logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
“আওয়ামী লীগে ১৫-২০ টাকা দিয়ে লোক পাওয়া যায়”
১৮ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০১:২৫
image


বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগে ১৫-২০ টাকা দিয়ে লোক পাওয়া যায়। এরা হচ্ছে ঘেটু। মিয়া আছে তো তার পেছনে ১৫ জন। কিছু আছে পানি পেলেও মনে করে ধন্য ধন্য।’ সোমবার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত তো রাজনৈতিক এক্সক্লুশনে বিশ্বাস করে। তাদের মধ্যে আমাদের নামের (হিন্দু) কোনো দালাল নেই। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে রাজনৈতিক ইনক্লুশনে। তাদের মধ্যে দালাল আছে। যারা ১০-২০ টাকায় বিক্রি হয়।’

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- হাবিবুল্লাহ ফাহাদ

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে কারা আছেন?

এই সংগঠনের তিনজন সভাপতি। একজন হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধে ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল সি আর দত্ত বীরউত্তম। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আরেকজন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। আরেকজন সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। যিনি পাবর্ত্য চট্টগ্রামের মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেছেন। শান্তি বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। আমি আছি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।

এই সংগঠন গড়ে তোলার পেছনে কী লক্ষ্য ছিল?

ঐক্য পরিষদ গঠন আসলে জাতির জন্যে লজ্জার।

এই সংগঠনের কাজ কী?

সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে সেটা এড়াতে একটি হতে পারতো অনেকের মতো দেশ ত্যাগ করা। সেটা আমরা করতে পারি। এখন কথা হচ্ছে আমি করবো কিনা? যদি আমরা তাই করতাম তাহলে ঐক্য পরিষদ গঠনের কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু আমরা মনে করি, পালিয়ে যাবো কেন দেশটা তো আমারও। সেখানে আমরা মনে করেছি আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। দাঁড়ানোর এই লড়াইটাই মানবাধিকারের লড়াই।

ঐক্য পরিষদের আন্দোলনের লক্ষ্য কী?

ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আজও আমরা নাগরিক অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছি। অবশ্যই গণতান্ত্রিক ধারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মাথায় রেখেই এই আন্দোলনটিকে এগিয়ে নিতে চাই। আজকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিকভাবে ধর্ম বৈষম্যবাদকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ সংবিধান বলছে- ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গের নামে মানুষে মানুষে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।

সংবিধানে তো সংশোধনী আনা হয়েছে...

মৌলিক অধিকার যাই থাকুক আমার সংবিধানের যে প্রথম অধ্যায় এটাকে দুর্বল করে দিচ্ছে ধর্মীয় বৈষম্য। যে কারণে, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদ তৃণমূলে গ্রথিত হয়েছে। শেখ হাসিনা চারটি মূলনীতি সংবিধানে ফিরিয়ে এনেছেন ঠিকই কিন্তু সেখান থেকে এরশাদ এবং জিয়ার প্রেত্মাকে তিনি মুছে ফেলতে পারেননি।

কেন এটা সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন?

মানুষের চেতনায় যদি সাম্প্রদায়িকতা অনুপ্রবেশ করে তাহলে সেখানে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়। আজকে আওয়ামী ওলামা লীগ বলে তারা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। অথচ জামায়াতে ইসলামী যা বলে না তারা তার চেয়ে বেশি বলছে। তাহলে ঘটনাটা কী?

এখন কী করতে হবে?

আওয়ামী লীগকে হয় বলতে হবে ওলামা লীগ আমাদের। ওরা যা বলছে আমরা সেটা চাই। অথবা বলতে হবে, না আমরা এসব চাই না। এক জায়গায় তাদের আসতে হবে। ওলামা লীগ আজকে শরিয়াহ আইনের কথা বলছে। এটা জামায়াতও কখনও বলে না। বোঝা যাচ্ছে, আমরা সংকটে আছি।

কী ধরনের সংকট?

প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির মধ্যেই বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা বেঁধে গেছে। আমাদের চলার পথে সংকট সরকার নয়, দল নয় দুর্বৃত্ত। যারা দল ও সরকারকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। আমার আমাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার এবং দলকে সচেতন করতে চাই।

কী এমন ঘটেছে যে মনে করছেন সরকারকে সচেতন করতে হবে?

দলের মধ্যে যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া না থাকে সত্যিকারের নেতৃত্ব গড়ে না ওঠে তাহলে গণতন্ত্রের জন্যই সংকট। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। কুষ্টিয়ায় শোক শোভাযাত্রা করতে গিয়ে ছাত্রলীগের একটি ছেলে আরেকটি ছেলেকে মেরে ফেললো। এ ধরনের ঘটনা হতে পারে না। আশরাফ সাহেবরা বললেন, কোনো বিলবোর্ড টানানো যাবে না, কারো চেহারা দিয়ে। করলে বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনা পর্যন্ত। কথাটা কেউ রাখলো? দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনাও কেউ মানলো না। ২০১৯ সালে তো আপনাকে নির্বাচনে যেতে হবে। ভোট তো জনগণ দেবে। চিরকাল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হবে না।

আপনারা বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তথ্য তুলে ধরেন। এই ধরনের তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করেন?

বাংলাদেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আমাদের সংগঠন আছে। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে সেখানেও আমাদের শাখা আছে। এখন অবাধ তথ্য প্রবাহের সময়। কারো ওপর আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে না। গণমাধ্যম তো আমাদের সামনে আছে। দ্বিতীয়ত আমাদের তৃণমূলের সংগঠন থেকে খবরাখবর পাচ্ছি।

কীভাবে খবর পাচ্ছেন?

যেখানেই হামলা হচ্ছে সেখান থেকেই কান্না আসছে ‘দাদা রক্ষা করেন।’ সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করছি। সামান্যতম ক্ষেত্রে আমরা সফল হই, যদি জনবান্ধব প্রশাসন হয়। যদি জনবিরোধী প্রশাসন এবং রাজনীতিক থাকে তাহলে দুর্বৃত্তায়নের কাছে আমরা অসহায়।

গণমাধ্যমে যে খবরগুলো আসে সেগুলোই আপনাদের ভিত্তি?

অবশ্যই। এখন তো খবরগুলো পত্র-পত্রিকায় আসছে।  আগে এতো ঘটনা ঘটতো কিন্তু গণমাধ্যমে আসতো না। আমরা সভা-সমাবেশ করলেও তার খবর সংবাদপত্রে আসতো না।

সমাজে অনেকের সময় প্রতিহিংসাবশত কিংবা কারো স্বার্থ বিঘিœত হলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে অপপ্রচার করা হয়। তাহলে এটা কতটুকু সঠিক?

এসব তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তৃণমূলে খবর নেই। তৃণমূলের সংগঠনকে সেখানে পাঠিয়ে বলি তোমরা এগুলো নিয়ে আন্দোলন করো। মানববন্ধন করো, সভা করো। সেখান থেকে তো আমরা রিপোর্ট পাচ্ছি।

গত ৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও সম্পত্তি দখলের যে তথ্য তুলে ধরেছেন এগুলো কি তৃণমূল থেকে পেয়েছেন?

হ্যাঁ, এগুলো তৃণমূলে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তৃণমূল থেকে খবর আসার পর কোথাও কোথাও আমরা গিয়ে সেগুলোর খতিয়ে দেখি।

কিন্তু আপনি সংবাদ সম্মেলন করার পর ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, ফরিদপুর থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাই পাল্টা প্রতিবাদ করেছে...

বিএনপি-জামায়াত তো রাজনৈতিক এক্সক্লুশনে বিশ্বাস করে। তাদের মধ্যে আমাদের নামের (হিন্দু) কোনো দালাল নেই। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে রাজনৈতিক ইনক্লুশনে। তাদের মধ্যে দালাল আছে। যারা ১০-২০ টাকায় বিক্রি হয়। তারা শেখানো কথা বলে। অথবা অনেক জায়গায় ভয় সৃষ্টি করে রাখা হয় সেখানে বাধ্য হয়ে তাদের এসব করতে হয়। ফরিদপুরের অরুণ গুহ মজুমদার কেন দেশ ছাড়লো? কী তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করলো?

আপনি কি অরুণ গুহ মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেছেন?

দেখেন বিষয়টা যেহেতু ইতিমধ্যে একভাবে আছে অতএব আমি এই মুহূর্তে আপনার এই প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি না।

ফরিদপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যানারে যারা আপনার কথার প্রতিবাদ করছে তারা তো আপনাদের সংগঠনেরই নেতা।

কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার একটা কথা আছে, জানেন? এই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে পারে না বিএনপি-জামায়াত। আওয়ামী লীগে ১৫-২০ টাকা দিয়ে লোক পাওয়া যায়। এরা হচ্ছে ঘেটু। মিয়া আছে তো তার পেছনে ১৫ জন। কিছু আছে পানি পেলেও মনে করে ধন্য ধন্য। এদের দিয়ে আপনি সামগ্রিক বিষয়টাকে বিচার করতে পারবেন না।

আমরা ফরিদপুরের স্থানীয় পর্যায়ে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেনেছি অরুণ গুহ মজুমদার ও তার পরিবার ব্যক্তিগত কাজে ভারতে আছেন। কাজ শেষে তারা ফিরবেন। আপনারা এ ব্যাপারে কিছু জানেন?

আপনি যেটা বলছেন এ সম্পর্কে আমার কোনো জ্ঞান নেই। আসলে তো ভালো। তাহলে এই ঘটনার যবনিকাপাত হবে। অরুণ মজুমদার যদি ফিরে আসেন এবং বলেন যে, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাহলে আমরা তো সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবো। তার গলায় ফুলের মালা দেবো।

আপনি বলছেন এতকাল পর তিনি ভারত গেলেন, এর পেছনে অবশ্যই কারণ আছে। এমনও তো হতে পারে, তিনি হয়তো প্রয়োজন বোধ করেননি তাই যাননি। এবার গিয়েছেন এজন্য প্রথমবার হয়েছে।

আমরাও তো ভারত যাই। কিন্তু বেড়াতে বা কাজে যাই। আবার ফিরে আসি। আমার কথা হচ্ছে, অরুণ মজুমদার দেশত্যাগ করেছেন কিনা?

দেশত্যাগ করার কোনো প্রমাণ কি আপনাদের কাছে আছে?

শুনুন, আমাদের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে, মানুষ দেশত্যাগ করছে কিনা।

অরুণ মজুমদারের সম্পত্তি আসলেই দখল হয়েছে কিনা এটা পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে আপনারা স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ আনলেন?

আমরা তো কোনো অভিযোগ করিনি। সংবাদ সম্মেলনে আমরা বলেছি, ‘আমরা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে লক্ষ্য করছি একজন মন্ত্রী তিনি ফরিদপুরের ভুবনডাঙ্গার জমিদার বাড়ির মালিক অরুণ মজুমদারের কাছ থেকে জোরপূর্বক বাড়ি বায়না করে নিয়েছেন। সেখানে বাড়ি এবং মন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে।’ তার পরের লাইনটা হলো ‘আমরা এটাকে বিশ্বাস করতে চাই না। তবে ঘটনাটি যদি সত্যি হয় তাহলে আমাদের প্রশ্ন এদেশের সংখ্যালঘুরা যাবো কোথায়?’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের যে সূত্র আপনারা দিচ্ছেন সেখানে তো অনেক সময় বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচার করা হয়...

আমি আবারও বলছি সংবাদ সম্মেলনে আমরা বলিনি, ‘হি হ্যাজ ডান ইট।’ আমরা বলছি না, এটা সত্য।

আপনি বলেছেন মন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অরুণ মজুমদার মন্দিরটি সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সামনে তার জমিতে প্রতিস্থাপন করেছেন। সেখানে বাড়িও করবেন।

এগুলো আমরা দেখিনি। বাড়ি করলে করুক। সবচেয়ে ভালো হয় তিনি দেশের এসে এই  কাজগুলো করলে আমরা তো মন্ত্রীকে ধন্য ধন্য বলবো।

আপনাদের তৃণমূলের যেসব প্রতিনিধি ফরিদপুরে আছেন তারা কি এ ব্যাপারে কোনো তথ্য আপনাদের জানায়নি?

তৃণমূলে কিন্তু সাফোকেশন আছে।

যদি অরুণ মজুমদার ফিরে এসে বলেন আপনারা যা বলছেন এসবের কিছুই সত্য নয়...

অবশ্যই আমরা তা মেনে নেবো। আমরা তো মানুষের দেশত্যাগ চাই না।

তাহলে তো তখন সেটা আপনাদের দুঃখপ্রকাশের পর্যায়ে চলে যাবে?

দুঃখ প্রকাশ কথা তো বলছি না। সেটা তো নির্ভর করে।

প্রামাণ্য কোনো তথ্য-প্র্রমাণ ছাড়া হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কোনো তথ্য উপস্থাপন করলে এবং পরবর্তীতে এটি নিয়ে বিতর্ক হলে এতে ঐক্য পরিষদের ভাবমূর্তির কোনো ক্ষতি হয় না?

না, এতে ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে কেন?