দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আসে তার তদন্ত পুলিশই করে। ফলে দুর্বল তদন্তের কারণে কোনো শাস্তি হয় না।
তবে এ থেকে উত্তরণের জন্য অভিযুক্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তদন্ত আলাদা বিভাগ বা বাহিনী দিয়ে করাতে হবে। তারা সুপ্রিমকোর্টের অধীন থাকবে বলে মত দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি পুলিশকে যেকোনো মূল্যে জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসার উপর গুরুত্বারোপ করেন মিজানুর রহমান। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নানা কথা বলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী।
ঢাকাটাইমস: সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি পুলিশের দুর্বল তদন্ত প্রতিবেদনের কথা বলেছেন। আপনিও নানা সময় একই কথা বলেছেন।
মিজানুর রহমান: পুলিশের দুর্বল তদন্তে দুর্বলনার কারণে অনেক আসামি ছাড়া পেয়ে যায়। আবার অনেক নির্দোষ ব্যক্তির সাজা হয়। যে কারণে প্রধান বিচারপতিও প্রশ্ন তুলেছেন।
ঢাকাটাইমস: সমস্যাটা কোথায়?
মিজানুর রহমান: তদন্ত কাজে যারা জড়িত তাদের প্রশিক্ষণের অভাব একটি বড় কারণ। একটি মামলা তদন্ত করতে হলে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়। সেগুলোকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হয়। সেগুলো মানা হয় না।
ঢাকাটাইমস: প্রশিক্ষণের অভাবই কী একমাত্র কারণ?
মিজানুর রহমান: না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যদি ঘুষ খেয়ে প্রতিবেদন দেয় তাহলে তো পক্ষপাতমূলক তদন্ত হয়। বিদেশে তদন্ত কর্মকর্তাকে অকাট্য তথ্য প্রমাণ হাজির করা হয়। ফলে অভিযুক্তরা সহজে পার পেতে পারে না। আর আমাদের দেশে নানাভাবে প্রভাবিত হয়ে তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেয়ার ফলে আইনের ফাঁক দিয়ে আসামিরা বের হয়ে যায়। বিচারকদেরও কিছু করার থাকে না।
আরেকটি সমস্যা হচ্ছে পুলিশকে দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করানো হয় না। উপরের প্রভাব খাটানো হয়।
এজন্য আমরা দেখি ইউরোপ-আমেরিকায় শাস্তির হার ৯০ শতাংশ। আর আমাদের দেশে খালাসের হার ৯০ শতাংশ।
ঢাকাটাইমস: এই সমস্যা সমাধানের উপায় কী?
মিজানুর রহমান: কর্মকর্তাকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের কাজের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে। ঘুষ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে।
ঢাকাটাইমস: পুলিশের আচরণ নিয়ে আপনি অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু আচরণ তো পরিবর্তন হয়নি। বরং নাগরিকদের হয়রানি আরও বাড়ছে।
মিজানুর রহমান: ন্যায়বিচারের একটা সাধারণ ধারণা আছে। সেটি হচ্ছে ‘ওয়ান ক্যান নট বি এ জাজ অব হিজ ওউন কেইস। অর্থাৎ নিজের বিচার নিজে করা যায় না। আমরা যদি এটি বিশ্বাস করি এবং মানি তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশই। ফলে বিচার আর হয় না। এজন্য আচরণও পরিবর্তন হয় না। পুলিশ মনে করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো লোক নেই। ফলে তারা যে আইনের ঊর্ধ্বে- এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রের আচরণেও ভুল বার্তা গেছে। যার দায়ভার আজ বহন করতে হচ্ছে জাতিকে। এর অকাট্য প্রমাণ হচ্ছে বরিশালের পুলিশের ঘুষের তহবিল সংগ্রহ।
ঢাকাটাইমস: এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
মিজানুর রহমান: এ থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আসবে সেগুলো তদন্ত করবে পৃথক বাহিনী বা বিভাগ। সেই বিভাগ সুপ্রিমকোর্টের অধীন কাজ করবে। তাহলে আর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকবে না।
ঢাকাটাইমস: অনেক আলোচিত মামলায় পুনরায় তদন্ত হচ্ছে। তার মানে কি পুলিশ তদন্ত করতে ব্যর্থ?
মিজানুর রহমান: একটি কথা আছে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। আমাদের দেশে আসলে আইন নিজস্ব গতিতে চলে না। আইন সেই গতিতে চলে আইনকে যেই গতিতে চালানো হয়। এই সত্যটাকে আমরা কখনও স্বীকার করি না। কারণ এই সত্যটা আমরা পছন্দ করি না। আমরা পছন্দ করি আইনকে নিজেদের গতিতে চালাবো। আইনকে আমি বলে দেবো কোন গতিতে চলবে। এই জন্য আলোচিত মামলা বার বার তদন্ত হচ্ছে কিন্তু কোনো কিনারা হচ্ছে না।
ঢাকাটাইমস: এ জন্য কারা দায়ী?
মিজানুর রহমান: এই জন্য ক্ষমতাসীনরা দায়ী। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা তাদের স্বার্থে মামলা তদন্ত করান। ধরুন ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলের নেতাদের নামে মামলা করল। সেই মামলার গতি কেমন থাকবে। আবার যখন বিরোধী দল সরকারি দলে যাবে তখন এই মামলাগুলোর কী হবে? হয়তো এই মামলা প্রত্যাহার হবে। না হয় ধামাচাপা পড়ে যাবে। আর বিরোধী দলর উপর নতুন মামলা খড়্গ নামবে। এভাবে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণ অনেক মামলার তদন্ত হয় না। হলেও আবার নিজেদের স্বার্থে পুনরায় তদন্ত করা হয়। এসব কারণে আলোচিত রাজনৈতিক মামলাগুলোর রায় হয় খুব দেরিতে। এই রাজনৈতিক প্রভাব খুব বেশি প্রকট এবং মারাত্মক। এটি ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
ক্ষমতায় থাকলে মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ কেমন হবে। না থাকলে কেমন হবে সে বিষয়গুলো উল্টে যায়। ফলে মামলার সঠিক রায় হয় না। এই যে নিজের সঙ্গে প্রবঞ্চনা। এই প্রবঞ্চনার জন্য মামলাগুলোর বিচার হয় না। কোনো সভ্য সমাজে এটা হতে পারে না।
ঢাকাটাইমস: বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুরাহা হয় না। কেন?
মিজানুর রহমান: যতোক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র এগুলোকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা না করবে। যতোক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র এগুলোকে প্রত্যাখ্যান না করবে, যতোক্ষণ না এগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্র জিরো টলারেন্স দেখাবে ততোক্ষণ পর্যন্ত আইনের শাসন বলা কিন্তু মিথ্যা বুলি আওরানো ছাড়া আর কিছুই হবে না। সুতরাং এই মিথ্যা না বলে আমাদের আইনের শাসনের প্রতি যদি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকে, ন্যূনতম অঙ্গীকার থাকে তাহলে কিন্তু আমাদের দেশে এই ধরনের অমানবিক বিচার বহির্ভূত হত্যা থাকবে না। আর পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা তো আগেই বলেছি। আমাদের মানবাধিকার কমিশনে ৭০ শতাংশ অভিযোগ আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত না হলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সুরাহা হবে না।
ঢাকাটাইমস: অজ্ঞাতনামাদের নামে মামলা দেয় পুলিশ। এটা মানবাধিকারের দৃষ্টিতে কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
মিজানুর রহমান: অজ্ঞাতনামাদের নামে মামলাটা কিন্তু পুলিশের একটি বাণিজ্য। তারা যে কাউকে ধরে ওই অজ্ঞাতনামায় নাম ঢুকিয়ে জ্ঞাত করে দেয়। এটার জন্য তারা বিশাল অঙ্কের টাকা লেনদেন করে। এসব তো অবশ্যই মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এটাকে কোনো বিবেকবান মানুষ সমর্থন করতে পারে না।
ঢাকাটাইমস: গাজীপুরে কিশোরী সংশোধন কেন্দ্রে নির্যাতনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি আপনাকে চিঠি দিয়েছিলেন। এটার অগ্রগতি কেমন?
মিজানুর রহমান: এটার খুব ভাল অগ্রগতি হয়েছে। যেই কিশোরীদের উপর নির্যাতন করা হয়েছিল তাদের বিষয়ে আমরা আলাদাভাবে উদ্যোগ নিয়েছি। এরপর ওই কিশোরীদের মুক্তি দেয়া হয়েছে।
ঢাকাটাইমস: আপনি অনেক হাসপাতাল, কারাগার পরিদর্শন করেছেন। এসব জায়গায় ভোগান্তি এবং দুর্দশা লাগোবে সরকারকে সুপারিশও করেছেন। সেগুলোর কী অবস্থা?
মিজানুর রহমান: আসলে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আমার ক্ষমতা সীমিত। আমি শুধু সুপারিশই করতে পারি। কিন্তু বাস্তবায়ন তো করতে হবে সরকারকে। সেখানে আমার খুব বেশি কিছু করার থাকে না।
ঢাকাটাইমস: উল্লেখযোগ্য কিছু উন্নতির কথা যদি বলতেন।
মিজানুর রহমান: উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আগে আমাদের কথা কেউ শুনতো না। এখন সরকারের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে আমাদের জন্য আলাদা ডেস্ক করা আছে। সেখানে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিতে পারি। ভুক্তভোগীর সহযোগিতায় কাজ করতে পারি।
ঢাকাটাইমস: আমাদের দেশে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া পরও সেগুলো কার্যকর হয় না। অনেক দিন পড়ে থাকে। এটি কেন?
মিজানুর রহমান: এটা নিয়ে কিন্তু আমি কয়েকদিন আগে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিয়েছি। যে মানুষটিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হল বিচারের দীর্ঘ সূত্রতার কারণে সে কিন্তু বছরের পর বছর কারাগারের কনডেম সেলে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ইতোমধ্যে ১০/১৫ বছর পার হয়ে গেছে। প্রতিটি দিনই কিন্তু সে বার বার মৃত্যু বরণ করছে। এই যে অসহনীয় যন্ত্রণা আমি কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি। এটা কিন্তু আইন ব্যবস্থা বা ন্যায় বিচার সমর্থন করে না। আমাদের দেশে যদি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতেই হয় তাহলে একজন মানুষকে সেটা না করে বছরের পর বছর আটকে রেখে বার বার মৃত্যু যন্ত্রণা দেয়া কিন্তু আরও বেশি অমানবিক। এটিও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। আশা করছি প্রধান বিচারপতি এসব দিকে নজর দিবেন।
ঢাকাটাইমস: দীর্ঘসূত্রতার পেছনে কারণ কী?
মিজানুর রহমান: পেপার বুক তৈরি করার জন্য রায় কার্যকরে দেরি হয়।
ঢাকাটাইমস: এর সমাধান কী?
মিজানুর রহমান: এটার সমাধানে আমরা সুপ্রিমকোর্টকে পরামর্শ দিয়েছি। আমরা বলেছি পেপার বুক তৈরি হয় সরকারি বিজি প্রেসে। বিজি প্রেসে সরকারের অনেক কাজ হয়। সেখানে সুপ্রিমকোর্টের পেপার বুক তৈরি করতে সময় লেগে যায় বছরের পর বছর। এজন্য আমরা সুপ্রিমকোর্টের জন্য আলাদা প্রেস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছি। তাহলে অনেক সময় কমে আসবে। যাতে শুধু পেপার বুক তৈরির কারণে একজন মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়।
ঢাকাটাইমস: মৃত্যুদণ্ড রহিতের বিষয়টি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। আইনমন্ত্রী বলেছিলেন এটা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। আপনার মত কী?
মিজানুর রহমান: মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে কিন্তু বিশ্বব্যাপী বিতর্ক রয়েছে। ইউরোপ হয়তো একটু এগিয়ে গেছে। তারা মনে করে মৃত্যুদণ্ড কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশে আবার মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে, কিন্তু সেটা রহিত করা আছে। তারা মৃত্যুদণ্ডকে অটোমেটিক্যালি যাবজ্জীবনে কনভার্ট করে। নৈতিক এবং মানবিক কারণে এটা করে থাকে।
ঢাকাটাইমস: নৈতিক এবং মানবিক কারণে কি মৃত্যুদণ্ড রহিত করা উচিত?
মিজানুর রহমান: না। শুধু নৈতিক এবং মানবিক কারণে নয়। সবচেয়ে বড় যে কারণ সেটি হচ্ছে- একজন বিচারক যে তথ্য প্রমাণের উপর রায় দেন সেটি যে একেবারে নির্মহ সত্য সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আর কোনো ভুলের উপর নির্ভর করে যদি আপনি একজন মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেন তাহলে সেটা কিন্তু কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা কিন্তু গ্রেটেস্ট আর্গুমেন্ট। কারণ আপনি তো একজন মানুষের জীবনকে কখনও ফিরিয়ে দিতে পারবেন না।
এখানে লন্ডনের একটি বিখ্যাত মামলা আছে। যেখানে একজন ব্যক্তিকে হত্যার জন্য চারজন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। রায়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু সেই মামলা আবার রিভিউ করে দেখা গেল প্রকৃত আসামি ওই চার জন নয়। এরই মধ্যে চারজনের একজন কারাগারে মারা যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে মারা গেলে তার জীবন আপনি কিভাবে ফিরিয়ে দেবেন।
ঢাকাটাইমস: সবার জন্য কী মৃত্যুদণ্ড রহিত হতে পারে বলে মনে করেন?
মিজানুর রহমান: অবশ্যই নয়। ঘৃণ্য এবং জগন্য অপরাধীদের ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। যেমন যুদ্ধাপরাধীসহ আরও আলোচিত মামলার আসামিদের ক্ষেত্রে বিকল্প মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
ঢাকাটাইমস: ফেলানী হত্যার বিচারের রায় নিয়ে আপনার মূল্যায়ণ কী?
মিজানুর রহমান: ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার আমরা পাইনি। বিশ্বের কোনো আইনে নেই একজন নিরস্ত্র মানুষকে আপনি গুলি করে মারবেন। আপনি অনন্ত তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করতে পারেন।
ঢাকাটাইমস: এখন করণীয় কী?
মিজানুর রহমান: এখন ফেলানীর বাবা ভারতের উচ্চতর আদালতে যেতে পারে।সেখানকার মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে। তবে এই মামলার ফলে ভারতের যে আদালতের প্রতি মানুষের মধ্যে সুনাম ছিল সেখানে কালিমা লেপন হয়েছে।
ঢাকাটাইমস: ন্যায় বিচার নিশ্চিতে আইনি কী কী সংস্কার জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
মিজানুর রহমান: জরুরি ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ, আদালত প্রতিষ্ঠা। পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
ঢাকাটাইমস: মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আপনি যেই স্বপ্ন নিয়ে এসেছেন তার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে বলে মনে করেন?
মিজানুর রহমান: আমার স্বপ্ন ছিল আমি দৌঁড়াবো। কিন্তু আমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছি। আমি দ্রুত হাটতেও পারছি না। এখানে অনেক কিছু ইচ্ছা থাকলেই করা যায় না। অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
ঢাকাটাইমস: দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন বলে আপনার কাছে মনে হয়?
মিজানুর রহমান: মানবাধিকার একটি বহুমাত্রিক ধারণা। এর সঙ্গে মানুষের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন জড়িত। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিষয়ে কতটুকু নজর দেয়, তার ওপর মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেকখানি নির্ভর করে। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি পূর্বের তুলনায় খুব একটা হেরফের হয়েছে বলে মনে করার কারণ নেই। সরকার কতটুকু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে, তার ওপর নির্ভর করছে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি না অবনতি হচ্ছে।
ঢাকাটাইমস: মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
মিজানুর রহমান: রাষ্ট্রের প্রত্যেক কর্মকাণ্ডই মানবাধিকারের ওপর প্রভাব ফেলে। মানবাধিকার পরিস্থিতি নির্ভর করে সমাজে আইনের শাসন কতটুকু দৃঢ় তার ওপর। ফলে বলা যেতে পারে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র অগ্রণী ভূমিকা রাখে। আমাদের দেশে আইনের শাসন খুব দুর্বল। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ আইন লঙ্ঘন, অবজ্ঞা করে। যা শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনে পরিণত হয়। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের ভূমিকা আরও দৃঢ় হোক- এ প্রত্যাশা করি।