সোমবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ক্ষমতাসীন এই ছাত্রসংগঠনের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অতীত ঐতিহ্য। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই ছাত্রসংগঠন পালন করেছে অগ্রণী ভূমিকা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সংগঠনটির ভাবমূর্তিকে করেছে কালিমালিপ্ত। দেশের প্রাচীনতম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, কী ভূমিকা পালন করছে?
বর্তমান ছাত্রলীগের মূল্যায়ন নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার। টেলিফোনে এই স্বল্পদৈর্ঘ্য সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শামসুদ্দোহা।
ঢাকা টাইমস: আগামীকাল ছাত্রলীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠন নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাইছি।
শান্তনু মজুমদার: সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমাদের যতটুকু কথা বলার সুযোগ হয়, তাতে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রলীগের সেই যে ঐতিহাসিক ভূমিকা, সেই গৌরব সাম্প্রতিক সময়ে অনেকখানি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
ঢাকা টাইমস: এ পেছনের কারণ কী বলে মনে করেন?
শান্তনু মজুমদার: ক্ষুণ্ণ হওয়ার পেছনে ‘ছাত্রলীগ’ সংগঠনটি কারণ, তা বলব না। আসলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিতর্কিত করেছে। এটা অতীতে আমরা ছাত্রদলের ক্ষেত্রে দেখেছি, দুর্ভাগ্যজনক হলেও ছাত্রলীগের ক্ষেত্রেও দেখছি। ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে যদি এমনটা না হতো, সেটা অনেক ভালো হতো। কারণ ছাত্রলীগ একটি ঐতিহাসিক সংগঠন।
বাঙালির স্বাধীনতা-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা সেই ঐতিহ্য ও সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছে বলে আমি মনে করি না।
ঢাকা টাইমস: এ থেকে ছাত্রলীগের উত্তরণের উপায় কী?
শান্তনু মজুমদার: উত্তরণ ঘটাতে হলে, এখন যে কর্মকাণ্ড হচ্ছে এ বিষয়ে মূল সংগঠনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি মনে করি না, অনেক বড় বড় কথা বলে পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে। আসলে মূল সংগঠনকে সিস্টেমিটিক্যালি চিন্তা করতে হবে কীভাবে ছাত্রলীগকে শৃঙ্খলায় আনা যায়। কীভাবে ছাত্রলীগের যে গৌরবময় অতীত রয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি ঘটানো যায়। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা যেন ভয়ে নয়, ভালোবেসে এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায়, সংগঠনের হয়ে কথা বলতে চায়, সেই পরিবেশ যদি মূল সংগঠন তৈরি করতে পারে, তাহলে তারা দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা পাবে।
এখন যে অবস্থায় ছাত্রলীগ আছে, আমার সন্দেহ, ক্ষমতার বাইরে গেলে তারা বর্তমান অবস্থা নিয়ে টিকতে পারবে কি না! আবার বলব, এখন ছাত্রলীগের ব্যানারে যে অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড হচ্ছে, এ থেকে যদি জরুরি ভিত্তিতে বের হতে হয়, অবশ্যই মূল সংগঠনকে (আওয়ামী লীগ) প্রধানের ভূমিকা নিতে হবে। মূল সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে একটা সুচিন্তিত দিকনির্দেশনা দিতে হবে যাতে ঐতিহাসিক এই সংগঠনটি তার মূল কাজে ফিরে যেতে পারে।
ঢাকা টাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।
শান্তনু মজুমদার: আপনাকেও ধন্যবাদ।
(ঢাকাটাইমস/৩জানুয়ারি/মোআ)