logo ০৩ এপ্রিল ২০২৫
রাজ্জাককে ফেরাতে রাষ্ট্র নীরব কেন?
২২ জুন, ২০১৫ ১৮:৪৩:০৭
image

বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে অপহরণ করে আটকে রেখেছে মিয়ানমার। পাঁচদিন (সোমবার) হয়ে গেল কিন্তু রাজ্জাককে ফেরত দিচ্ছে না দেশটি। দৃশ্যত আমাদের দেশের সরকারও এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে না। নাকি গোপনে রাখছে সেটাও আমরা জানি না। গোপনে ‍কূটনৈতিক প্রচষ্টা চালালেও কোনো ফল তো আসছে না। আর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে তো তার ঐতিহাসিক ফল সংঘাত। এতে কি আমরা সক্ষম? রাষ্ট্রের নীবরতাই বা কেন? প্রশ্ন রেখে এসব কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক . রুখসানা কিবরিয়া


মিয়ানমার-বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং রাজ্জাক অপহরণ ইস্যু নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মুঠোফোনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী


ঢাকাটাইমসবিজিবি সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের অপহরণকে কিভাবে দেখছেন?


রুখসানা কিবরিয়া: এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এ ঘটনাকে মানা যায় না। মানতে পারি না।


ঢাকাটাইমস: রাজ্জাককে ফেরাতে সরকারের উদ্যোগকে যথেষ্ট মনে করেন কি?


রুখসানা কিবরিয়াসরকারের উদ্যোগই তো চোখে পড়ে না। রাজ্জাক অপহরণ হল আজকে (সোমবার) পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এবিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো বক্তব্য আমরা পাইনি। বরং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন, এটা নাকি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। যেকোনো সময় রাজ্জাক মুক্তি পাবেন। কিন্তু সেরকম কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না। এখন পর্যন্ত মিয়ানমার পতাকা বৈঠকেও বসেনি।


ঢাকাটাইমস: এ ক্ষেত্রে সরকারের কী কী করণীয় আছে বলে আপনি মনে করেন?


রুখসানা কিবরিয়া: সরকারের অনেক কিছুই করণীয় আছে। কূটনৈতিক দক্ষতার বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্জাককে ফেরাতে সরকার দৃশ্যতে কোনো তৎপরতা চালিয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। তবে গোপনে যদি কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েও থাকে সেটার তো কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না।


ঢাকাটাইমসকূটনৈতিক তৎপরতার বাইরে কী করতে পারে বাংলাদেশ?


রুখসানা কিবরিয়া: কূটনৈতিক তৎপরতাই শেষ কথা নয়। যদি একটি রাষ্ট্র অন্য একটি রাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বার্থ আদায়ে ব্যর্থ হয় তাহলে আন্তর্জাতিক আদালত আছে। জাতিসংঘ আছে। এসব সংস্থার কাছে আমরা বিষয়টি নিয়ে যেতে পারি। সেখানে এর প্রতিকার চাইতে পারি।  


ঢাকাটাইমস: রাজ্জাকের অপহরণ বিষয়টি এখন সবারই জানা। কিন্তু আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না কেন?


রুখসানা কিবরিয়াএখানেই শঙ্কার বিষয়। একটি স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একজন সদস্যকে অন্য একটি রাষ্ট্র অপহরণ করল। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। কিন্তু কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা এর প্রতিবাদ করল না। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। মিয়ানমার সরাসরি জড়িত থাকলেও এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো দেশ জড়িত কিনা সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।


ঢাকাটাইমস: এখন আমাদের হাতে বিকল্প ব্যবস্থা কী আছে?


রুখসানা কিবরিয়া: আমাদেরকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় প্রথম এগুতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিষয়টি নিয়ে যেতে হবে।


ঢাকাটাইমস: কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে কি হবে?


রুখসানা কিবরিয়া: কূটনৈতিক প্রচষ্টা ব্যর্থ হলে সেখানে তো সংঘাতই অনিবার্য হয়ে ‍ওঠে। ঐতিহাসিকভাবেই এটা হয়ে আসছে। আমরা ফিলিস্তিন-ইসরাইল ঘটনা জানি। সেখানে কিন্তু প্রথম সৈন্য অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। এরপর শুরু হয়েছে যুদ্ধ। এসব ঘটনা আমাদের সামনে আছে। এসব কিছু মাথায় রেখেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


ঢাকাটইমস: এখান থেকে উত্তরণে আপনার মতামত কী?


রুখসানা কিবরিয়া: মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। একটি বড় দেশ। ভৌগোলিকভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির গুরুত্ব অনেক। কূটনেতিকভাবেই দেশটির সঙ্গে আমাদের দেনদরবার করতে হবে। কেন হঠাৎ করে এ ঘটনা ঘটল সেটার কারণ আগে বের করতে হবে। আমাদের দেশের জনগণকে এ ব্যাপারে তথ্য দিতে হবে। কারণ আমরা তো এখন ‘ইনফরমেশন ব্লকহোলে’ আছি। এভাবে তো হয় না।


ঢাকাটাইমস: হঠাৎ কেন মিয়ানমার এরকম করল? আপনার কাছে কী মনে হয়?


রুখসানা কিবরিয়া: মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের রোহিঙ্গা ইস্যু আছে। দীর্ঘদিন থেকেই এটি নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের দেনদরবার চলছে। এছাড়া সীমান্তে মাদক চোরাচালানের বিষয় আছে। এনিয়ে মাঝে মধ্যেই সংঘাত-সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এসব ‘ভিজিবল’ কারণ বলে মনে হয়। এর বাইরেও অনেক কারণ থাকতে পারে। সেসব বিষয় নিয়ে আমাদের সরকারকে ভাবতে হবে। তাদেরকে সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে।    


ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।


রুখসানা কিবরিয়া: আপনাকেও ধন্যবাদ।