logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে: অধ্যাপক দিল আফরোজ
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ২০:৪৮:২৯
image

দেশের চলমান শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো উচিত বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম।


তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো প্লানিং নেই। স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও আমরা সুনির্দিষ্ট ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারিনি। এখনও আমরা পরীক্ষণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এটাই আমাদের হতাশার কারণ।’


সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হয়েছিলেন বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই অধ্যাপক। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী।


ঢাকাটাইমস: বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?


অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম: বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা মোটেই ভাল নয়। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করে আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।


ঢাকাটাইমস: আমূল পরিবর্তন টা কী?  


অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম: আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আসল জায়গায় সমস্যা রয়ে গেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে আমরা নতুন পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করলাম। যার নাম সৃজনশীল। এটা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ।


তিনি প্রশ্ন রাখেন-কিন্তু, আমরা কি এই সৃজনশীল পদ্ধতির লেখাপড়া করানোর জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক আছে? নেই। আমাদের তো ভালো ভালো শিক্ষক তৈরি করতে হবে। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।


ঢাকাটাইমস: শিক্ষা পেশায় তো ভালো শিক্ষক আসছে না?


অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম: এখানেই আমাদের হাত দিতে হবে। ভালো ছাত্ররা যেন শিক্ষাগত পেশায় আসে সেই ব্যবস্থা আমাদের প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে। বেতন কাঠামো বাড়াতে হবে। তাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।


ঢাকাটাইমস: কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার মানোন্নয়নে ভাল বেতন কাঠামোই কি যথেষ্ট?


অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম: মোটেও নয়, ভাল বেতন কাঠামো হচ্ছে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টদের আকর্ষণের একটা উপায়। কিন্তু এর সঙ্গে আরও অনেক বিষয় জড়িত। বিশ্ব মানের কোনো গবেষণাগার আমাদের দেশে নেই, যেখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে। বিশ্বমানের গবেষণা হবে। বিশ্ব মানের পাবলিকেশন্স বের হবে। তাহলেই আমরা একটা মান সম্পন্ন জায়গায় যেতে পারবো।


ঢাকাটাইমস: আর কী করা যেতে পারে?


অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম: আমাদের শহর এবং গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। শহরে সব ভালো ভালো শিক্ষক। আর গ্রামে ভালো মানের কোনো শিক্ষক নেই। এই সমস্যা সমাধানে ভালো শিক্ষকদেরকে নিয়োগের পর তিন বছর ডেপুটেশনে গ্রামে পাঠাতে হবে। সেখানে তারা সার্ভিস দেবে। প্রায়োজনে তাদের ইনসেনটিভ দিতে হবে। এভাবে শহর এবং গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে। ডাক্তারদের মধ্যে এই প্রাকটিসটা কিন্তু আছে। নিয়োগের পরই তাদের গ্রামে পোস্টিং করা হয়।


ঢাকাটাইমস: সরকার শিক্ষায় যে বাজেট দেয় তা কি পর্যাপ্ত?


অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম: আমাদের দেশে শিক্ষার বাজেট অত্যন্ত কম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের দেশের শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বরাদ্দ কম। আমরা যদি এশিয়ার মধ্যে সিঙ্গাপুরের কথা চিন্তা করি, তাহলে দেখা যাবে- সেখানে মানবসম্পদ উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় সেদেশের সরকার। তারা জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করে। এজন্য বিশ্বের সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আমাদের দেশেও কিন্তু প্রচুর জনবল আছে। আমরা সেগুলো সম্পদে পরিণত করতে পারি। এখানে শুধু সঠিক নির্দেশনা ও প্লানিংয়ের অভাব।


ঢাকাটাইমস: আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়নে কী করণীয়?


অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম: আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালো গবেষণা হয় না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজই হওয়া উচিত গবেষণা। এর কনসেপ্টও কিন্তু তাই। অথচ আমাদের দেশে হচ্ছে এর উল্টো। বড় সমস্যা হচ্ছে ফান্ড নেই। ভাল ল্যাবরেটরি নেই। ডাইরেক্টেড গবেষণা হয় না। যেটা আমাদের দেশে হওয়া উচিত।   


 


ঢাকাটাইমস: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এক্ষেত্রে কী করছে?


অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম:  আসলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কিছু করার নেই। এই সংস্থার কাজ হচ্ছে সুপারশি করা। বাস্তবায়নের মতো কোনো ক্ষমতা এই কমিশনের নেই।


ঢাকাটাইমস: এটাকে শক্তিশালি করতে কোনো উদ্যোগ কি নেয়া হয়েছে?


অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম: আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান বিষয়টি দেখছেন। তিনি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। দেখা যাক সেগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়।


ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।


অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম:  আপনাকেও ধন্যবাদ।