সম্প্রতি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে খ্রিস্টান পরিবারের তিন ভাই-বোনকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে দিনাজপুরে ধার্মযাজকসহ সংখ্যালঘু পরিবারে হামলা হয়েছে। রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন হয়েছেন দুজন বিদেশি ও কয়েকজন ব্লগার। সরকার এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বললেও বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা এগুলোর মধ্যে দেখছেন পারম্পর্য। সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়ানো এমন ঘটনা কেন বারবার ঘটছে? এসব বিষয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে খোলামেলা কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. দেলাওয়ার হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী।
ঢাকাটাইমস: সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে।
অধ্যাপক দেলাওয়ার হোসেন: সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা্- বিষয়টি এভাবে দেখলে চলবে না। প্রতিটি হামলাই অপরাধ। এগুলোকে অপরাধের দিক থেকেই বিবেচনা করতে হবে।
ঢাকাটাইমস: ব্লগার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও বিদেশিদের ওপর ‘টার্গেট হামলা’ হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য কী বলে মনে করেন?
অধ্যাপক দেলাওয়ার হোসেন: আসলে সমাজে যখন অপরাধ সংগঠিত হয়, তখন এটাকে একেকজন একেক স্বার্থে ব্যবহার করে। ব্লগার, বিদেশি হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য দুই ধরনের হতে পারে। এক. রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য- সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। দুই. জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড বা উগ্রপন্থা- আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের অংশ হিসেবে তারা হত্যাকাণ্ড চালায়।
ঢাকাটাইমস: তাহলে দেশে জঙ্গি আছে বলে আপনি মনে করছেন?
অধ্যাপক দেলাওয়ার হোসেন: দেশে জঙ্গি আছে কি না সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বক্তব্যেই প্রতীয়মান হয়। বিদেশি হত্যাসহ আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে জেএমবি সদস্যরা জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেএমবিকে তো সবাই জঙ্গি হিসেবেই মনে করে।
ঢাকাটাইমস: কিন্তু সরকার বলছে দেশে জঙ্গি নেই।
অধ্যাপক দেলাওয়ার হোসেন: সরকার তাদের অবস্থান থেকে এ ব্যাপারে বক্তব্য দিচ্ছে বটে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
ঢাকাটাইমস: বারবার একই ধরনের হামলা হচ্ছে।
অধ্যাপক দেলাওয়ার হোসেন: হামলা কেন হয়। যখন অপরাধ করে একজন, আর বিচার হয় আরেকজনের, তখন হামলাকারীরা ফের হামলা চালানোর উৎসাহ পায়। এ জন্য বারবার হত্যাকাণ্ড হয়।
ঢাকাটাইমস: সম্প্রতি সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনাগুলোর মধ্যে অনেক মিল দেখা যাচ্ছে।
অধ্যাপক দেলাওয়ার হোসেন: এটা হতে পারে, হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে হয়তো একটা যোগসূত্র আছে। তবে পুলিশের বিভিন্ন তথ্যে আমরা দেখছি- সম্প্রতি যেসব হত্যাকাণ্ড বা হামলা ঘটেছে, তাতে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিবর্তন এসেছে, যদিও হামলার ধরন একই।
ঢাকাটাইমস: একের পর এক হত্যাকাণ্ড বা হামলা হলেও অপরাধী শনাক্ত বা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হচ্ছে না কেন?
অধ্যাপক দেলাওয়ার হোসেন: সাধারণভাবে বলতে গেলে- আমাদের সমাজ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির কথাই বলতে হয়। যখন কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন পরস্পরকে দোষারোপ করার প্রবণতা প্রবল। এর মধ্য দিয়ে অপরাধীরা আড়াল পায় বলে ঘটনার আসল রহস্য ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।
ঢাকাটাইমস: এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
অধ্যাপক দেলাওয়ার হোসেন: প্রতিটি ঘটনারই অপারেশনাল আসপেক্ট আছে। যখনই কোনো হত্যাকাণ্ড বা হামলার ঘটনা ঘটবে, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হবে সেটি পরিষ্কার করা। আইনের আওতায় আনতে হবে প্রকৃত অপরাধীকে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অপরাধীরা নানা আধুনিক সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে। তাই পুলিশকেও ইকুয়েপ্ট হতে হবে। আর অবশ্যই তদন্ত কাজে পেশাদারি বজায় রাখতে হবে; রাজনৈতিক গেম খেলানো যাবে না।
তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হলো সরকারের সদিচ্ছা ও সহযোগিতা। অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকেই।
জাতির সামনে প্রকৃত অপরাধীকে উপস্থাপন করা গেলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড অনেক কমে আসবে।
ঢাকাটাইমস: সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে কি আর কারও ভূমিকা নেই?
অধ্যাপক দেলাওয়ার হোসেন: সমাজে অপরাধ দমন রাতারাতি হয়ে যাবে তা নয়। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলা। সর্বোপরি রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুললে এ ক্ষেত্রে বড় সাফল্য পাওয়া যাবে। এভাবে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে সমাজ থেকে অন্যায়-অনাচার অনেকাংশে দূর করা সম্ভব।
ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক দেলাওয়ার হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/মোআ)