logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
উই আর কলাপসড
০৭ আগস্ট, ২০১৫ ১৮:১৮:৩৯
image

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব সৈয়দ সুজা উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সমাজে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিলে সেই সমাজে ভারসাম্য থাকে না। সেখানে মানুষের মধ্যে পশুত্বের আচরণ চলে আসে। আর সেকারণেই সমাজে ধস নামে। আমাদের সমাজেও ধস নেমেছে।


সম্প্রতি পৈশাচিক নির্যাতনে বেশ কয়েকটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে দেশব্যাপী উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে। এসব বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হয়েছেন সুজা উদ্দিন আহমেদ। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ বাকের।   


ঢাকাটাইমস: সাম্প্রতিক সময়ে পৈশাচিক এবং বর্বরভাবে নির্যাতনের ফলে শিশু মৃত্যুর বেশ কয়টি ঘটনা ঘটছে। এর দ্বারা কি প্রতীয়মান হয়?


সুজা উদ্দিন আহমেদ: সোসাইটির ফেব্রিক নষ্ট হয়ে গেছে। এটা অনেকটা শরীরে ক্যান্সার ঢুকে পড়ার মতো। একবার ঢুকে গেলে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, সেম অ্যাজ ইন আওয়ার সোসাইটি। আমাদের সমাজে ব্রুটালিটি, ইনহিউম্যানিটি অস্বাভাবিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সিম্পলি উই আর কলাপসড। ঐশী নামের মেয়েটার বিরুদ্ধে বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে আছে। সে তো একা না, সে আসলে আমাদের সমাজেরই প্রতিনিধিত্ব করছে।


ঢাকাটাইমস:  এ সমস্যা কি অনেক আগে থেকেই ছিলো?


সুজা উদ্দিন আহমেদ: আমার মনে হয়, গত ১০-১৫ বছর ধরে এটা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে যে বোমা ফাটানো বা হামলার ঘটনা ঘটছে, তার পুরোটা ইমপারসোনাল। কিন্তু আমাদের এখানে যা হচ্ছে তা পুরোটাই পার্সোনাল। ওয়েস্টও অপহরণ হয়, কিন্তু মুক্তিপণ পেলে ছেড়ে দেয়। কিন্তু আমাদের এখানে অপহরণ শুধু মুক্তিপণ আদায়ের জন্য হচ্ছে না।


ঢাকাটাইমস:   এ অবক্ষয়ের কারণটা কি?


সুজা উদ্দিন আহমেদ: নীতির অভাবটাই মূল কারণ। এটা সবক্ষেত্রে। পলিটিক্যালি বলুন, স্টেট বলেন- সবর্ত্রই একই অবস্থা। আমি যতদূর দেখেছি ৮০’র আগে এটা ছিল না। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ওই সময়ে ঢাকায় স্টপেজ ছাড়া গাড়িতে ওঠা যেত না। একই সময়ে ফিলিপাইনে গিয়ে দেখলাম আমাদের এখনকার মতো অবস্থা। তখন আমার মনে হয়েছিল, ঢাকায় এমনটি হলে ধরে দুটো বাড়ি দিত। অথচ এখন? শুরুতে একটা-দুটা দিয়ে হয়েছে, ধীরে ধীরে এটা এখানকার নর্ম হয়ে পড়েছে। এখন আপনি চাইলে রাস্তার মাঝখান থেকে গাড়িতে ওঠতে পারবেন।


ঢাকাটাইমস:  এর মানে সমস্যা সামষ্টিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে-


সুজা উদ্দিন আহমেদ: লোন রিশিডিউলের কথাই প্রথমে বলি। হাউ ক্যান দে রিশিডিউল ফর অ্যানাদার টুয়েনটি ফাইভ ইয়ারস। ২৫ বছর বাঁচবে কিনা কে জানে? অথচ এটা হচ্ছে। আসলে এর জন্য আমরা সবাই দায়ী। এভরি ইনডিভিজুয়াল অ্যাকাউন্টেড ফর দিজ। অথচ দেখেন, যে সব মানুষগুলো এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছে, রিকশা চালাচ্ছে তাদের লোন রিশিডিউল করা হয় না। এ রকম ১০ হাজার জনকে ১৫ হাজার টাকা করে ঋণ দিলে মাত্র ১৫ কোটি টাকা লাগে। এদের ৯৮ শতাংশ ঋণ ফেরত দেয়। আর যারা হাজার হাজার কোটি টাকা নেয়, তারা ঋণ ফেরত দেয় না। উল্টো তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এতে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে। সেও মনে করছে এই পথে গেলে বোধ হয় ভালো হয়।


ঢাকাটাইমস: শুদ্ধতার জন্য কি করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন-


সুজা উদ্দিন আহমেদ: ক্যান্সার শরীরের কোথাও ঢুকে গেলে থেরাপি দিতে হয়, রেডিয়েশন নিতে হয়। আমাদেরও তাই করতে হবে।  কিন্তু এর রিক্যাশন আছে, যথেষ্ট কষ্টদায়ক। ভালো ভালো বিষয়গুলো হারিয়ে যেতে পারে, যেমন মানুষের চুল পড়ে যায়। কিন্তু এটাই একমাত্র উপায়।


ঢাকাটাইমস: এছাড়া অন্য কোনো উপায়-


সুজা উদ্দিন আহমেদ:  সবচেয়ে ভালো ছিল শুরুতে বন্ধ করা। যেমন ধরুন, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে দেয়া হল, এরা তো সবাই এনজিও থেকে লোন নিয়ে এই কাজ শুরু করেছে। হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে তারা কি করবে? কেন এটা প্রথমদিন করা হলো না বা যথেষ্ট যাচাই-বাছাই ছাড়া কোন অনুমতি বা ঘোষণা দেয়া যাবে না। এখন যে স্টেজে আমরা পৌঁছেছি, তাতে যথেষ্ট নীতি ব্রেক হয়েছে। কিন্তু তার কোনো প্রতিকার নেই। এসব বিষয়ে পেপারে দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছে। এখন কঠোর হাতে দমন করা ছাড়া আর কোনো উপায় আছে বলে আমার মনে হয় না।


ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ


সুজা উদ্দিন আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।