‘দুদক নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত একটি সংস্থা। যেটা আইন দিয়ে বিধিবদ্ধ। কোনো দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা ব্যবসায়ী এগুলো মুখ্য বিষয় নয়। দুর্নীতি এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিই মুখ্য বিষয়, তিনি যেই হোন না কেন।’ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্পর্কে এভাবেই দৃঢ়তা ব্যক্ত করছিলেন সংস্থাটির কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। সম্প্রতি একান্তে আলাপ হয় তার সঙ্গে।
দুদক কার্যালয়ে বসে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে অভিজ্ঞতা, দুদক কমিশনারের দায়িত্ব এবং নিজের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের নানা বিষয়ে কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, ‘নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এজন্যই দুদকের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে বলে মনে করি। তবে দুদক নিয়ে অপপ্রচারও রয়েছে। এখন যদি বলা হয় ক্ষমতাসীন দল দিয়ে প্রভাবিত হয়ে দুদক বিরোধী দলের প্রতি কঠোর হয়েছে। বিরোধী দলকে দমন করা হচ্ছে দুদককে ব্যবহার করেÑ এটা উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা হবে। তবে ভাবমূর্তির বিষয়টি দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ সমালোচনা করেন। কেউ বলেন ভালো করছেন। কেউ বলেন দুদক প্রভাবিত হয়ে কাজ করছে। যে যেভাবে এটা গ্রহণ করে সেটা তার ব্যাপার। আমরা মনে করি জনস্বার্থে যা করছি তা ভালোই করছি।’
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন আপনার দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিস্তারিত যদি বলতেন।
২০০১ সালের নির্বাচনের পরে যারা সরকার গঠন করেছিল সেই সময় তারা যে দল বা জোট নির্বাচনে পরাজিত হয় তাদের সমর্থক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সারা দেশে নির্যাতন চালায়। সেটা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে শুরু হয়। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে বলতে গেলে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ তা-ব চলে।
কী ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল?
হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটতরাজ, সম্পদ লুণ্ঠনের শত শত ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় জাতীয় বিবেকে নাড়া দেয়। আন্তর্জাতিক বিশ্বও এনিয়ে সোচ্চার হয়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার সংগঠনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, মহিলা আইনজীবী সমিতি এ ধরনের বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অনুসন্ধান করে।
তখন নাগরিক সমাজ নামে একটি কমিটি করা হয়েছিল...
হ্যাঁ, এই কমিটিতে প্রথিতযশা আইনজীবীরাও ছিলেন। তারা উপদ্রত অঞ্চল পরিদর্শন করেন এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন জমা দেন। যেটা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকার প্রকাশিত হয়।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয় কখন?
নাগরিক সমাজের প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমে সংবাদের ওপর ভিত্তি করে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট করা হয়। হিউম্যান রাইটস পিচ ফর বাংলাদেশ এই রিটটি করে।
রিটের পরে কী নির্দেশনা এসেছিল?
হাইকোর্ট সরকারকে নির্দেশ দেয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে সহিংসতার ঘটনা অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার। সেই আদেশের পর তৎকালীন সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করে দেয়। আমাকে তিন সদস্যবিশিষ্ট সেই কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়।
কমিশনের অন্য দুজন সদস্য কারা ছিলেন?
বাকিদের মধ্যে পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার বর্তমানে ডিআইজি মীর শহিদুল ইসলাম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব মনোয়ার হোসেন আকন্দ। বর্তমানে তিনি যুগ্মসচিব।
প্রতিবেদন জমা দিতে কয়দিন সময় লেগেছিল?
আমরা এক বছর তিন মাস কাজ করেছি। এটা খুব অসম্ভব একটা কাজ ছিল। কারণ, শত শত ঘটনার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। একটি কমিশন দিয়ে এত ঘটনা তদন্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। কারণ, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যেকোনো একটি ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। শত শত ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেখানে একটি মাত্র কমিশন কী করতে পারে?
কিন্তু তারপরও প্রায় ১৫০০ পৃষ্ঠার একটা প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন...
সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বিবেকের তাড়নায় আমরা এই অসাধ্য কাজ করার জন্য আন্তরিকভাবে তৎপর ছিলাম। আমরা সরেজমিনে ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করি। সেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতা পাই।
যারা সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তাদের বক্তব্য কীভাবে তুলে এনেছিলেন?
ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি নেই। তারা তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। সেগুলোর ভিত্তিতে অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিভিন্ন সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন এক বছর তিন মাস পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেই।
প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু কী ছিল?
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এটা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এটাকে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আমি এই প্রতিবেদনে বলেছিলাম ‘রুদ্ধকালের ঘটনাপঞ্জি।’ এই হিসেবে প্রতিবেদনটিকে চিহ্নিত করেছিলাম।
পরে প্রতিবেদনটি গেজেট হয়েছে...
আদালতের নির্দেশে এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। যেটা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। গেজেটটি এখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছে। আমার জানা মতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনটিই একমাত্র গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
দুদকের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার ব্যাপারে কাজ করেছেন। কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে?
দুদক নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত একটি সংস্থা। যেটা আইন দিয়ে বিধিবদ্ধ। কোনো দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা ব্যবসায়ী এগুলো মুখ্য বিষয় নয়। দুর্নীতি এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিই মুখ্য বিষয়, তিনি যেই হোন না কেন। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এজন্যই দুদকের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে বলে মনে করি। তবে দুদক নিয়ে অপপ্রচারও রয়েছে।
কী ধরনের অপপ্রচারের কথা বলছেন?
এখন যদি বলা হয় ক্ষমতাসীন দল দিয়ে প্রভাবিত হয়ে দুদক বিরোধী দলের প্রতি কঠোর হয়েছে। বিরোধী দলকে দমন করা হচ্ছে দুদককে ব্যবহার করেÑ এটা উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা হবে। তবে ভাবমূর্তির বিষয়টি দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার।
দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি কী?
কেউ সমালোচনা করেন। কেউ বলেন ভালো করছেন। কেউ বলেন দুদক প্রভাবিত হয়ে কাজ করছে। যে যেভাবে এটা গ্রহণ করে সেটা তার ব্যাপার। আমরা মনে করি জনস্বার্থে যা করছি তা ভালোই করছি।
ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের দুর্নীতিও অনুসন্ধান করেছে দুদক...
মূলত আমাদের কাছে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দল বলতে কিছু নেই। এই দৃষ্টিভঙ্গি সামনে রেখে অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেছি। দলমত নির্বিশেষে যার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনের দায়বদ্ধতা থেকে যেটা করার সেটাই করেছি। কেউ মুক্তি পেয়েছেন, কারো বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে, কেউ বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এটা তো আমাদের অব্যাহত প্রক্রিয়া।
ছাত্রজীবনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এর পেছনে অনুপ্রেরণা কী ছিল?
একটি আদর্শিক ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি বিশ্বাস করতাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে, অনুপ্রেরণায় এবং প্রবল ইচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হতে থাকে। যেহেতু আমি ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলাম বলা চলে সরাসরিভাবে মুক্তিযুদ্ধের সকল ধাপের সঙ্গেই ছিলাম।
শুরুটা কোথা থেকে?
ছয় দফা থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, একাত্তর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের জন্য ধারাবাহিক সংগ্রামের প্রত্যেকটির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমাদের আরোধ্য স্বপ্ন সাধিত হয় দেশ স্বাধীনের মধ্য দিয়ে। এর সকল কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুর এবং এ দেশের জনগণের।
আপনার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের নানা অভিজ্ঞতা দুদক কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনে কী ধরনের সহায়তা করছে?
যখন আমি যুবক-তরুণ বয়সে একটি আদর্শভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হই, পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাই। মুক্তিযুদ্ধের পর পরই আমি মাস্টার্স পাস করি। পরে একটি কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি। এরই মধ্যে আমার আইনের ওপর লেখাপড়াও শেষ হয়। পরে আইনজীবী হিসেবে পাবনা জেলা জজ কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করি।
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় আপনাকে কারাগারে যেতে হয়েছিল...
আইনজীবী পেশায় থাকাকালীন সময়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের রচনা হয়। তখন সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম, তাই খুনি মুশতাক সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী দিয়ে গ্রেপ্তার হই এবং কারারুদ্ধ হই।
এরপর কী হয়েছিল?
কারারুদ্ধ অবস্থায় ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হই। কিন্তু এই ভেবে নিজেকে বুঝ দেই যে, যেখানে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে, জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে আমি তো জীবিত আছি, দিনের আলো দেখতে পাচ্ছি। যে কারণে আমার কারারুদ্ধ জীবন ও নির্যাতন আমাকে খুব একটা স্পর্শ করেনি।
তখন আপনার পরিবারের অবস্থা কী ছিল?
আমি কারারুদ্ধ থাকা অবস্থায় আমার পরিবারের ওপর অনেক নির্যাতন হয়। পরে আমি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসি। কিন্তু মনের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করি।
জুডিশিয়াল সার্ভিসে এলেন কীভাবে?
তৎকালীন বিসিএস জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগদান করি। তারপর ২৫টি বছর এই পেশার বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত ছিলাম। জেলা জজ পর্যন্ত হয়েছি। বিসিএস জুডিশিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের পর পর দুবছর নির্বাচিত মহাসচিব ছিলাম। পরে যেটা জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন হয়েছে। এটা ১৯৯৫-৯৬ সালের কথা।
বিচারক পেশা থেকে অবসরের পর কী করতেন?
অবসরের পর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্র্যাকটিস শুরু করি। ওই সময়ই আমি ২০০১ সালের নির্বাচন- পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করি।
সাংবাদিকতাও করেছেন?
কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময় আইন ও বিচার কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। কখনো আইনজীবী কখনো বিচারক। শুরুর দিকে সাংবাদিকতাও করেছি। তৎকালীন সময়ে দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার পাবনা জেলা প্রতিনিধি ছিলাম। সে হিসেবে পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্যও আমি।
এরপর দুদকের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন...
যেহেতু কর্মজীবনে বিচার বিভাগের সঙ্গে বেশি জড়িত ছিলাম সেক্ষেত্রে আমাকে যখন দুদকের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন আমি এটা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেছি। কারণ, এখানেও আধা বিচার বিভাগীয় কাজই হয়। যেখানে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনের কাজ।
এই কাজটা কি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন?
এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং বটে। কারণ এখানে আইন নিয়ে বেশি কাজ করতে হয়। প্রতিরোধের কাজও আছে। সেই দিক থেকে আমি এনিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যই বোধ করি।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি কি অন্তরায় নয়?
অবশ্যই অন্তরায়। তবে একটা জিনিস আমি নিজের মধ্যে লালন করি সেটা হচ্ছে, দেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত করতে হলে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মতো ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ অনুসরণ করতে হবে।
বিষয়টি আর একটু যদি পরিষ্কার করেন...
বঙ্গবন্ধুর ভাষণে মুক্তি হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি। একটি অধ্যায় হচ্ছে স্বাধীনতা। এটা অর্জন করেছি। এখন মুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এই মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে হলে দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। যেটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। তিনি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন।
দুর্নীতি ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে কী করতে হবে?
দুর্নীতি ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে অবশ্যই অঙ্গীকার থাকতে হবে, দুর্নীতিকে কীভাবে নির্মূল করা যায়। মূলত নির্মূলটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি নির্মূল করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে আমিও দ্বিধা প্রকাশ করছি।
তাহলে কী করা যেতে পারে?
জনগণকে সম্পৃক্ত করে স্বাধীন কমিশন দুদক আত্মনিয়োগ করলে দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে। এ জন্য যা যা করা দরকার আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে...
মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের (এমডিজি) অনেক সূচকে আমরা এগিয়ে আছি। সামনে আমাদের যে সময় থাকবে সেখানে সরকারের সদিচ্ছার কারণে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সক্ষম হব। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা নিয়ে সরকার যেভাবে এগোচ্ছে তাতে যদি আমরা অংশগ্রহণ করতে পারি তাহলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবেই।
দুদক এ ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখতে পারে?
দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারলে দুদক তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পেরেছে বলে মনে করব। সেজন্য সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে আমাদের অংশগ্রহণ তো থাকতেই হবে।
আপনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। কিন্তু তারপর আবারও আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, কেন?
আইন পেশা, আইন জানা এবং শিক্ষার ওপর আমার প্রবল আগ্রহ ছিল। কারণ, যাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছি আমার জ্যেষ্ঠদের মধ্যে অধিকাংশই আইন পেশার সঙ্গে জড়িত।
তাদের মধ্যে কারো নাম কি মনে পড়ছে?
শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সাবেক প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলীকে। তিনি একজন কিংবদন্তী আইনজীবী ছিলেন। তিনি পাবনা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচরও ছিলেন বটে। এম মনসুর আলী সাহেব তখন পাবনাতেই প্র্যাকটিস করতেন। অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন সাহেব। যিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তিনিও আইন পেশায় জড়িত ছিলেন।
বলতে গেলে তাদের দেখেই আপনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
বিশেষ করে যারাই আইন পেশার সঙ্গে ছিলেন তারাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যে কারণে আইনের প্রতি আমার ঝোঁক বেশি ছিল। সে জন্যই আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছি।
সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হলে কী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে ঘৃণা করতে হবে। তাদের হেয় করতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার বিকল্প নেই। এই দায়িত্ব সমাজের মানুষেরই।
দুর্নীতি প্রতিরোধে জাতিসংঘের একটি সনদ রয়েছে...
ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশনÑ (আনকাক)। এটা জাতিসংঘের দুর্নীতি বিরোধী সনদ। এই সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। এই সনদের মূল কাজ হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধ।
সনদ অনুযায়ী দুর্নীতি প্রতিরোধে করণীয় কী?
প্রতিরোধ করতে গেলে জনগণকে সচেতন করতে হবে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। আইন ও প্রশাসনের সংস্কার করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য তো আমরা কাজ করছি।
সারা দেশে দুদকের সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয় কীভাবে?
সারা দেশের ৬৪ জেলায় আমাদের দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি আছে। প্রায় ২২ হাজার স্কুলে আছে সততা সংঘ। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় জনগণকে সচেতন করছে। উদ্বুদ্ধ করছে তারা যেন দুর্নীতির ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারে।
দুর্নীতির ভয়াবহতা কী?
দুর্নীতি হলে পরিবারের কী ক্ষতি হয়, সমাজের কী ক্ষতি হয় সর্বোপরি রাষ্ট্রের কী ক্ষতি হয় সেগুলো সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটা যদি আমরা বুঝতে পারি তাহলে একটা সময় বুঝতে পারব দুর্নীতি সমাজের শত্রু। যেটাকে ঘৃণা করতে হবে। উচ্ছেদ করতে হবে।
দুদকে তো অনেক ধরনের অভিযোগ আসে। কোনগুলো আপনারা তদন্ত করেন?
দুদকের তফসিলভুক্ত কিছু অপরাধ আছে আইনে। প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করা, ঘুষ, স্মজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানি লন্ডারিং সবই আমাদের তফসিলভুক্ত অপরাধ। দুদকে যেসব অভিযোগ আসে এর বেশির ভাগই তফসিলভুক্ত নয়।
সেক্ষেত্রে আপনারা কী করেন?
তফসিলের বাইরের অভিযোগগুলো প্রথম ধাপেই বাতিল করে দেওয়া হয়। আর যেগুলো তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে পড়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই কমিটি গুরুত্ব বিবেচনা করে কমিশন তদন্তের অনুমোদন দেয়।
এর পরের ধাপ কী?
অনুমোদনের পর একজন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তিনি প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দেন, কোনটা মামলা হবে, কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয় তা প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকে।
যেসব অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় সেগুলো পরবর্তীতে প্রক্রিয়া কী?
যেই অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় সেটা আমরা এফআইআর করি। পরে আবার সেটা তদন্ত হয়। তদন্তে প্রমাণিত হলে চার্জশিট তৈরি করা হয়। প্রমাণ না হলে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অভিযোগের বাইরে কোন উৎস থেকে দুর্নীতির তথ্য পাওয়া যায়?
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে অনেক দুর্নীতির তথ্য আসে। এছাড়া অনেক মানুষ এসে এখানে অভিযোগ দায়ের করে যান। বিভিন্ন সংস্থা থেকেও আমরা দুর্নীতির তথ্য পাই। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় ৫ শতাংশ অভিযোগও গ্রহণ করার মতো থাকে না। তারপরও জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে অনেক সময় অভিযোগ আমলে নিতে হয়।
দীর্ঘ কর্মজীবনের নানা ক্ষেত্রে আপনি সফল। নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে দেখতে আপনার পরামর্শ কী?
এটা পুরোপুরি নিজের উপলব্ধির বিষয়। প্রথম কথা হচ্ছে দেশপ্রেম থাকতে হবে, লোভ লালসার ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি হতে হবে মানবিক। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে দায়িত্ব পালন করলে নিজের বিবেকের কাছে সন্তুষ্ট থাকবেন যে, আমি কোনো অন্যায় করছি না।
আপনার এতদূর আসার পেছনে পরিবারের কার অনুপ্রেরণা বেশি ছিল?
পারিবারিকভাবে আমরা সুশৃঙ্খল একটি পরিবার। যদিও ব্যবসায়ী পরিবার। সেক্ষেত্রে আমার বাবা-মায়ের আদর্শ যা মানুষের কল্যাণে আসে সেটা করা। এই শিক্ষা আমি তাদের কাছ থেকে পেয়েছি।
এতকিছুর পরও সামাজিক কর্মকা-ে সময় দিয়েছেন...
আমি পাবনা জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ছিলাম ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। এখানে দায়িত্ব পালনের কারণে সরাসরি কোনো সামাজিক কর্মকা-ে সময় দিতে পারি না। তবে আমার জেলা পাবনাতে অনেক সেবামূলক সংস্থার সঙ্গে জড়িত আছি। যারাই এটা করে তারাই আমাকে রাখে।
জীবনের এই পর্যায়ে এসে আপনার উপলব্ধি কী?
আসলে জীবনে যতদূর এসেছি নিঃসন্দেহে এটা অনেক বড় পাওয়া। এই পাওয়াটা আমার জন্য যথেষ্টই মনে করি।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বর্ণাঢ্য জীবন
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলী ট্যাংকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম শরফুদ্দীন আনসারী এবং মা মোসাম্মৎ খায়রুন্নেছা। শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনা শহরের জুবিলী ট্যাংকপাড়ায়। শিক্ষাজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় ভারত থেকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের পাবনা জেলার নেতা হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারীদের অন্যতম তিনি।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একাধারে বিচারক, আইনজীবী, অধ্যাপক ও সাংবাদিক। তিনি পাবনা জেলা জজ আদালত ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যাপক, অধুনালুপ্ত বাংলার বাণী পত্রিকার পাবনা জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮২ সালে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি তৎকালীন বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগদান করেন। কর্মজীবনে তিনি সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও জেলা জজ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রেষণে আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ১৯৯৫-৯৬ সালে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচিত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ‘ঈধংব গধহধমবসবহঃ’ এবং ‘ঈড়ঁৎঃ গধহধমবসবহঃ’ –এ বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন।
বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স¤পৃক্ত রয়েছেন জনাব সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি ১৯৭৩-৭৫ সালে পাবনা জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সম্পাদক, ১৯৭৮-৮২ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা সমিতির কোষাধ্যক্ষ, পাবনা জেলা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য, অন্নদা পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য।
তিনি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলনে অংশ নেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের গঠিত ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তের জন্য গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ১৩৯৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মরত প্রথম সচিবের রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার জন্য সরকারের গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাকালীন ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা’ (ঝঃধঃব ঝবপঁৎরঃু) সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে ওয়াশিংটন (পেন্টাগন), যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড সফর করেন। তিনি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ২০১১ সালের ১৪ মার্চ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন।
দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, সৌদিআরব, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইটালি, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, জার্মান, ভারত, ভুটান, পাকিস্তান, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। গান শোনা, আড্ডা এবং বিদেশ ভ্রমণ তাঁর প্রিয় শখ।
তাঁর স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সার্ভিসে যুগ্মসচিব হিসেবে অবসর নেন। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। তাদের একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।