঢাকাটাইমস: টাকার বিনিময়ে কিংবা এলাকা বিবেচনায় অনেকে পদ পেয়েছে বলে অভিযোগ আছে?






ফজলুল হক মিলন: এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক। তবে সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমার যতটুকু সংশ্লিষ্টতা ছিল, তাতে বলা যায়, যোগ্যতা বিচার করেই পদ দেয়ার ব্যাপারটি জোরালো ছিল। তবে যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, সেটি উড়িয়ে দেয়া যাবে না। আবার সব অভিযোগ সত্য, সেটাও আপনি বলতে পারবেন না।






ঢাকাটাইমস: ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরই কেন্দ্রীয় কার‌্যালয়ে হামলা হয়েছে, এটা কীভাবে দেখছেন?






ফজলুল হক মিলন: ছাত্রদলের কোনো কর্মী দলের কার‌্যালয়ে হামলা করতে পারে, এটা আমার এখনো বিশ্বাস হয় না। বিএনপি যখন কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেই সময় এমন হামলা প্রমাণ করে এর পেছনে সরকারের ইন্ধন আছে। বিএনপি যেখানে একটা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে গেলে পুলিশ গুলি করে, সেখানে কিছু লোক নয়াপল্টনের মতো জায়গায় বিএনপির অফিসের চার তলায় উঠে আগুন লাগিয়ে, ভাঙচুর করে নির্বিঘ্নে বের হয়ে গেল পুলিশের সামনে দিয়ে! এটা কি করে প্রশ্নের বাইরে থাকে!  






হ্যাঁ, পদ না পাওয়ার কারণে কারও কারও মনে দুঃখ, ক্ষোভ থাকতে পারে। সেই ক্ষোভের প্রকাশ এভাবে ঘটাতে হবে, এটা কাম্য নয়। এটা নিন্দনীয়।






তবে কমিটি ঘোষণা নিয়ে আমাদের দেশে রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে এ ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ কিন্তু নতুন নয়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পরও এ ধরনের ঘটনা অতীতে দেখা গেছে।






ঢাকাটাইমস: বিএনপির কার‌্যালয়ে হামলায় জড়িতদের পরে ছাত্রদলে শীর্ষ পদ পাওয়ার ইতিহাস আছে। তাহলে কি হামলার দায় বিএনপির ওপর বর্তায় না?






ফজলুল হক মিলন: সন্তান যখন বেয়াদবি করে, পিতা-মাতা কি তার কাপড়-চোপড়, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়? দেয় না। ছাত্রদলেও এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে, যা নিয়ে সমালোচনা হওয়া যৌক্তিক নয় বললে ভুল হবে। আসলে সামনের দিনগুলোতে এমন স্পর্শকাতর বিষয়গুলো ভেবে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু মাদার সংগঠন হিসেবে আমরা এর দায় এড়াতে পারি না।






ঢাকাটাইমস: এবারের কমিটিতেও অছাত্রদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে। ছাত্রসংগঠনে নেতৃত্বে আসার ক্ষেত্রে বয়সসীমা বেঁধে দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।






ফজলুল হক মিলন: এটা এখন সময়ের দাবি। বিএনপিও এমনটা ভাবছে। কারণ নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে হলে অবশ্যই নিয়মিত ছাত্র ও নির্দিষ্ট বয়সের সময়সীমা থাকতে হবে। যেভাবেই হোক ছাত্রলীগে পদ্ধতিটি চালু হয়ে গেছে।






আমি মনে করি, সামনের দিনগুলোতে নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে কমিটি উপহার দিলে ছাত্রদল সারা দেশে সৃষ্টি হওয়া অচলায়তন ভেঙে দিতে সক্ষম হবে।






ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।






ফজলুল হক মিলন: ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকেও ধন্যবাদ।






(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/মোআ)