অন্তত একটি নির্বাচন হলে পরে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হবে বলেই মনে করেন বিলুপ্ত স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো এর ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করলে গোটা রাজনীতিতে এক ধরনের স্থিতিশীলতা আসতে পারে। তবে এ জন্য পরমতসহিষ্ণুতা জরুরি বলে মনের করেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলেছেন তানিম আহমেদ
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সুবিধা বা অসুবিধা কী?
সুবিধা রাজনৈতিক দলের জন্য। সাধারণ মানুষের কোনো সুবিধা নেই। রাজনৈতিক দলের সুবিধা হলো তারা বিনা পরিশ্রমে কিছু নেতা-কর্মী পেয়ে যাবে। যারা নির্বাচন করবে তারা দলের প্রতীকে নির্বাচন করবে, এতে দলের জন্যই সুবিধা হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষমতা আরো সংকুচিত হবে। যারা কোনো দলকে সমর্থন করে না, তাদের পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ মানুষ দলীয় প্রতীকগুলোকে বেশি চেনে। তখন ব্যক্তি প্রার্থী গৌণ হয়ে যাবে। দলীয় সমর্থন বড় হয়ে যাবে। তবে এই নতুন আইনের ফলাফল বুঝতে হলে এর প্রয়োগ দেখতে হবে। অন্তত একটা নির্বাচন হলে পরে সাধারণ মানুষও এর প্রভাব বুঝতে পারবে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় সরকারের ইতিবাচক বিকাশ হলে দলীয় রাজনীতির মধ্যে বা দলের ভেতরে স্থিতিশীলতা আসতে পারে। তবে এটা এখনো দেখার বিষয়।
তাহলে এই আইন পাসে সরকার কি একটু তাড়াহুড়ো করেছে?
বিষয়টি নিয়ে নানা পক্ষের সঙ্গে সরকার আলোচনা করলে পারত। এটা জনদাবি ছিল বলে আমি মনে করি না। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী কৌশল হিসেবে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য এ কৌশল নিয়েছে।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে মনোনয়ন প্রক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত?
মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি আইন আছে যেটি জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রক্রিয়া কি হবে এটা নিয়ে কোনো নীতিমালা হয়নি। দলগুলো একটি নীতিমালা নিয়ে আসুক যে, তাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া, প্রার্থীদের যোগ্যতা কি হবে? রাজনৈতিক দলের মধ্যে এর একটি কাঠামো তৈরি করে জনগণের কাছে প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে সব দল তো এ আইনকে গ্রহণ করেনি। যারা স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন করার মতো দল তারা এখনো কোনো ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেনি। সেজন্য সর্বদলীয় একটি কাঠামো তৈরি করার বিষয়টি আমরা এখনো ভাবতে পারছি না। তবে মনোনয়ন প্রক্রিয়াটা খুবই দরকারি এবং এর মধ্যে একটি শৃঙ্খলা দরকার। এই শৃঙ্খলাটা যত ভালো হয় ততই দল ভালো যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারবে এবং দল চাইবে যোগ্য ব্যক্তিটিই মনোনীত হয়। তাহলেই দলের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তাতে মনোনয়ন নিয়ে বহু রকমের ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা শোনা যায়। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখতে হবে এ প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের নয় রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে চিন্তা আসতে হবে।
এ নির্বাচনের ফলে স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে কোন্দলে পড়ার আশঙ্কা আছে কী?
রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোন্দল তো সবসময়ই লেগে আছে। স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তা আরও বাড়তে পারে। কারণ যিনি মনোনয়ন পাবেন না, তিনি তো অসন্তুষ্ট হবেন।
স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে সংঘাতে এবার রাজনৈতিক দলগুলো জড়িয়ে পড়বে এমন কথা বলছেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিরোধীরা, আপনার মতামত কী?
রাজনীতিতে যদি সহিষ্ণুতা থাকত তাহলে তো সংঘর্ষের কথা আসত না। এখন দলীয়ভাবে নির্বাচন না হলেও সংঘর্ষ হয়। এটা তো হলো আইনের শাসনের ব্যাপার। প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে এর সমাধান করতে হবে। তা করতে না পারলে কেউ একজনকে উস্কে দেবে বা প্রশাসন থেকে সহায়তা করলে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
ভোটারদের শিক্ষিত বা সচেতন করার বিষয় না থাকলে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তির গুণাগুণ কম গুরুত্ব পাবে। এদিক থেকে নাগরিক সমাজের দায়িত্ব কি হওয়া উচিত?
আমাদের ভোটাররা অসচেতন, এটা আমি মনে করি না। তারা যথেষ্ট সচেতন। এ কারণেই তারা এখন ভোটকেন্দ্র-বিমুখ হয়ে গেছে। এখন মানুষের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে গেছে। আর মানুষ বিগত নির্বাচন থেকে বুঝে নিয়েছে আমি গেলেও যে ভোট হবে, না গেলেও সে ভোট হবে। এটা খুব মারাত্মক একটি প্রবণতা, যেটা আমাদের রাজনীতিতে শূন্যতার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচন সুষ্ঠু করার দিক থেকে কমিশনের কী ঘাটতি আছে?
দেশের বিগত নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হয়নি। তাই হঠাৎ করে এ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার গ্যারান্টি নেই। যেখানে আগের নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি সেখানে কি জাদু চেরাগ নির্বাচন কমিশন বা সরকারের কাছে আছে যাতে বলা যাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে? এ ঘাটতি আমাদের রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার বেদনা আমাদের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে।